দিনে দিনে প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েই চলেছে শুধুমাত্র এর সুফলের কারনে। কেননা প্রযুক্তির মাধ্যেম বর্তমানে সারাবিশ্বের সমস্ত বড় বড় কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শুক্ষ্য থেকে শুক্ষ্যতর কাজ কর্ম গুলোর সমাধান করা হচ্ছে এই প্রযুক্তির মাধ্যেমে। আর প্রযুক্তির অন্যতম একটি উপহার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যেমে বর্তমানে সমস্ত কাজ এর সমাধান করা হচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটেই।
আর এই কম্পিউটারকে পরিচালনার জন্যে প্রয়োজন পড়ে একটি অপারেটিং সিস্টেমের। উইন্ডোজ হচ্ছে সেই অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি মাধ্যেম। আর এই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের মাঝে এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম অনেক পুরাতন একটি বিষয় নতুন করে একে নিয়ে বলার তেমন কিছু নেইও বটে।
আপনি যদি কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন আর আপনার কম্পিউটার যদি উইন্ডোজ ১০ অথবা উইন্ডোজের অন্য যেকোনো ভার্সন যেমন উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১, ৮.২ দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে এর ভেতরে মাইক্রোসফটের নিজস্ব ফ্রি এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম দেওয়ায় রয়েছে। যার নামকরন করা হয়েছে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার।
আর আপনি যদি আপনার কম্পিউটারের এই উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করে রাখেন তাহলে বেশিরভাগ ভাইরাস বা ক্ষতিকর সফটওয়্যারের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন আপনার কম্পিউটারকে।
এছাড়াও আপনি চাইলে তার সাথে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য অন্য একটি থার্ড পার্টি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারকেও ব্যবহার করতে পারেন আপনার ডিভাইসের সুরক্ষা কবজ হিসাবে। তবে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এন্টিভাইরাসে কী এবং এর সাথে কী কী ফিচার থাকা জরুরি বা অত্যান্ত প্রয়োজনীয়।
এন্টিভাইরাস এর গুরুত্বপূর্ণ ফিচারসমূহঃ
আপনি যখন আপনার কম্পিউটারের জন্যে একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তখন আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে আপনার ব্যবহৃত সেই উইন্ডোজ এর জন্য সেরা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার যাতে পিসিকে সুরক্ষিত রাখে, পরিমিত সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে।
এই সফটওয়্যারটি অনায়সেই ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজন ব্যতীত যাতে বিরক্তির কারন না হয়ে দাঁড়ায়। এই পোস্টটির মাধ্যেমে আমরা আজকে উইন্ডোজের জন্য সেরা কিছু এন্টিভাইরাসের সাথে পরিচিত হয়ে নিবো। প্রথমেই আমরা একটি আদর্শ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তা সম্পর্কে আলোচনা করে নিবো।
কার্যকরিতাঃ
সিস্টেম রিসোর্স এর পরিমিত ব্যবহারঃ আপনি অবশ্যই আপনার কম্পিউটারের জন্যে কখনোই এমন কোন অ্যান্টিভাইরাস বা সফটওয়্যার চাইবেন না যা কিনা আপনার পিসির রিসোর্স এ ঘাটতি তৈরি করবে।
ধরুন আপনি একটি অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করার পর আপনার সেই কম্পিউটার দিয়ে যদি ওয়েবসাইট ওপেন হতে অনেক বেশি সময় নেয়, ফাইল কপি করতে অপ্রত্যাশিত সময় নেয়, তবে আপনার উচিত হবে যে এই সফটওয়্যারটির বিকল্প কোন সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম খোঁজে বের করা।
গোপনীয়তাঃ
আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটারের সকল চলমান প্রসেস পর্যবেক্ষণ করাই একটি কার্যকর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর মুল বা প্রধান কাজ। তবে এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয়ে নজর দেওয়া অত্যান্ত জরুরি যে সেই কম্পিউটারে চলমান এই সুরক্ষা ব্যবস্থার আড়ালে সফটওয়্যারটি ব্যবহার্য ডাটা অন্য কোম্পানির কাছে হাতবদল করছে কিনা সেটাও নিশ্চিতকরণ জরুরি।
তাই এটির জন্যে আপনি সফটওয়্যারটি কেনার আগে সেই এন্টিভাইরাসের রিভিউ পড়ে দেখবেন যে এর ব্যবহারকারীগণ কি ধরনের মন্তব্য করেছেন।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ের সেরা কয়েকটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সম্পর্কে, এসমস্ত সফটওয়্যার এর ভেতরে থেকে আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
১। অ্যাভাস্ট এন্টিভাইরাসঃ
আপনারা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তারা সবাই কমবেশি এন্টিভাইরাস সম্পর্কে জানেন। আর অনেকে এটিও জানেন যে এন্টিভাইরাস জগতে অ্যাভাস্ট অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। অনেক টেস্টিং ল্যাব এর পরীক্ষাতে এই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি বেশ কার্যকর ভূমিকার পরিচয় দিয়েছে।
