কম্পিউটার হ্যাং বা স্লো কেন হয় এবং এর সমাধান সমূহ

computer slow or hang how to fix it

কম্পিউটার হ্যাং বা স্লো কেন হয়?

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে দিনে দিনে কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেক অসাধ্য কাজকে মুহুর্তের ভেতরেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে। শুরুতে এই কম্পিউটার শুধু গণনার কাজের ক্ষেত্রে তৈরী করা হলেও এটি আর সেই গণনার মাঝে আর সীমাবদ্ধ নেই। 

শিক্ষা, চিকিৎসা, আবিষ্কার থেকে শুরু করে এমন কি নাই যে যার পিছনে এই কম্পিউটারের ভূমিকা নেই? সকল জায়গাতে অনবরত অবদান রেখেই চলেছে এই কম্পিউটার নামের যন্ত্রটি।

বর্তমানে অনেকেই আছেন যারা কিনা প্রযুক্তির এই অবদানকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই ইনকামের রাস্তা তৈরী করে নিয়েছেন। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এসইও, প্রোগ্রামিং এবং সিপিএ মার্কেটিং ইত্যাদি।

এই ধরনের কাজ করে মাসে লক্ষাধিক টাকা ইনকাম করছেন ঘরে বসেই। তবে আজকে আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করবো যে এই সমস্ত কাজ করতে গেলে আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার নিয়ে পড়তে হয়ে বেশ কিছু সমস্যায় সেই সমন্ধে। 

যেমন ধরুন মাউসে ক্লিক করার পরে কাজ না করা, কি-বোর্ডে প্রেস করেছেন অথচ অনেক দেরিতে সেটি টাইপ হচ্ছে এই বেপার গুলো নিয়ে। মূলত আমরা এটিকে কম্পিউটার কেন স্লো হয়ে যায়, সেই সম্পর্কেই। তাহলে চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক কেন আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি সঠিকভাবে রেসপন্স করছেনা বা হ্যাং হয়ে যায়।

দেখুন আমরা অনেকেই আছি যারা একটি কম্পিউটার ক্রয়ের সময় বেশকিছু জিনিস এড়িয়ে চলি শুধু কম্পিউটারে ডিজাইনের দিকে তাকিয়ে। আবার আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা কিনা কম্পিউটার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা না নিয়েই দোকানে গিয়ে একটি কম্পিউটার নিয়ে চলে আসেন। আসল বিপত্তি গুলো কিন্ত এই সমস্ত কারনেই হয়ে থাকে।

আপনি যদি SEO দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে এটি পড়ুন

কেননা ধরুন আপনি ১০ কেজির একটি চালের বস্তা বহন করার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু আপনাকে যদি ২০ কেজি ওজনের বস্তা চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু আপনি সেটিকে বহন করতে পারবেন না। অপরদিকে যদিও আপনি নিয়ে যেতে চান বা চেষ্টা করেন তাহলে ১ ঘন্টার কাজ ২ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। 

এতে করে কি হল, আপনার স্বাভাবিক চলার গতি থেকে অনেক ধীর গতিতে আপনি সেই কাজটি সম্পন্ন করলেন তবুও অনেক কষ্ট করে।

এখন আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখেন তাহলে কিন্তু সেই একই বেপার। আপনি কম্পিউটারের পার্স গুলোর ক্ষমতার চাইতে বেশি কাজ চাপিয়ে দিলে কিন্তু সেই যন্ত্রটি ঠিকঠাক মতো পারফর্মেন্স দিতে ব্যর্থ হবে। 

তাই আপনাকে সঠিকভাবে হাই পারফর্মেন্স পেতে হলে কনফিগারেশন সম্পর্কে ভাল ধারনা নিয়ে তারপরে একটি পিসি বিল্ড করতে হবে। যেসমস্ত কারনে পিসি স্লো হয় চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাকঃ

যে যে কারনে কম্পিউটার স্লো হয়ঃ

প্রসেসর (CPU)ঃ

কম্পিউটারের স্মৃতি বলা হয় এই প্রসেসরকে। প্রসেসর বা cpu  এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Central Processing Unit যাকে সংক্ষেপে আমরা cpu বলে থাকি। আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর যদি দুর্বল হয় তাহলে সেই কম্পিউটা স্লো কাজ করবে। কেননা একটি কম্পিউটারে যাবতীয় সমস্ত কিছু প্রসেস হয়ে থাকে এই সিপিইউ এর মাধ্যেমে। 

তাই আপনি যদি ভাল পারফর্মেন্স চান আপনাকে অবশ্যই উন্নত মানের এবং হাই গিগাহাটর্জ এর একটি প্রসেসর চয়েজ করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত লোড পড়লেই আপনার পিসি হ্যাং হয়ে যাবে সেগুলো প্রসেস করতে গিয়ে, এতে করে কম্পিউটার স্লো কাজ করছে, যা আপনার কাজকে অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।

