ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল ২০২৪

বিয়ে করা হলো একটি সুন্নতি আমল। বিয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তির আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক প্রতিটি অবস্থায় নির্ভর করে। সব কিছুর উপর ভিত্তি করে মহান আল্লাহতালা কোন ব্যক্তির জন্য বিয়ের ফরজ করেছেন, আবার কোন ব্যক্তির জন্য সুন্নত করেছেন। সকল ব্যক্তির জন্য যে বিয়ের হুকুম এক তা নয়। 

ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

যদি আমরা ছেলেদের ক্ষেত্রে বলতে যাই,অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বিয়ের বয়স হলেই অনেক দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। আবার অনেকের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবার পরও বিয়ে হয় না। আসলে মহান আল্লাহ তাআলার আদেশ ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না। যেহেতু বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন।

সে ক্ষেত্রে ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমলও রয়েছে। প্রতিনিয়ত আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমলের মধ্যে অন্যতম। যতটা সম্ভব ইস্তেগফার করা। 

আজ আমরা ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমলসহ যে সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব তা নিম্নরূপঃ

    (১) বিয়ে হওয়ার লক্ষণ

    প্রতিটি মানুষেরই বিয়ে নিয়ে অনেক ধরনের কামনা বাসনা থাকে। কবে তার বিয়ে হবে?বিয়ের আগে ও পরে কি করবে? কি হবে? অনেক চিন্তাভাবনা মানুষ করে থাকে। তবে বিয়ে হওয়ার কিছু লক্ষণ ও পরিলক্ষিত হয়। আজ আমরা জানবো বিয়ে হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে।

    বিয়ে হওয়ার লক্ষণগুলো হলো –

    • বিয়ে হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হল বুক ধড়ফড় করা।
    • মনের মধ্যে প্রতিটি বিষয় নিয়ে একটু আলাদাভাবে চিন্তা শুরু হবে।
    • বিয়ের আগ মুহূর্তে মনে হবে,জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য বিয়ে করা।
    • বিয়ে নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যাবেন।
    • পরিবারের প্রতিটি মানুষের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করবে মনের মধ্যে।
    • বিবাহিত বন্ধুদের দেখলে আপনার মনে হবে,আপনিও যেন তাদের দলের একজন হয়ে যান।
    • অনেক সময় দেখবেন টেলিভিশনের সিরিয়াল গুলোর চরিত্রের মাঝে আপনি নিজেকে খুঁজতে শুরু করবেন। 
    • যাকে আপনি কখনো দেখেননি,তাকে নিয়ে আপনি কল্পনার বিভরে থাকবেন মনের অজান্তেই। 

    (২) ভালো বিয়ে হওয়ার আমল 

    মানুষের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক হলো বিয়ে। এই বিয়ের মধ্যে আবার ভালো খারাপ দিক থেকে থাকে। তেমনি ভাবে কিছু আমল রয়েছে যার মাধ্যমে ভালো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সম্ভব। 

    ভালো বিয়ে হওয়ার আমল  নিম্নরূপ–

    • (১) পাপ কাজ থেকে বিরত থাকাঃ  জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করব গুনাহ হওয়া ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য।কারণ এর প্রতিফলন আমাদের বিবাহ জীবনে পড়তে পারে।তাই ভালো বিয়ের আমলের মধ্যে এ কাজটি অন্তর্ভুক্ত।
    •  (২) সমকক্ষ পরিবারে বিয়ে করাঃ  ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আমাদের উচিত ছেলে ও মেয়ের উভয়ের পরিবার যেন সমকক্ষ হয়। সমকক্ষ বলতে আসলে এখানে বোঝানো হয়েছে,ধার্মিক বা দ্বীনদার পরিবার।  বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে উভয়ের পরিবার উঁচু কিংবা নিচু এ বিবেচনা না করা ।
    • (৩) সামর্থ্য অর্জন করাঃ  ভালোভাবে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ছেলেকে উপযুক্ত সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। হাদিসে উল্লেখিত রয়েছে, যে ছেলের সামর্থ্য নেই বিয়ে করার,তার জন্য বিয়ের কোন আদেশ নেই। তাই ভালো ও উত্তম বিয়ের জন্য সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।
    • (৪)  পবিত্র থাকার উদ্দেশ্যে বিয়ে করাঃ বিয়ের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে থাকে।কারণ,বিয়ে হালাল এবং পবিত্র সম্পর্ক। তাই,ভালো বিয়ে হওয়ার আমলের মধ্যে অবশ্যই ভালো উদ্দেশ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

