আখেরি চাহার সোম্বা কী

আখেরি চাহার সোম্বা হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস। আখেরি চাহার সোম্বা শব্দটি আরবি এবং ফার্সি শব্দের যুগল। এই দিনটি অনেক গুরুত্ব সহকারে মুসলিমরা পালন করে থাকে। তবে অনেকেই জানেনা, আখেরি চাহার সোম্বা কী?

আখেরি চাহার সোম্বা কী

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা হয় হিজরী সনের সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিনটি পালন করা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুস্থতা উপলক্ষে। নিম্নে, আখেরি চাহার সোম্বা কী বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আখেরি চাহার সোম্বা কী?

আখেরি চাহার সোম্বা একটি মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস। আখেরি চাহার সোম্বা আরবিও ফার্সি ভাষার শব্দ।
আখেরি আরবি শব্দ এর অর্থ শেষ এবং চাহার শব্দটি ফার্সি যার অর্থ চতুর্থ আর সোম্বা শব্দটি ফারসি যার অর্থ বুধবার। আখেরি চাহার সোম্বা এর অর্থ শেষ চতুর্থ বুধবার।

আখেরি চাহার সোম্বা কাকে বলে?

আখেরি শব্দের অর্থ শেষ এবং চাহার সোম্বা শব্দের অর্থ চতুর্থ বুধবার। মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকালের কিছুদিন আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু ইন্তেকালের কয়েকদিন আগে একটু সুস্থ হয়েছিল। সেই দিনটি ছিল আখেরি চাহার সোম্বা।


যার কারণে মুসলমানেরা এই দিনে শুকরিয়া আদায় করে। এই দিনে মুসলিমরা বেশি বেশি নফল ইবাদত করে থাকে। শেষ সফর মাসের চতুর্থ বুধবার কে আখেরি চাহার সোম্বা বলা হয়।

আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি?

আখেরি চাহার সোম্বা মুসলিম উম্মাহার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। প্রতিবছর মুসলিমেরা এই দিবসটি পালন করে থাকে। যার কারণে এই দিন দিতে সরকারি ছুটি থাকে। প্রতিবছর আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে।

আখেরি চাহার সোম্বা ফজিলত:

আখেরি চাহার সোম্বা সফর মাসের শেষ বুধবার দিনকে বলা হয়। মহানবী সাঃ সবার মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হন। তিনি সফর মাসের শেষের দিকে একটু সুস্থ হন। যার কারণে এই দিনটি মুসলমানের কাছে অত্যন্ত খুশির একটি দিন। এই কারণে সবাই এই দিনটির উদযাপন করে থাকে।

আখেরি চাহার সোম্বা ফজিলত রয়েছে। এই দিনটিতে বেশি করে নফল ইবাদত করতে হয়। এই ইবাদতের মাধ্যমে মহানবী সাঃ ও আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তবে অনেক তথ্য মতে এই দিনটি পালন সম্পর্কে সঠিক কোন দলিল নেই। তবে ইবাদত করলে কোন সমস্যা নেই।

আখেরি চাহার সোম্বা কত তারিখ:

আখেরি চাহার সোম্বা এই শব্দটি আরবি এবং ফার্সি শব্দ। এই দিনটি সফর মাসের শেষ চতুর্থ বুধবার। তবে নির্দিষ্ট করে কোন তারিখ উল্লেখ নেই। এই কারণে সফর মাস যেদিন থেকে শুরু হয় সেদিন থেকে চতুর্থ বুধবার দিনটি পালন করা হয়। প্রতিবছর আলাদা তারিখে এই দিনটি পালন করা হয়।

আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৩ কত তারিখ?

আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি আখেরি চাহার সোম্বা কী? এই দিনটির অনেক তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। তবে নির্দিষ্ট একটি দিনে দিবসটি পালন করা হয়। আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৩ কত তারিখ? আমরা অনেকেই জানিনা। ২০২৩ সালের সফর মাস শুরু হয় ২৮ শে আগস্ট থেকে।

সেই হিসেবে চতুর্থ বুধবার দিনটি ২১ সেপ্টেম্বর। চাঁদ অনুযায়ী বাংলাদেশের ২১ সেপ্টেম্বর দিনটি পালন করা হবে। কিন্তু সরকারি ছুটির দিন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর।

