জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ

জন্ডিস শব্দের সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত। জন্ডিস আমরা রোগ মনে করে থাকি তবে জন্ডিস কোন রোগ না। জন্ডিস আসলে অন্য রোগের লক্ষণ মাত্র। রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা যায়। লোহিত রক্তকণিক থেকে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়ে থাকে।

জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ

জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ
 সম্পর্কে ধারণা থাকা সকলের উচিত। তাহলে জন্ডিস হলে সাথে সাথে বুঝতে পারবেন। এবং খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। নিম্নে, জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

    জন্ডিস কি?

    জন্ডিস বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। রক্তের লোহিত কণিকা গুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়। যা একটি সময় লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তথলির সাহায্যে পরিপাকতন্ত্রে ঢোকে। 

    তারপর অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানা রাস্তা দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে এর মধ্যে শরীরে অনেকগুলো জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষ করে প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ শরীর হলুদ হয়ে যায়।

    জন্ডিস কেন হয়?

    বাংলাদেশের জন্ডিসের প্রধান কারণ ভাইরাল হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই এই দুইটি ভাইরাস পানিবাহিত রোগ। এছাড়াও রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় বৃদ্ধি পেলে জন্ডিস হয়। রক্তে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয় লোহিত রক্ত কণিকা থেকে।


    বিলিরুবিনের পিত্তরসের সাথে মিলিত হয়ে হলুদ উপাদন ধারণ করে। যার কারণে সম্পূর্ণ শরীর হলুদ হয়ে যায়। এই সমস্যাটি হয় অন্য কোন রোগ শরীরে আক্রমণ করলে।

    জন্ডিস কি বাহিত রোগ?

    জন্ডিস  কোন রোগ নয়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন কারণে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে কোন ধরনের সংক্রমণ শরীরে বাসা বাঁধলে। অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হলে। এছাড়াও অতিরিক্ত যৌন মিলন করলে জন্ডিস হয়ে থাকে।

    বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়:

    জন্ডিস কেন হয় আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেছে জন্ডিস হয়ে থাকে।বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১.২ মিলিগ্রাম এর নিচে থাকে। যদি এই মাত্রা ৩ মিলিগ্রামের বেশি হয় তাহলে জন্ডিস হয়।

    জন্ডিস কত প্রকার কি কি?

    জন্ডিস মূলত তিন প্রকার। জন্ডিসের প্রকারভেদ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
    1. হেমোলাইটিক জন্ডিস।
    2. হেপাটোসেলুলার জন্ডিস।
    3. অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস।

    জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ:

    জন্ডিস কেন হয় আমরা ইতিপূর্বেই জেনেছি। তবে জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ সকলের জানা প্রয়োজন। কারণ জন্ডিস কোন রোগ না। অন্য রোগের উপসর্গ। জন্ডিস হওয়ার কারণ তুলে ধরা হলো:
    1. ভাইরাস। যথা: হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস ই , হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি।
    2. হিমোলাইটিক অ্যানেমিয়া।
    3. লিভার সিরোসিস।
    4. জেনেটিক রোগ।
    5. কিডনি বা পিত্তথলিতে পাথর।
    6. ক্যান্সার।
    7. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
    8. রক্তের বিলিরুবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।
    জন্ডিস হওয়ার কারণ এইসব। তবে জন্ডিস হওয়ার পর মানুষের দেহে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। নিম্ন জন্ডিসের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো।

    জন্ডিসের লক্ষণ গুলো কি কি?

    জন্ডিসের লক্ষণ গুলো কি কি

    জন্ডিস কোন রোগ না তবে অন্য রোগে আক্রমণ হলে জন্ডিস হয়। নিম্নে, জন্ডিসের লক্ষণ গুলো কি কি? তুলে ধরা হলো:
    1. জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া।
    2. জন্ডিসের আক্রমণ বেশি হলে পুরো শরীর হলুদ হয়ে যায়।
    3. বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।
    4. চুলকানি হয়।
    5. শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
    6. যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া।
    7. তীব্র পেট ব্যাথা হয়।
    8. অনেক সময় পায়খানা সাদা হয়ে যায়। 

    ঘন ঘন জন্ডিস হওয়ার কারণ কি?

    জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে ইতিপূর্বে জেনেছি। শরীরে কোন ধরনের রোগ আক্রমণ হলে জন্ডিস হয়ে থাকে। যাদের শরীরে অতিরিক্ত রোগের আক্রমণ হয় তাদের ঘন ঘন জন্ডিস হয়ে থাকে। এছাড়াও যাদের রক্তের সমস্যা থাকে। যাদের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাদের জন্ডিস হয়ে থাকে।

    জন্ডিস কত দিনে ভালো হয়?

    আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি জন্ডিস কোন রোগ নয়। এ কারণে জন্ডিসের কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। জন্ডিস হলে অতিরিক্ত পানি পান করতে হয়। এতে করে প্রস্রাবের রং সাদা হয়ে যায়।


    সাধারণত জন্ডিস ভালো হতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রায় এক মাসের মত সময় লাগে। তবে যত দ্রুত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কম হবে, তত তাড়াতাড়ি জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে।

    জন্ডিস হলে করনীয়:

    যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয়, সেহেতু এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। জন্ডিস হলে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ জন্ডিস হলে প্রস্রাব এবং গায়ের রং হলুদ হয়ে যায়। পরিশ্রম করার ফলে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও রোদে বাহিরে যাওয়া যাবে না। 