    সুতরাং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে উক্ত শর্তগুলো যদি কেউ ভালোভাবে মেনে চলে,তাহলে তার ভালো বিয়ে হওয়াটা আশা করা যায়।

    (৩) দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল

    আমাদের পাশাপাশি এমন অনেক মানুষ রয়েছে,যাদের বিয়ে ভেঙে যায় বা বিয়ের কোন প্রস্তাব আসে না।যার ফলে সামাজিকভাবে এবং মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত হতে হয়।

    মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম ছাড়া কোন কিছুই হয় না। কিন্তু একমাত্র দোয়া  বা আমলের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে থাকে।

     আবার অন্যদিকে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে চায় না।প্রতিটি মানুষের আশা যে তার জীবন সঙ্গী সবদিক থেকে তার মনের মতো হোক। 

    চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল সম্পর্কে।দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার যে দোয়া বা আমলটি রয়েছে তা হল– 

    উচ্চারণঃ   রাব্বানা হাব লানা মিন আজওআজীনা ওয়া জুররিয়াতিনা কুর রাতা আইউন ওয়া যা আলনা লিল মুক্তাকিনা ইমামা।

    অর্থঃ হে আমাদের রব,আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন,যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে এবং আমাদেরকে আল্লাহ ভীরুদের আদর্শ করুন। (সূরাঃফুরকান,আয়াতঃ৭৪) 

    (৪) তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উপায়

    বিয়ে হল মহান আল্লাহতালার নির্ধারণ করা একটি বিষয়। কিন্তু নানা বাধা বিপত্তির কারণে,অনেক সময় অনেকেরই বিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।এ বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীরা অনেক মানসিক অশান্তিতে থাকে।তাই আজ আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উপায় সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।

    তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমলের মধ্যে অন্যতম হলো দৈনিক ইস্তেগফার পাঠ করা।প্রতিটি নামাজের পরে আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার পাঠ করতে হবে।

    • সূরা মুজাম্মিল পাঠ করা। এই সুরাটি প্রতি শুক্রবার  ২১ বার করে পাঠ করলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা আশা করা যায়।
    • সূরা ফুরকান পাঠ করা।আল্লাহর নিকট উত্তম জীবনসঙ্গী ও তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উদ্দেশ্যে এই সূরাটি  আমল করতে হয়।
    • সুরা ইয়াসিন পাঠ করা।এটি হলো একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সূরা। এই সূরা পাঠের মাধ্যমে দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব।
    •  সূরা তাওবা পাঠ করা।প্রতিটি নামাজের পরে বিসমিল্লাহ সহিত সুরা তওবা এবং দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
    • সূরা মরিয়ম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে পাঠ করতে হবে। 
    • সূরা আদ দোহা ১১ বার নিয়মিত পাঠ করতে হবে। 
    • দৈনিক ফজরের নামাজের সময়,সূর্যোদয়ের আগে “ইয়া ফাত্তাহ” ৪০ বার পাঠ করতে হবে।

     উপরোক্ত আমলগুলো তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমলের মধ্যে  অন্যতম কার্যকরী আমল। এই আমল গুলো করলে রাব্বুল আলামিন এর আদেশে তাড়াতাড়ি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে।

    (৫) মেয়েদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

    আমাদের একমাত্র অভিভাবক হলো মহান আল্লাহ তায়ালা। আমাদের নিকট এ সকল জিনিসই আসবে যে আল্লাহ আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন। বিয়ের বিষয়টিও ঠিক তেমনি। 

    মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই। যে সকল মেয়েদের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না তাদের জন্য আজ আমরা কিছু আমল নিয়ে  হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে যা আমাদের শরীয়তে উল্লেখ রয়েছে।

     মেয়েদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল নিম্নরূপঃ

    (১)যেকোনো আমলের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরি আমল হলো দোয়া করা।পবিত্র কুরআনের বারবার উল্লেখ করেছেন তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করো,দোয়া করো। তাই আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। দোয়া ব্যতীত ভাগ্য পরিবর্তিত হয় না।

    (২)মূসা আলাইহি ওয়াসালাম সূরা কাসাস এর ২৪ নাম্বার আয়াতটি পাঠ করতেন।যার অর্থ হলো-হে আমার পালনকর্তা,তুমি আমার জন্য যে অনুগ্রহ নাজিল করবে,আমি তার মুখাপেক্ষী।তাই এই আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করতে হবে।

    (৩) “আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াআতুবু ইলাইহি” এ আয়াত পড়তে হবে। অর্থ- আমি আল্লাহর  ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকে ফিরে আসছি।

    এছাড়াও কিছু কিছু সময় দোয়া কবুল হয় এবং বেশি বেশি দোয়া করতে হয়। সে সকল বিষয়টিকে লক্ষ্য করতে হবে।

     সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, উক্ত আমল গুলো হল মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমলের মধ্যে অন্যতম।

    (৬) ৭ দিনে বিয়ে হওয়ার আমল

    বিয়ে কারো জন্য সুন্নত আবার কারো জন্য ফরজ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে সময় পেরিয়ে গেলেও এই বিয়ে আমাদের হাতে ধরা যায় না।তখন আমরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু চিন্তার কোন বিষয় নয়। কারণ ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে প্রতিটি সমস্যার সমাধান স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    যারা ভাবছেন খুব দ্রুত বিয়ে করবেন। তাদের জন্য আজকে আমাদের এই লেখাটি।চলুন তাহলে জেনে নেই এমন কোন আমল আছে যার মাধ্যমে সাত দিনের বিয়ে হয়ে যাবে।

    পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আয়াত পাঠ করেছিলেন্‌,যার ফলে মহান আল্লাহ তায়ালা  তার জন্য জীবন সঙ্গিনীর ব্যবস্থা করেছিলেন এবং তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে  দিয়েছিলেন। আয়াতটি হল– 

    উচ্চারণঃ রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির

     অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার জন্য যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী । (সূরা আল-কাসাস,আয়াত ২৪)

    এছাড়াও মহান রাব্বুল আলামিনের নাম সমূহের জিকির করতে হবে। যতবার সম্ভব রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দ্রুত বিবাহের জন্য এবং উপযুক্ত ও উত্তম স্বামী বা স্ত্রী প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহর কাছে চাইলে এমন কোন কিছু নাই যেটা পাওয়া যায় না। প্রার্থনার মত শক্ত কোন আমল নেই।

     তাই ৭ দিনে বিয়ের উদ্দেশ্যে উপরে উক্ত আমলগুলো পালন করলে আশা করা যায় ফল পাওয়া যাবে।

    শেষ কথাঃ ছেলেদের দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

    আমাদের আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি যে,ছেলে ও মেয়ে উভয়ের দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী আমল রয়েছে যা আমরা আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। 

    দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য উপরে আলোচিত সূরা সমূহের নির্দিষ্ট আয়াত পাঠ করতে হবে,আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে মন থেকে দোয়া চাইতে হবে। আর অবশ্যই ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ের উপযুক্ত হতে হবে।

    আশা করছি আমাদের লেখাটি পড়ে আপনারা এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। লেখাতে কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    1 মন্তব্যসমূহ

    Emoji
    (y)
    :)
    :(
    hihi
    :-)
    :D
    =D
    :-d
    ;(
    ;-(
    @-)
    :P
    :o
    :>)
    (o)
    :p
    (p)
    :-s
    (m)
    8-)
    :-t
    :-b
    b-(
    :-#
    =p~
    x-)
    (k)