সান্ডা খাওয়া কি হালাল? ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মরুভূমির প্রাণী সান্ডা সম্পর্কে বিশ্লেষণ

    সান্ডা খাওয়া কি হালাল? ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মরুভূমির প্রাণী সান্ডা সম্পর্কে বিশ্লেষণ

    ইসলামে কোন প্রাণী খাওয়া হালাল এবং কোনটি হারাম – এ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে কোরআন ও হাদীসে। আমাদের অনেকেই “সান্ডা” নামটি শুনলে এটি আইসক্রিম ডেজার্ট মনে করেন (যেমন Sundae), কিন্তু এখানে “সান্ডা” বলতে বোঝানো হয়েছে মরুভূমিতে বসবাসকারী একটি বিশেষ প্রজাতির সরীসৃপ, যাকে আরবিতে "ধব" (ضَبّ) বলা হয়। 

    সান্ডা খাওয়া কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মরুভূমির প্রাণী সান্ডা সম্পর্কে বিশ্লেষণ

    এই প্রাণীটি সাধারণত সৌদি আরব, মিশর, লিবিয়া এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায় এবং ঐ অঞ্চলের বেদুইনরা এটি আহার্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তবে প্রশ্ন হলো, সান্ডা খাওয়া কি হালাল? আসুন ইসলামিক উৎস থেকে এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

    সান্ডা বা ধব কী?

    সান্ডা হচ্ছে এক ধরনের মরুভূমির গিরগিটি জাতীয় প্রাণী। এটি বেশ বড় আকারের হয়ে থাকে এবং বালি বা শুষ্ক অঞ্চলে বসবাস করে। একে ইংরেজিতে “Desert Monitor Lizard” বা “Uromastyx” বলা হয়। এটি আরব এবং আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

    এই প্রাণীটি:
    • ঘাস ও উদ্ভিদভোজী,
    • বিষহীন ও কম হিংস্র,
    • মরুভূমির পরিবেশে জীবিত থাকতে উপযুক্ত,
    • মাংস কিছুটা রাবারসদৃশ ও শক্ত হয়,
    • যার কারণে অনেকেই খেতে অনিচ্ছুক হলেও, একে নিরাপদ মনে করেন।

    হাদীসে সান্ডা খাওয়ার উল্লেখ

    সাহাবিদের যুগে সান্ডা খাওয়া সম্পর্কে হাদীসে সরাসরি আলোচনা পাওয়া যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন:

    "সান্ডা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ করেননি এবং হারামও বলেননি। তবে তিনি নিজে তা খাননি।" (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৫৩৯)

    অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:

    "সান্ডা খাওয়া হালাল, তবে রাসূল (সা.) ব্যক্তিগতভাবে তা খেতে পছন্দ করতেন না।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৪৪)

    এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় – এটি নিষিদ্ধ (হারাম) নয়, বরং ব্যক্তিগত অপছন্দের বিষয়।


    আরও পড়ুনঃ ইসলামিক উপদেশ মূলক কথা


    ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সান্ডা খাওয়া হালাল কি?

    হ্যাঁ, সান্ডা খাওয়া হালাল, কারণ:

    • রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে এটি হারাম বলেননি।

    • সাহাবিগণ এর মাংস খেয়েছেন এবং রাসূল (সা.) তাদের খেতে বাধা দেননি।

    • ফিকহবিদগণ একে ‘মুবাহ’ তথা বৈধ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

    তবে এটাও সত্য যে, যেহেতু নবীজী (সা.) নিজে সান্ডা খাননি, তাই কারো অপছন্দ থাকলে তা না খাওয়াই উত্তম। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে এটি খাওয়া নিষিদ্ধ নয়।

    বিভিন্ন মাজহাবের মতামত

    🔹 হানাফি মাজহাব: এটি খাওয়া মাকরুহ তানযিহি (অপছন্দনীয়) হলেও হারাম নয়। বিশেষত, যেসব প্রাণী মানুষ স্বভাবগতভাবে ঘৃণা করে, তা খাওয়া অপছন্দনীয় হলেও নিষিদ্ধ নয়।

    🔹 মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব: অধিকাংশ আলেম সান্ডা খাওয়াকে হালাল বলেন। বিশেষ করে মরুভূমির মানুষেরা যেহেতু এটিকে প্রোটিনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করে, তাই ইসলামে কোনো নিষেধ নেই।


    সান্ডার মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য

    সান্ডার মাংস খাওয়ার কিছু প্রাকৃতিক উপকারিতাও পাওয়া যায় বলে অনেক গবেষক মনে করেন:

    • উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ

    • শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত

    • মরুভূমির আদিবাসীদের জন্য বিকল্প খাদ্য

    • কিছু ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়

    বিশেষ করে ওষুধ হিসেবে এটি আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও হাকিমি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়।


    আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

    সান্ডা প্রাণীটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং মরুভূমির অধিবাসীরা এটি নিয়মিত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তবে এটির মাংস একটু শক্ত এবং স্বাদে ভিন্ন হওয়ায় সবার কাছে উপভোগ্য না-ও হতে পারে।

    সান্ডা তেল বা চর্বি অনেক সময়:

    • যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে,

    • স্নায়ুবিক দুর্বলতা,

    • ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

    তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ব্যবহার করা উচিত নয়।

    ইসলামিক নীতিমালায় প্রাণী খাওয়ার অনুমতি নির্ধারণ

    ইসলামে প্রাণী খাওয়ার অনুমতি নির্ভর করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর:

    • প্রাণীটি নিজে থেকে অপবিত্র কি না?

    • তার মাংসে বিষাক্ততা আছে কি না?

    • কুরআন বা সহীহ হাদীসে সরাসরি হারাম বলা হয়েছে কি না?

    সান্ডার ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটি প্রযোজ্য নয়। অতএব, এটি খাওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ।

    উপসংহার

    সান্ডা খাওয়া ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল। যদিও নবীজি (সা.) নিজে এটি খেতে পছন্দ করতেন না, তবুও তিনি কখনো এটি হারাম বলেননি। অতএব, কোনো মুসলমান যদি এটিকে খেতে চান, তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কারো যদি ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ হয়, তবে না খাওয়াও বৈধ। 

    📌 সুতরাং, সান্ডা খাওয়া ইসলামি দৃষ্টিতে বৈধ হলেও পছন্দের ব্যাপারটি ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে।

    আল্লাহ আমাদের সব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও হালাল-হারামের পার্থক্য বুঝে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