আখেরি চাহার সোম্বা এর গুরুত্ব:

মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাঃ। তিনি মুসলিম জাতির পথ-প্রদর্শক। মহানবী সাল্লাল্লাহু সালামের কাজকর্ম, আসার-আচরণ, চলাফেরা, সকল কিছু আমাদের কাছে উত্তম আদর্শের একটি নিদর্শন। তিনি তার জীবনে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে তবুও তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

মুহাম্মদ (সাঃ) সফর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার কোন সঠিক তারিখ জানা যায় নি। অসুস্থ থাকা অবস্থায় তিনি সফর মাসের চতুর্থ বুধবার সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এই দিনে সাহাবী গনেরা অনেক আনন্দিত হন। এবং তারা এই দিনে প্রচুর নফল ইবাদত করেন এবং দোয়া করেন।

যার কারণে আখেরি চাহার সোম্বা এর গুরুত্ব অনেক। মুহাম্মদ (সাঃ) অনেকদিন পর এই দিনে সুস্থ হয়েছিলেন। তবে মুহাম্মদ (সাঃ) ওই অসুখে ইন্তেকাল করেন। মহানবী সাঃ ১২ রবিউল ইন্তেকাল করেন। 

আখেরি চাহার সোম্বা এর গোসলের দোয়া:

মহানবী (সাঃ) অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি সফর মাসের চতুর্থ বুধবার একটু সুস্থ হন। এবং সেই দিনে তিনি গোসল করেন। অনেক মুসলমান ব্যক্তি এই দিন অনেক গুরুত্বসহ পালন করে থাকেন। অনেকেই এই দিনে গোসল করে থাকে। তবে এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট হাদিস নেই।


যেহেতু কোন ধরনের সঠিক হাদিস পাওয়া যায় না এই বিষয়ের। সেহেতু এই দিনের গোসলের কোন আলাদা দোয়া নেই। অনেক ইসলামিক গবেষকদের মতে এই দিন পালন করার কোন দরকার নেই। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী প্রতিটি দিন আল্লাহর কাছে সমান। তাই বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উত্তম।

আখেরি চাহার সোম্বার দলিল:

আখেরি চাহার সোম্বার দলিল নিয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে। নিম্নে দলিল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
  1. মহানবী (সাঃ) এর উপর ইহুদীরা জাদু করেছিলেন। যার ফলে মহানবী (সাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাদুর প্রভাব কতদিন ছিল এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনায় ছয় মাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে চল্লিশ দিনের কথা। এ থেকে বোঝা যায় হিজরীর সফর মাসের চতুর্থ বুধবার এই তিনটি কোনভাবেই আখেরি চাহার সোম্বা হতে পারে না। (ফাতহুল বারি: ১০/২৩৭)
  2. মহানবী (সাঃ) সুস্থতার জন্য সাত কুয়া পানি আনা হয়। তারপর সুস্থতার জন্য নবীজির দেহ মোবারক ধৌত করা হয়েছিল। এই দিনটি বুধবার না বৃহস্পতিবার মতভেদ রয়েছে। ইবনে কাসির ও ইবনে হাজার একে বৃহস্পতিবার দিনের ঘটনা বলেছেন। (ফাতহুল বারি: ৭/৭৪৮, শিবলী নোমানী: ২/১১৩)
  3. রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বুধবারের পরে আর গোসল করেনি এই তথ্য সঠিক না। কেননা এর পরে এশার নামাজের আগে এক রাতে গোসল করার কথা সহিহ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (বুখারি: ৬৮১,  মুসলিম: ৪১৮)।
ওপরের এসব তথ্য ছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে এই সম্পর্কে। এসব থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়  আখেরি চাহার সোম্বা পালন করার কোন স্পষ্ট হাদিস নেই।

শেষ কথা: আখেরি চাহার সোম্বা কী 

আখেরি চাহার সোম্বা কী? সেই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে এই দিন সরকারি ছুটি থাকে এবং মুসলমানেরাই দিন পালন করে থাকে। তবে পালন করতেই হবে এমন কোন স্পষ্ট হাদিস নিয়ে এই বিষয়ের উপর।

আমাদের সকলের উচিত আখেরি চাহার সোম্বা কী সেই সম্পর্কে জানা। কারণ কোন ধরনের ভুল এবাদত করা ঠিক না। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