খাজনা ও খারিজ কি? জমি খারিজ করার পদ্ধতি

খাজনা ও খারিজ কি জমি খারিজ করার পদ্ধতি

প্রতিবছর বাংলাদেশের জমি ক্রয় বিক্রয় হয়। জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। জমির মালিকানা বৈধভাবে পরিবর্তন করতে হলে জমি রেজিস্ট্রি করতে হয়। জমি রেজিস্ট্রি করলে জমির মালিক হওয়া যায়। 

তবে সম্পূর্ণভাবে জমির মালিক হতে হলে অবশ্যই জমি খারিজ করতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন করে, খাজনা ও খারিজ কি? জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে জমি সংক্রান্ত সকল কিছু জেনে থাকা আমাদের প্রয়োজন।

জমি কিনলে সাথে সাথে রেজিস্ট্রি করতে হবে। রেজিস্ট্রি করার পর আমরা অনেকেই দলিল নিয়ে বসে থাকি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ, জমি খারিজ না করলে জমির মালিকানা অনেক সময় হারানো সম্ভাবনা থাকে। 

এ কারণে প্রত্যেক জমি খারিজ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চলন জেনে নেই কিভাবে জমি খাজনা ও খারিজ করতে হয়। এবং কিভাবে জমি খারিজ করা যায় সে সম্পর্কে।

    খাজনা কি?

    আজ না বলতে বোঝানো হয় কোন জমি, বাড়ি দোকানপাট ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট চুক্তি মোতাবেক মালিককে যে টাকা প্রদান করা হয় তাকে বোঝায়। অর্থনীতির ভাষায় খাজনা অর্থ ভিন্ন। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ গণ খাদ্য সম্পর্কে বিভিন্ন রকম ধারণা দিয়েছে। 

    কিন্তু আমরা সাধারণত ভাবে সবাই মনে করি একটি জমির বাৎসরিক যে টাকা সরকারকে প্রদান করা হয় তাকে খাজনা বলা হয়। তবে এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, আমরা যেটা জমির বাৎসরিক টাকা প্রদান করি সেটা হচ্ছে রাজস্ব ট্যাক্স। 

    জমি বা ভূমি ব্যবহার করার জন্য মালিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে খাজনা বলা হয়।

    খারিজ কি?

    আমরা সকলেই জানি জমির কাগজে যে ব্যক্তির নামে থাকে সেই ব্যক্তি জমির মালিক। তবে কিছু কিছু সময় জমির কাগজ থাকা সত্ত্বেও জমির মালিক হওয়া যায় না। এসব হয় কিছু দুষ্টু লোকের কারণে। যখন জমির নতুন করে রেকর্ড হয় সেই সময় যদি জমির পূর্বের মালিক মনে করে তার নামে জমি করে নিতে পারে।

    আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের তালিকা


    এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য জমি খারিজ করতে হয়। জমি খারিজ করা বলতে বোঝানো হয় জমি রেজিস্ট্রি করার পর পুনরায় জমির খতিয়ান পরিবর্তন করতে হয়। তার জন্য ভূমি অফিসে আবেদন করতে হয়। 

    আবেদন করার পর কিছুদিনের মধ্যে পূর্বে যে কোথায় জমে ছিল সেখান থেকে বর্তমান মালিকের নামে নতুন করে খতিয়ান তৈরি করে দেয়। একজন ব্যক্তির যদি একাধিক জমি থাকে একটি খতিয়ান এর মধ্যে সকল জমি রাখা সম্ভব হয়। 

    তাহলে নতুন করে জমি রেকর্ডের সময় নতুন খতিয়ান দেখে জমি রেকর্ড হবে। তাহলে আর জমি হারানোর ভয় থাকে না।

    নাম খারিজ কি?

    নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারী বা নাম খারিজ বলা হয়। অর্থাৎ জমির পূর্বে যে মালিক ছিল তার নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে নতুন করে রেকর্ড করাকে নাম খারিজ বলে। এই কাজটি কমপ্লিট করতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। 

    এ কাজটি নির্ভর করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ওপর। তারা যত দ্রুত কাজ করবে খারিজ তত দ্রুত হবে।

    জমি একত্রীকরণ কি?

