মোবাইল ফোন বর্তমানে আমাদের কাছে প্রযুক্তির একটি আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে ধরা দিয়েছে। বলতে গেলে কি নেই এই সামান্য ডিভাইসটিতে? মোবাইল ফোনের বর্তমান আপডেট মেশিন গুলো এতো শক্তিধর, যার মাধ্যেমে অনেক ছোট খাটো কাজ গুলোকে সেরে ফেলা যায় অনায়াসেই।
আর এই মোবাইল ফোন চালাতে প্রয়োজন হয় একটি অপারেটিং সিস্টেম এবং বেশ প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপস। কেননা অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কখনোই কল্পনাই করা যায়না। আমরা যদি একটু ভালো করে টেকনিক্যালি বুঝায় তাহলে বলতে গেলে অ্যাপস হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ।
আপনি একটি অপারেটিং সিস্টেমকে কাজে লাগাতে চাইলে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস ব্যবহার করতে হয়। যেমন ধরুন আপনি যদি নেট ব্রাউজিং করতে চান তাহলে আপনাকে সেটির জন্য একটি ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার,
ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর এবং এমন আরও শত শত কাজ রয়েছে যেগুলোর জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানোর জন্যে।
আবার আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় একটি অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে তো কোন কথাই নেই, শুধুমাত্র আপনাকে প্লে স্টোরে গিয়ে যে কাজটি করতে চান তার জন্যে সার্চ দিয়ে সেই নিদির্ষ্ট অ্যাপস খুজে নিতে হবে।
আবার একটু খেয়াল করে দেখবেন যে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস পেয়ে যাবেন সেই সার্চ এর তালিকায়।
আজকের এই পোস্টটি হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সম্পর্কে আপনাদের সাথে এমন কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় হতে পারে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই অ্যাপ্স গুলোকে।
জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যাপস এর তালিকাসমূহঃ
১। মোয়েস (Moises):
Moises হচ্ছে একটি বেশ কাজের অ্যাপ যার মাধ্যেমে আপনি যদি গান প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন আর অনেক বেশি মিউজিক শোনেন, তাহলে আপনার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় অ্যাপ হতে পারে এটি। আপনার যদি মনে করে থাকেন যে আপনি যেকোনো গান থেকে শুধুমাত্র তার ভোকাল আলাদা করবেন এবং এটা করার জন্য গুগলে সার্চ করে এই রিলেটেট টুলস খুজে থাকেন,
তাহলে এটি আপনার জানার কথা যে, গানের থেকে ভোকাল আলাদা করার জন্য পারফেক্ট টুল খুঁজে পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য একটি বেপার। এই অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি খুব সহজেই যেকোনো গান থেকে তার ভোকাল আলাদা করে সেটিকে চাইলে আরেকটি নতুন মিউজিক ফাইল হিসেবে সেভ করে নিতে পারবেন অনায়াসেই।
এখানে আরো একটি মজার বিষয় হচ্ছে যে আপনি চাইলে ভোকালের পাশাপাশি গানের মিউজিকও আলাদা করতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে গানের ড্রাম বিটগুলোও আলাদা করতে পারবেন খুব সহজেই।
আর এই সমস্ত কাজ করার জন্য আপনাকে Audacity বা FL Studio এর মতো এত কম্পলেক্স কাজও শেখার প্রয়োজন পড়বেনা। এই অ্যাপসটিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হয়েছে যা কিনা ভোকাল আলাদা করার কাজটি করে থাকে।
তাই ইউজারকে খুব বেশি কষ্ট করে তেমন কিছুই নিজে থেকে করতে হয়না। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে ভোকাল বা মিউজিক আলাদা করার জন্য আপনাকে মিউজিক এডিটিং নিয়ে কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তেমন কোন ঝামেলা নেই।
আপনি জাস্ট এক ক্লিকেই সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারবেন খুব সহজেই। আর অ্যাপটার ইউজার ইন্টারফেসও খুবই সুন্দর এবং ইজি-টু-ইউজ হবে এই অ্যাপস ব্যবহারকারীগণদের কাছে।
আপনি চাইলে এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই এই লিংক থেকে মোয়েস (Moises)
২। ফ্রেন্ডপায়ার (FriendsPire) ঃ
আপনি কি অনেক বেশি বেশি মুভি এবং টিভি কন্টেন্ট দেখতে ভালোবাসেন? তাহলে এই অ্যাপসটি আপনার জন্যেই, কেননা আপনি হয়তো অনেক সময়ই এমন সিচুয়েশন ফেস করেছেন যে, নতুন কোন মুভিটি দেখা যায়?