অ্যাভাস্ট এন্টিভাইরাস এর অন্যতম প্রধান ফিচার হচ্ছে সাইবারক্যাপচার, যা আপনার পিসিতে নতুন ফাইল রান করার আগেই সেটিকে স্ক্যান করে নেয়।
অ্যাভাস্ট ফ্রি এন্টিভাইরাস এর সাথে আরো থাকছে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইন্সপেকটর, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারসহ আরো বেশ কিছু মজার মজার ফিচার। এছাড়াও অ্যাভাস্ট এন্টিভাইরাস সমস্ত ব্রাউজারেই url প্রটেকশন সুবিধা প্রদান করে থাকে।
২। বিট ডিফেন্ডার এন্টিভাইরাসঃ
আপনি যদি ফ্রি এন্টিভাইরাস খুজে থাকেন তাহলে ফ্রি হিসেবে বিট ডিফেন্ডার ব্যাপক জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যারের নাম। বিট ডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস এর ফ্রি সংস্করণে কমার্শিয়াল বিটডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস এর একই কোর অ্যান্টিভাইরাস প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে।
সুতরাং বলতে গেলে বিনামূল্যেই আপনি পেয়ে যাবেন সর্বোচ্চ লেভেলের সুরক্ষার সিস্টেমটি এই সফটওয়্যারের দ্বারা।
বিভিন্ন ধরনের ফিশিং সাইট এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন লিংক এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিট ডিফেন্ডার বেশ কাজের একটি সফটওয়্যার। সকল প্রকার ব্যবহারকারীদের জন্য বিট ডিফেন্ডার কনফিগার করা অত্যান্ত সহজ।
৩। ক্যাস্পারস্কি এন্টিভাইরাসঃ
একটু ভালো করে খোজ নিলেই দেখা যায় যে অনেক ওয়েবসাইটেই ক্যাস্পারস্কি ফ্রি এন্টিভাইরাসকে সেরা ফ্রি এন্টিভাইরাস হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। তবে এর ভালো মন্দ দিকে বিচার করে একে তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে। ক্যাস্পারস্কি এই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে ফুল-স্কেল ম্যালওয়্যার সুরক্ষা প্রদান করে।
এই সফটওয়্যারের আরও একটি মজার ফিচার রয়েছে যা কিনা রিয়েল-টাইম স্ক্যানিং, এন্টি-ফিশিং, ইমেইল স্ক্যানিং, স্পাইওয়্যার প্রটেকশন সহ নানান সুবিধা দিয়ে থাকে। এটি যদি আপনি ব্যবহার করেন তাহলে হয়তো এটিকে আপনার কাছে খুব ব্যাসিক লেভেলের এন্টিভাইরাস মনে হবে, তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এটি বেশ কার্যকরী এবং এটিই যথেষ্ট।
এই ক্যাস্পারস্কি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটির ইউজার ইন্টারফেস অত্যন্ত সহজ এবং এর ভাইরাসকে প্রটেক্ট করার ক্ষমতাও বেশ অসাধারণ বলায় চলে।
৪। এভিজি এন্টিভাইরাসঃ
এভিজি অ্যান্টিভাইরাস কথা যদি বলি তাহলে এই সফটওয়্যারটি মূলত অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস এর মত একই অ্যান্টিভাইরাস সুরক্ষা ইঞ্জিন দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তবে অ্যাভাস্ট সফটওয়্যারটির সাথে যে অতিরিক্ত বোনাস ফিচার সমূহ রয়েছে, সেগুলো এভিজি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটিতে থাকছেনা।
আপনি এই সফটওয়্যারটির মাধ্যেমে ভাইরাস প্রটেকশন, সিস্টেম অপটিমাইজেশন টুল, ম্যালওয়্যার স্ক্যানার থেকে শুরু করে ব্যাসিক যেই সমস্ত ফিচার রয়েছে সেটির পাশাপাশি মোটামুটি লেভেলের এন্টি-ফিশিং প্রটেকশন পেয়ে যাবেন এই এভিজি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটির মাধ্যেমে।
৫। অ্যাভিরা এন্টিভাইরাসঃ
অ্যাভিরা সফটওয়্যার জগতে বেশ জনপ্রিয় এবং বেশ পরিচিত একটি সফটওয়্যার। এটি আপনার কম্পিউটার থেকে যেকোন ধরনের ম্যালওয়্যার খুঁজে বের করে সেটিকে ব্লক করতে পারে অনায়াসেই। এছাড়াও অন্যান্য অ্যাভিরা প্রোডাক্ট ইন্সটল করার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে এই সফটওয়্যারটিতে।
অ্যাভিরা এন্টিভাইরাসের স্ক্যানিং সম্পর্কে যদি বলি তাহলে অ্যাভিরা এন্টিভাইরাসের এই স্ক্যানিং ইঞ্জিন টা তুলনামূলকভাবে একটু ধীরগতির অন্যান্যদের সাথে তুলনা করতে গেলে।
এই সফটওয়্যারটি আপনার কম্পিউটারের ক্রোম এবং ফায়ারফক্স ব্রাউজারের বাড়তি নিরাপতা প্রদান করে থাকে বেশ শক্তপক্ত ভাবেই। তবে এর একটি খারাপ দিক রয়েছে সেটি হচ্ছে এর অতিমাত্রার পপআপ আপনাকে বেশ বিরক্তর একটি কারন হয়ে উঠতে পারে।
সঠিকভাবে আপনি আপনার কম্পিউটারে যদি এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করেন তাহলে বিভিন্ন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার এর হাত থেকে আপনার ব্যবহার্য কম্পিউটারটিকে নিরাপদে রাখা সম্ভব খুব সহজেই।
আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে কম্পিউটারে যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার পূর্বে অবশ্যই এর উৎস ও নির্মাতা সম্পর্কে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
কোনভাবেই কোন সফটওয়্যারের ক্র্যাক ভার্সন ইন্সটল করা বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা অধিকাংশ ক্র্যাক সফটওয়্যার গুলোর ইন্সটলেশন প্যাকেজে এর ভেতরেই ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার থাকে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যান্ত জরুরি।
0 মন্তব্যসমূহ