    জমি একত্রীকরণ বলতে বোঝানো হয় সকল জমি একই খতিয়ানভুক্ত করা। সাধারণভাবে বলতে গেলে, কোন ব্যক্তির একই মজার ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানে জমি থাকে। সকল জমির একটিমাত্র খৈতানভুক্ত করে রেকর্ড সংশোধন হালকরণ করাকে জমি একত্রীকরণ বলা হয়। 

    জমি একত্রীকরণ আইন ১১৬ ধারা অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিক করা হয়। জমি একত্রীকরণ এর মাধ্যমে জমির খাজনা প্রদান করা খুব সহজ হয়। এবং জমির মালিক কে কম খাস না দিলে হয়।

    জমি খারিজ না করলে কি হয়:

    একটি জমি কিনলেই জমির মালিক হওয়া যায় না। তার জন্য জমি রেজিস্ট্রি করতে হয়। জমি রেজিস্ট্রি করার ফলে জমির মালিক হওয়া যায়। জমি রেজিস্ট্রি করলে জমির বর্তমান মালিকের নামে দলিল হয়। কিন্তু পূর্বের মালিকের নামে জমির খতিয়ান থাকে।

    যার ফলে নতুন মালিকের জমির খাজনা দিতে সমস্যা হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য জমি খারিজ করতে হয়। জমি খারিজ করার ফলে পূর্বের মালিকের খতিয়ান থেকে আপনার নামে নতুন খতিয়ান তৈরি হয়। নতুন করে আপনার যেটুকু জমি সেই জমির কাজ না দিলেই হয়। 

    জমি খারিজ না করলে অনেক সময় জমির মালিকানা হারানো সম্ভাবনা থাকে। কারণ, নতুন করে জমি রেকর্ডের সময় পূর্বের খতিয়ান অনুসারে যদি রেকর্ড করে তাহলে জমির মালিকানা পূর্বের মালিকের নামেই হয়ে যায়। 

    আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সরকারি নার্সিং কলেজের তালিকা

    আর যদি আপনার নামে জমি খারিজ করা থাকে তাহলে কোন সমস্যা ছাড়াই আপনার নামে জমি রেকর্ড হবে। তাহলে আর কোন ধরনের সমস্যা হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব জমি কেনার সাথে সাথে জমি খারিজ করতে হয়।

    অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি

    অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি

    বর্তমানে সময় অনলাইনের। সকল কাজ অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। অনলাইনের ব্যবহারের ফলে, বর্তমানে জমি সংক্রান্ত সকল কাজ অনলাইনে করা যাচ্ছে। অনলাইনে মাধ্যমে জমি খারিজ হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই, অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি জানে না। 

    বর্তমানে এই কাজটি অনেক সহজ হয়েছে। অনলাইনে যদি আপনি জমি খারিজ করতে চান তাহলে আপনাকে কম্পিউটারের দোকানে যেতে হবে। তারা নিয়মিত অনলাইনে কাজ করে।

    অনলাইনে জমি খারিজ করতে হয় land.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। কম্পিউটার দোকানে গিয়ে জমি খারিজ করার কথা বলতে হবে। তাহলে তারা, আপনার জমি খারিজের জন্য আবেদন করবে।

    অনলাইনে জমি খারিজের আবেদন করতে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। কি কি কাগজ লাগে নিম্ন তুলে ধরা হলো:
    1. যার নামে জমির দলিল আছে তার ছবি
    2. জমির মালিকের স্বাক্ষর
    3. জমি ক্রয় করার দলিল
    4. পূর্বের মালিকের জমির খতিয়ান
    5. এন আইডি কার্ডের ফটোকপি
    সাধারণত অনলাইনে জমি খারিজ করতে এইসব কাগজপত্র থাকলেই হয়। এবং কিছু টাকা সরকারি ফান্ডে জমা করতে হয়।

    জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে:

    জমির দলিল থাকলে মনে করি আমরা জমির মালিক। কিন্তু অনেক সময় জমি খারিজ না করলে সমস্যা হয়। বিশেষ করে সমস্যা হয় জমি রেকর্ডের সময় এবং জমির খাজনা পরিশোধ করার সময়। এই সমস্যা সমাধান করতে জমি খারিজ করতে হয়। 