    এই সকল কিছু মেনে সঠিকভাবে চললে জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে। জন্ডিস ভালো হতে সাত থেকে দশ দিনের মতো সময় লাগে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এ সময় আরো বেশি লাগতে পারে। জন্ডিস হলে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

    জন্ডিস হলে কি খেতে হয়:

    জন্ডিস হলে খাবারের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এই কারণে সকল ধরনের খাবার খেতে পারবেন। তবে জন্ডিস হলে যকৃতের সমস্যা হয়ে থাকে। এই কারণে এর কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায়। এই জন্য খাবার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।

    এমন খাবার খেতে হবে, যেন যকৃৎ ও পিত্তথলির উপর কোন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। বিশেষ করে জন্ডিস হলে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।। যেসব খবর খুব সহজেই হজম হয়। সে সব খাবার খেতে হবে। নিম্নে জন্ডিস রোগের খাদ্য তালিকা তুলে ধরা হলো।

    জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা:

    জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা

    জন্ডিস রোগীর খাদ্যের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কিছু খাবার খেলে খুব সহজে জন্ডিস দূর হয়ে যায়। জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
    1. পরিমাণ মতো পানি
    2. সুগার জাতীয় খাবার। বিশেষ করে আখের রস।
    3. তাড়াতাড়ি হজম হয় এমন খাবার।
    4. ফাইবারযুক্ত খাবার।
    5. হার্বাল টি
    6. লেবুর রস
    7. আনারস
    8. পুদিনার পাতা

    জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়:

    জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ উপরে তুলে ধরা হয়েছে। জন্ডিস হলে শরীরের মধ্যে অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় নিম্নে তুলে ধরা হলো:
    1. জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া।
    2. জন্ডিসের আক্রমণ বেশি হলে পুরো শরীর হলুদ হয়ে যায়।
    3. বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।
    4. চুলকানি হয়।
    5. শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
    6. যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া।
    7. তীব্র পেট ব্যাথা হয়।
    8. অনেক সময় পায়খানা সাদা হয়ে যায়। 

    জন্ডিস হলে কি মানুষ মারা যায়:

    অনেকেরই মনে করে জন্ডিস অনেক ভয়াবহ একটি রোগ। এ কারণে জন্ডিস হলে রোগী অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকে। রোগী মনে করে সে মরে যাবে। তবে জন্ডিস কোন রোগ না। 


    সঠিকভাবে চলাফেরা করলে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। জন্ডিস রোগে কোন মানুষ মরে যায় না। তবে অন্য কোন সমস্যা থাকলে রোগী মারা যেতে পারে।

    জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া উচিত নয়?

    জন্ডিস হলে চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া উচিত নয়? নিম্নে তুলে ধরা হলো:
    1. অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার।
    2. কাঁচা লবণ।
    3. অতিরিক্ত তেল।
    4. অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার।
    5. অ্যালকোহল।
    6. স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার।

    লিভার জন্ডিসের লক্ষণ:

    জন্ডিস অনেক ধরনের হয়। এবং অনেক সময় জন্ডিস লিভারে হয়ে থাকে। লিভার জন্ডিসের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো:
    1. পেশী ব্যথা
    2. বমি বমি ভাব
    3. বমি হওয়া
    4. পেটে ব্যথা
    5. ক্ষুধা হ্রাস

    শিশুদের জন্ডিস কেন হয়?

    জন্ডিস রোগ বেশিরভাগ বাচ্চাদের হয়ে থাকে। ৬০ শতাংশ পূর্ণ গর্ভকাল নবজাতকের জন্ডিস হয়। এবং  ৮০ শতাংশ প্রি-টার্ম অর্থাৎ বাচ্চা জন্মের প্রথম সপ্তাহে জন্ডিস দেখা যায়। এই সময় বাচ্চাদের রক্তের  বিলিরুবিন এর মাত্রা বেশি থাকে। সাধারণত এই কারণে শিশুদের জন্ডিস হয়ে থাকে। 

    শিশুদের জন্ডিস কেন হয়

    বাচ্চাদের  ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হয়ে থাকে। এই জন্ডিস বাচ্চা জন্মের ২৪ ঘন্টা পর শুরু হয়। এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশুদের জন্ডিস সেরে যায়।

    জন্ডিসে কোন সিরাপ ব্যবহার করা হয়:

    জন্ডিস কোন রোগ না। জন্ডিস কোন চিকিৎসা ছাড়াই আস্তে আস্তে সেরে যায়। তবে অনেকেই জন্ডিস হলে ওষুধ খেয়ে থাকে। নিম্নে জন্ডিস রোগের ওষুধের নাম তুলে ধরা হলো:
    1. Avolac syrup
    2. Bioliv capsule
    3. Solvit B syrup
    4. Omidon Tablet

    হামদর্দ এর জন্ডিসের ঔষধের নাম:

    হামদার্দ এর জন্ডিসের ওষুধের নাম নিম্ন তুলে ধরা হলো:
    1. ট্যাবলেট হেপালজিন
    2. সিরাপ অমৃতারিস্ট
    3. সিরাপ রোহিতরাষ্টি
    4. আরক মাকো
    5. সিরাপ জাবিন 

    শেষ কথা: জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ

    জন্ডিস আমাদের সকলের কাছে একটি পরিচিত রোগ। জন্ডিস হলে চোখ এবং প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। তবে জন্ডিস হলে কোন চিন্তার বিষয় নেই। জন্ডিস আস্তে আস্তে সেরে যায়। কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়ায়। তবে খাওয়ার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

    জন্ডিস হলে যেসব খাবার সহজে হজম হয় সেসব খাবার খেতে হবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