এই বেপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মুভি লিস্ট ব্রাউজ করতেই এত সময় লেগে যায় যে অবশেষে আর আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত মুভিটিই দেখা হয়ে ওঠে না। তাই এই ধরনের সিচুয়েশনে যেনো না পড়তে হয় সেটির জন্যই এই অ্যাপটি।
আপনি যেমনটা ধারনা করেছেন যে, তাহলে এটি কি একটি মুভি রিকমেন্ডেশন অ্যাপ? তাহলে আপনাকেই বলছি হ্যা ঠিক তাই আপনি ঠিক ধরেছেন। আপনি যখন এই অ্যাপটি প্রথমবার লঞ্চ করবেন তারপরে আপনাকে আপনার পছন্দের কয়েকটি ক্যাটাগরি বেছে নিতে বলা হবে সেখানে।
আপনার পছন্দমতো ক্যাটেগরি বেছে নেওয়ার পরে, অ্যাপটি আপনার জন্য একটি কিউরেটেড লিস্ট তৈরি করবে। যেখানে আপনি আপনার পছন্দের সমস্ত ক্যাটাগরির ওপরে বেজ করে অনেক মুভি রিকমেন্ডেশন পেতে পেতে পারেন।
আরেকটি কথা বলে রাখা ভাল সেটি হচ্ছে যে শুধুমাত্র মুভি নয়, আপনার পছন্দের ওপরে বেজ করে এটি আপনাকে একইসাথে টিভি সিরিজ, ওয়েব সিরিজ, বই এবং পডক্যাস্টও রিকমেন্ড করবে। কি ভাবছেন?
এটিই তাহলে এতোদিনে খুজে বেড়িয়েছেন মনে করছেন? তাহলে দেরি না করে আপনি নিচের দেওয়া লিংক থেকে এখনি ডাউনলোড করে ফেলুন।
এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই এই লিংক থেকে ফ্রেন্ডপায়ার (FriendsPire)
৩। অ্যাক্সেসডটস (AccessDots) ঃ
আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নিন আইওএস ১৩ এ একটি জনপ্রিয় প্রাইভেসি ফিচার আছে, যার সাহায্যে কোন অ্যাপ কখনই আপনাকে না জানিয়ে আপনার ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বা জিপিএস ব্যবহার করছে কিনা তা জানা যাবে অনায়াসেই।
এটি মুলত আপনার ফোনের ওপরের দিকে নোটিফিকেশন বারে বিভিন্ন রঙের ছোট ছোট ডট সাইন দিয়ে বুঝিয়ে দিবে।
আইওএস ১৩ এর প্রাইভেসিটি খুব ছোট হলেও বেশ উপকারী একটি ফিচার আমার কাছে মনে হচ্ছে। আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও এই একই ফিচার পেতে চান, তাহলে আপনি এই অ্যাপটি ব্যবহার করে সেটি পেতে পারেন খুব সহজেই।
এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই এই লিংক থেকে অ্যাক্সেসডটস (AccessDots)
৪। স্ট্যাক (Stack) ঃ
স্ট্যাক (Stack) হচ্ছে গুগলের তৈরি একটি ফ্রি ডকুমেন্ট স্ক্যানার টুল। ধরুন আপনি যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা কোন ভিজিটিং কার্ড অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন রিসিট পাবেন, তখনই সেটা ফোনে স্ক্যান করে সেটার একটি ডিজিটাল কপি তৈরি করে ফেলা একটি ভালো আইডিয়া।
এতে করে আপনার পরবর্তীতে সেটির ফিজিক্যাল কপি হারিয়ে গেলেও, আপনার কাছে ডিজিটাল কপিটি থাকার কারণে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
আপনারা হয়তোবা জানেন যে বহুল জনপ্রিয় Camscanner অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই যেকোনো ডকুমেন্টের ডিজিটাল কপি তৈরি করা সম্ভব। তবে অনেক বেশি বিরক্তিকর অ্যাডস থাকায় এবং Camscanner অ্যাপটির বিরুদ্ধে চাইনিজ সার্ভারে ইউজার ডাটা সেন্ড করার অভিযোগ থাকায় এখন এই অ্যাপটি থেকে তাদের ব্যবহারকারী গণদের দূরে থাকাই ভালো।