    খারিজ করতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ, জমি খারিজ করতে হলে অনেক ধরনের কাগজ লাগে। জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে নিম্ন তুলে ধরা হলো:
    1. জমির দলিলের ফটোকপি
    2. যার নামে দলিল আছে তার পাসপোর্ট সাইজ দুই কপি ছবি।
    3. জমির মালিকের আইডি কার্ডের ফটোকপি।
    4. জমির পূর্বের দলিলের ফটোকপি।
    5. পূর্বের খতিয়ানের ফটোকপি।
    6. খতিয়ানের খাজনা পরিষদের রশিদ।
    সাধারণত জমি খারিজ করতে ওপরে যেসব তথ্যের কথা বলা হয়েছে সেগুলোই লাগে। কিছু কিছু সময় নিয়ম পরিবর্তন কারণে কাগজ কম বেশি হতে পারে।

    জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে?

    জমি খারিজ করতে সরকারি রাজস্ব খাতে টাকা প্রদান করতে হয়। কারণ, জমির খারিজের কাগজের ফরম তার জন্য রাজস্ব খাতে টাকা প্রদান করতে হয়। সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী জমি খারিজের ফরমের দাম ১১৫০ টাকা। কোন কোন সময় টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। 

    সেই তথ্য অফিসিয়াল land.gov.bd ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকে। এছাড়াও অনলাইনে মাধ্যমে করলে অনলাইনে খরচ দিতে হয়। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ জমি খারিজ হয় মুহুরী অথবা দালালের মাধ্যমে। মুহুরী বা দালালের মাধ্যমে জমি খারিজ করতে অনেক টাকা লাগে। 

    আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে


    কারণ, তারা কাজ করে থাকে ঘুষের মাধ্যমে। এবং অনেক সময় ধরে কাজ করে। যার ফলে তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হয়। কিছু কিছু সময় প্রতিদলির প্রতি 5 থেকে 6 হাজার টাকা দিতে হয়। এত টাকা দেওয়ার পরেও অনেক দিন সময় লাগে। 

    কিন্তু অনলাইনে করলে টাকার পরিমাণও কম এবং ভোগান্তীয় কম হয়। তাই অনলাইনে জমি খারিজ করা সুবিধা জনক।

    নতুন ভূমি আইন কি?

    ভূমি সংক্রান্ত অনেক আইন রয়েছে। তবে কিছু কিছু আইনের সমস্যা রয়েছে। যা বর্তমানে সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ভূমি মন্ত্রী নতুন আইন পাস করেছে। নতুন ভূমি আইন হচ্ছে,
    • দলিল যার ভূমি তার।
    • অনলাইনে খাজনা পরিষদ।
    এই আইনের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। কারণ অনেকে জোর করে জমি দখল করে রাখে। যাতে করে জমির মালিক জমি দখল নিতে বছরের পর বছর মামলা চালাতে হয়। এ আইনের ফলে এখন জমির দলিল তার ভূমি তার।

    কিন্তু এই আইনের ফলে অনেক সমস্যা হয়েছে। কারণ বর্তমান সময়ে অনেকেই জাল দলিল তৈরি করছে। যার ফলে অনেকেই জমির মালিক না হয়েও জমি দখল করতে পারছে। এতে করে প্রতারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    শেষ কথা: খাজনা ও খারিজ কি? জমি খারিজ করার পদ্ধতি

    বর্তমান সময়ে মানুষ জমির কাগজপত্র নিয়ে অনেক সচেতন। কারণ একটি ভুলের কারণে অনেক বড় ক্ষতি হয়। অনেক সময় জমির মালিকানা চলে যায়। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে অবশ্যই জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমি রেজিস্ট্রি করার পর জমি খারিজ করতে হয়। 

    খরচ করলে সেই জমির মালিকানা আর অন্য কেউ নেওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এবং প্রতি বছর জমির খাজনা পরিশোধ করতে হয়। আপনি যদি জমি কিনে জমি রেজিস্ট্রি করেন এবং জমি খারিজ করেন, তাহলে আপনার অনেক সুবিধা হয়। 

    আপনার যেটুকু জমি সেটুকু খাজনা পরিষদ করলেই আপনার হয়। এতে করে আপনার কাগজ সবসময় সঠিক থাকে। এ কারণে অবশ্যই জমি খারিজ করতে হবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