র‍্যাম (RAM)ঃ 

কম্পিউটারের অনেক গুরুত্ব পূর্ণ আরেকটি পার্ট হচ্ছে এই ram, কেননা আপনি যখন কোন কাজ করেন তখন সেই শক্তি সঞ্চালন করে থাকে এই ramRAM এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Random Access Memory যাকে সংক্ষেপে ram বলা হয়। 

ধরুন আপনার কম্পিউটারে লাগানো রয়েছে 2GB RAM. কিন্ত আপনি সেখানে ফোটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ভিডিও এডিটর, গেম থেকে শুরু করে অনেক হাই লেভেলের সফটওয়্যার সমূহ।

তাহলে হবে কি আপনার পিসির কাজ করার যতটুকু শক্তি রয়েছে তার ডাবল কাজ আপনি তার উপর চাপিয়ে দিলেন তখন আপনার পিসি আর কোনটাই সঠিক ভাবে প্রসেস করতে না পেরে হ্যাং হয়ে যাবে। তাই ভাল মানের ram এবং কতো জিবি সেটির দিকেও নজর দিতে হবে দ্রুত কাজ করার ক্ষেত্রে।

মাদারবোর্ড (Motherboard)ঃ

একটি কম্পিউটারের অনেক মূল্যবান পার্ট হচ্ছে Motherboard, কেননা মাদারবোর্ডকেই কম্পিউটারের মা হিসাবে ধরা হয়। আপনি যদি খরচ কমানোর জন্যে একটি নিম্ন মানের মাদারবোর্ড নিয়ে থাকেন তাহলে সেই পিসি থেকে কখনই ভাল পারফর্মেন্স আশা করা যায় না।

কারন সমস্ত পাওয়ার এখান থেকেই সাপ্লাই করবে অন্যান্য যন্ত্রের ভেতরে। তাই গোড়া শক্ত না করে গাছে আগায় পানি দিলে কাজ হবেনা এটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

কুলিং ফ্যান (Cooling Fan)ঃ

কম্পিউটারে আরেকটি অত্যান্ত প্রয়োজনীয় পার্টস হচ্ছে এই কুলিং ফ্যান যা আপনার কম্পিউটারের প্রসেসরকে ঠান্ডা রাখে। আপনি যদি দীর্ঘ সময় কাজ করেন বা অনেক লোড দিয়ে কাজ করেন তখন আপনার পিসির অনেক গুলো কাজকে একসাথে প্রসেস করতে গিয়ে প্রসেসরের উপর অধিক লোডের কারনে তুলনামূলক হারে হিট বেড়ে যায় প্রসেসরের। 

তখন প্রসেসরকে ঠান্ডা করতে এই ফ্যান অধিক ভুমিকা রাখে। তাই একটি ভাল মানের ফ্যান লাগানো প্রয়োজন এবং রেগুলার চেক করা দরকার যে ঠিকঠাক মতো করে ফ্যান ঘুরছে কিনা যাতে করে কোন হিটিং ইস্যু না তৈরী হয়। এছাড়া আপনার পিসি তুলনা মুলক হারে অনেক ধীরে কাজ করবে।

হার্ডডিস্ক (Hard Disk)ঃ

আপনার কম্পিউটারকে চালনা করার জন্যে যেই প্রোগ্রামের প্রয়োজন পড়ে সেটিকে এই হার্ডডিস্কের ভেতরেই স্টোরেজ করা হয়। তাই আপনি ভাল করে খেয়াল করে দেখবেন যে এর সাথে ঠিকঠাক মতো কানেকশন আছে কিনা বা কোথাও লুজ কানেকশন রয়েছে কিনা। লুজ কানেকশন হলে পিসি কাজ করবেনা। 

আবার ভাল মানের হার্ডডিস্ক না হলে সঠিক rmp না থাকার কারনে পিসি স্লো কাজ করবে। আপনি বর্তমানে ssd দিকে নজর দিতে পারেন যা কিনা হার্ডডিস্কের তুলনায় অধিক দ্রুত কার করে এবং দীর্ঘস্থায়ী একটি মেমরী বা স্টোরেজ।

পিসির অপারেটিং সিস্টেম (Operating System)ঃ

আপনার কম্পিউটারকে পরিচালনার করার জন্যে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন পড়বে। আপনি কম্পিউটারে যেই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন না কেনো, সেটি যেকোনো উইন্ডোজ হতে পারে বা লিনাক্স ও হতে পারে। 