আর তাই এখন আপনি চাইলে Camscanner এর পরিবর্তে স্বয়ং গুগলের তৈরি সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি এই Stack অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন নির্ভয়ে। আপনাকে যদি আরো একটি তথ্য দেয় তাহলে বলতে গেলে এই অ্যাপটি খুবই লাইটওয়েট এবং এটির ইউজার ইন্টারফেসও Camscanner এর তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর এবং মিনিমাল।
এছাড়া এই অ্যাপটির জেনারেট করা স্ক্যানগুলোর কোয়ালিটিও Camscanner এর তুলনায় অনেক বেশি ভালো তুলনা মুলকভাবে। এটিতে আরো একটি সুবিধা হচ্ছে যে আপনার তৈরি করা স্ক্যানড ডকুমেন্টগুলো সরাসরি আপনার গুগল ড্রাইভ স্টোরেজে সেভ করে রাখে,
তাই কোন ডকুমেন্ট হারিয়ে ফেলার তেমন কোন ভয় থাকেনা এই স্ট্যাকে। তাই আপনি যদি সবথেকে রিয়লায়েবল ডকুমেন্ট স্ক্যানার অ্যাপ এর সন্ধান করে থাকেন তাহলে Stack অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই এই লিংক থেকে স্ট্যাক (Stack)
৫। এডওয়ে (Adaway) ঃ
এই অ্যাপসটি বেশ জনপ্রিয়, এটি মুলত একটি অ্যাডব্লকার অ্যাপ। আপনারা যারা এই অ্যাপটি চেনেন বা এটির নাম শুনেছেন, তারা হয়তো জানেন যে এটি ব্যবহার করার জন্য আপনার ফোনের রুট অ্যাক্সেসের দরকার পড়ে।
তবে হ্যা এটি হচ্ছে অনেক আগের কথা। আবার অনেকেই যা জানেন না তা হচ্ছে, এখন আপনি যদি এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে চান তাহলে এটি ব্যবহার করার জন্য রুট অ্যাক্সেসের দরকার হয়না।
এই অ্যাপটি এখন কাস্টম ভিপিএনের মাধ্যমে অ্যাড ব্লক করে থাকে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে সুবিধার ভোগ করার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র এটি ইন্সটল করে এটির সাথে আসা ভিপিএন প্রোফাইলটি আপনার স্মার্টফোনে সেভ করে নিতে হবে।
এরপরে আপনি চাইলেই জাস্ট এক ক্লিকেই অ্যাড ব্লকার এনাবল করে নিতে পারবেন আপনার ফোনে। এই অ্যাপটি আপনার ওয়েব ব্রাউজারগুলো থেকে শুরু করে আপনার ফোনে ইন্সটল করা সিস্টেম অ্যাপস, এবং আপনার ইন্সটল কৃত অ্যাপস সমূহের মধ্যে থেকে সবধরনের অ্যাড ব্লক করে রাখবে।
আবার আপনার ইন্টারনেট কানেকশন যদি অনেক ধীর গতির হয়, সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে অ্যাড ব্লকার এনাবল করে আপনার ভিজিট করা ওয়েবপেজগুলোর লোডিং স্পিড কিছুটা বাড়িয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
এটি মুলত একটি অ্যাড ব্লকার অ্যাপ যা সমস্ত ধরনের বিক্ষাপন বন্ধ করে রাখে, তাই আপনি অবশ্যই এটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না। আপনি যদি Adaway ব্যবহার করতে চান তাহলে নিচের দেওয়া লিংক থেকে আপনাকে অবশ্যই এটির গিটহাব (Github) রিপোজিটরি থেকে এটির Apk ফাইলটি ডাউনলোড করে ম্যানুয়ালি ইন্সটল করে নিতে হবে এই ফিচারটি এনাবল করার জন্য।
এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই এই লিংক থেকে এডওয়ে (Adaway)
আশা করি এই পোস্টটি আপনার অন্তত কিছুটা হলেও কাজে লাগবে নিজের পছন্দের স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আপনি চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বা টুইটারের অফিসিয়াল পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকতে পারেন। এতে করে সকল প্রকার নতুন নতুন তথ্য পৌছে যাবে আপনার কাছে। আর আপনার যেকোন মতামত জানাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যেকোন সময়ে।
0 মন্তব্যসমূহ