এই উইন্ডোজের বা অপারেটিং সিস্টেমের যে সফটওয়্যারগুলো রয়েছে বা অ্যাপ আছে এগুলোর মধ্যে কোনো একটা যদি ডিলিট হয়ে যায় অথবা ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। 

কেননা প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো যখন অপারেটিং সিস্টেম খুঁজে পাবেনা তখন সেটি বার বার চেষ্টা করবে অপারেটিং সিস্টেম পাওয়ার জন্যে। যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে।

তাই আপনাকে এই বিষয়ে ভাল মানের জ্ঞান বা ধারনা রাখা জরুরি। যাতে করে কোন রকম সমস্যায় পড়লে বুঝতে পারেন যে কি কারনে এই সমস্যার সৃষ্টি হলো বা তার জন্যে কি ধরনের সমাধান রয়েছে।

ভাইরাস (Virus)ঃ

আপনি যদি একজন রেগুলার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস সম্পর্কেও জানতে হবে। কেননা সাধারণত আমাদের কম্পিউটার গুলোতে ভাইরাস প্রবেশই করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। 

কম্পিউটারের মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। বিভিন্ন রকম ভাইরাস রয়েছে যে ভাইরাসগুলো খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে। আর এই ভাইরাসগুলো যদি কোনো ভাবে কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে তবে বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেমের উপরে বেশ প্রেশার ফেলে যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে।

গেম (Game)ঃ

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা গেমিং করতে বেশ পছন্দ করি। অনেকেই তো আবার খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলেই যান এই গেম খেলা শুরু করলে। তবে এখানে একটি কথা হচ্ছে অল্প পাওয়ারফুল কম্পিউটারের মধ্যে যদি আমরা বড় বড ধরনের গেমিং করতে চাই তাহলে কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যাবে, আর হ্যাং করাটাই স্বাভাবিক। 

গেমিং করার জন্য আমাদের অবশ্যই একটি গেমিং কম্পিউটার দরকার। অথবা গেমিং করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে।

তাই আপনার পিসির কনফিগারেশন যদি খুব ভাল না হয় তাহলে আপনাকে বলবো গেমিং করা থেকে একটু দুরেই থাকুন। কেননা এতে করে প্রসেসরের উপর অনেক প্রেসার পড়ে, যেগুলো প্রসেস করার ক্ষমতা আপনার পিসির নেই।

ফাইল স্টোরেজ সিস্টেম (File Storage System)ঃ

আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা কিনা যেখানে যেই মুভি, গান, অডিও বা ভিডিও পান সেখান থেকে কালেক্ট করে নিয়ে এসে পিসিতে এলোপাতাড়ি গণহারে রেখে দেন। ধরুন আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক যদি ১০০০ জিবি হয়ে থাকে এখন আপনি ৯৮০ জিবি ফাইল ভর্তি করে রেখে দিয়েছেন এতে আপনার কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক এবং RAM উপর প্রেসার পড়তে থাকে যার ফলে কম্পিউটার হ্যাং করতে পারে।

তাই আপনাকে স্টোরেজ যেনো একদম ফুল হয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে আপনার পিসির কার্যকারী ক্ষমতা ঠিক থাকবে।

কম্পিউটারের যত্ন নেওয়া (Carefully Use)ঃ

আপনি যদি একজন রেগুলার বা ইরেগুলার কম্পিউটার ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন। তাহলে আপনাকে অবশ্যই আরেকটি বিষয়ে মাথায় রাখা অত্যান্ত জরুরি যে, আপনি যেই ডিভাইস ব্যবহার করছেন তার সঠিকভাবে যত্ন নিচ্ছেন কিনা। 

জানেনই তো যত্নে মিলে রত্ন। আপনার ডিভাইসের পার্টস গুলোতে যদি ময়লা জমে যায় তাহলে সেটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন না আর তখন হ্যাং করবে। তাই সঠিকভাবে যত্ন নিন আপনার কম্পিউটারের।

আশা করি আপনি যদি এই পোস্টটি ভাল মতো পড়ে থাকেন তাহলে কেনো আপনার কম্পিউটার হ্যাং করছে বা কি করলে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন সেই সমস্ত বিষয়ে ক্লিয়ার ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। 

আর আপনার ব্যক্তিগত কোন মতামত থাকলে সেটিও আমাদের জানাতে পারেন খুব সহজেই মেসেজ করে। আপনি চাইলে আমাদের সাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক এবং টুইটারে লাইক দিয়ে ফলো করতে পারেন। তাহলে সমস্ত আপডেট পেয়ে যাবেন খুব সহজেই ধন্যবাদ।

একনজরে কী-বোর্ডের ফাংশন কীগুলোর কাজ সমূহ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন আরও পড়ুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