২০২১ সালের শুরুর দিকে আপডেট করা হয় হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি এবং পলিসি। এই সম্পর্কে হয়তো ইতিমধ্যে আমরা সবাই জানি। হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফেসবুকের সাথে আপনার পার্সোনাল ডাটা শেয়ার করতে হবে।
এছাড়াও কিছুদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপ আরও কিছু নতুন তথ্য জানিয়েছে যে, আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের এই নতুন প্রাইভেসি পলিসি অ্যাকসেপ্ট করতে রাজি না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন কোর ফিচারস ব্যবহার করতে পারবেন না। আর ঠিক এই সমস্ত কারণেই প্রাইভেসি কনসার্নড ইউজাররা যদি হোয়াটসঅ্যাপ এর পরিবর্তে অন্য কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকেন আর আপনার যদি হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকে, আপনি যদি তাদের সমস্ত পলিসি মেনে নিতে রাজি থাকেন তাহলে আপনার কোনো চিন্তাই নেই।
আর অপরদিকে আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে ব্যবহার করার মতো অন্য কোনো অলটারনেটিভ মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে কি কি অপশন আছে আপনার কাছে? সেগুলো সম্পর্কেই জানাতে চলেছি এই পোস্টের মাধ্যেমে। তবে হ্যাঁ এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো, আপনি যেকোনো মেসেজিং অ্যাপ চাইলেই রেগুলার ব্যবহার করতে পারবেন না। নিজে নতুন মেসেজিং অ্যাপে সুইচ করার পাশাপাশি, যাদের সাথে আপনি রেগুলার হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতেন, তাদেরকেও সেই নতুন প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আপনার কাছে আর কি কি অপশন রয়েছে?
যে সমস্ত অপশন রয়েছে?
১। সিগন্যাল প্রাইভেট মেসেঞ্জার (Signal Private Messenger) ঃ
আমরা যদি হোয়াটসঅ্যাপ এর অলটারনেটিভের কথা বলতে যায় তাহলে প্রথমেই যে অ্যাপের নামটি আসে সেটি হচ্ছে সিগনাল মেসেঞ্জার। হোয়াটসঅ্যাপের এই নতুন প্রাইভেসি পলিসি আসার পর থেকে সিগনাল মেসেঞ্জারই ট্রেন্ডিং হোয়াটসঅ্যাপ অলটারনেটিভ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে উঠেছে। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে, পৃথিবীর সব চাইতে ধনী ব্যাক্তি ইলন মাস্ক নিজেই তার টুইটারে টুইট বার্তা করে সবাইকে সিগনাল মেসেঞ্জার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন টেকনোলজিটি তৈরি করেছে সিগনাল ফাউন্ডেশন। আর এই সিগনাল ফাউন্ডেশনের তৈরি সম্পুর্ন আলাদা একটি মেসজিং অ্যাপ হচ্ছে সিগনাল মেসেঞ্জার। সিগনাল অ্যাপ মূলত সবথেকে সিকিওর মেসেজিং অ্যাপ এর ক্ষেত্রে পরিচিতি পেয়ে উঠেছে।
আপনি এই সিগনাল মেসেঞ্জারে আরও বেশ কিছু অতিরিক্ত সিকিউরিটি ফিচারস পেয়ে যাবেন, যেগুলো আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাবেন না। যেমন- ধরুন সেল্ফ ডেস্ট্রাক্টিং মেসেজ এবং স্ক্রিনশট প্রোটেকশন, এই সিকিউরিটির ফলে কেউ চাইলেও আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিতে পারবে না। এছাড়াও সিগনাল মেসেঞ্জারে চ্যাট থেকে শুরু করে কল, গ্রুপ কল এবং সব ইউজার ডাটা এনক্রিপ্টেড হিসাবে পেয়ে যাবেন যা আপনার ডাটার সুরক্ষা প্রদান করতে বেশ কার্যকরী। এছাড়াও সিগন্যাল ফাউন্ডেশনের ভাষ্যমতে, সিগন্যাল মেসেঞ্জার অ্যাপ আপনার কোনো ডাটার সাথে আপনার কোনো লিংক রাখেনা বা আপনার ডিভাইস ফিংগারপ্রিন্ট আপনার ডাটার সাথে কখনোই লিংক করেনা।
এছাড়াও সিগনাল মেসেঞ্জার অবশ্যই সম্পুর্ন অ্যাডফ্রি এবং স্পন্সর ফ্রি একটি অ্যাপ । এই অ্যাপটি হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের থেকে অনেক বেশি লাইটওয়েট এবং ফাস্ট। আর এটির ইউজার ইন্টারফেসও হোয়াটসঅ্যাপের থেকে অনেক বেশি ক্লিন এবং মিনিমাল। আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের সবদিক থেকে বেস্ট অলটারনেটিভ অ্যাপ খুঁজে থাকেন তাহলে এটাই আপনার জন্য বেস্ট অপশন হতে চলেছে।
২। টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার (Telegram Messenger) ঃ
হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে যদি আরেকটি অ্যাপের কথা বলি তাহলে অবশ্যই যেই অ্যাপটির কথা বলতে হচ্ছে সেটি হলো টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার। টেলিগ্রাম ইতিমধ্যেই অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ওপেন-সোর্স ইন্সট্যান্ট মেসেজিং করার জন্যে অন্যতম একটি মাধ্যেম। আপনি রাশিয়ান এই মেসেজিং অ্যাপটিতে এমন সমস্ত ফিচারস পাবেন যেগুলো একটি আইডিয়াল মেসেজিং অ্যাপে থাকা উচিত। এছাড়াও আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে টেলিগ্রামের সবথেকে ভালো ফিচার যেটি তা হলো, আপনি টেলিগ্রামে সর্বোচ্চ ২ জিবি পর্যন্ত ফাইল শেয়ার করতে পারবেন অনায়াসেই। একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখলে আপনি অন্য কোনো মেসেজিং অ্যাপে এত বড় ফাইল সাইজ লিমিট পাবেন না। যেখানে আপনি হোয়াটসঅ্যাপে ২৫ এমবির বেশি সাইজের ফাইল সেন্ড করতে পারবেন না, সেখানে ২ জিবি লিমিট অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ বলে ধরেই নেওয়া যায় এই অ্যাপটির জন্যে।
এছাড়াও আপনি এই টেলিগ্রামে অনেক ফিচার পাবেন যেগুলো আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে কখনই পাবেন না। এই যেমন ধরুন- টেলিগ্রমে আপনি অনেক কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের বট পাবেন যেগুলো আপনার অনলাইন লাইফকে আরও সহজ করে দিতে সামর্থ্য রাখে। আপনি চাইলে এই অ্যাপে টাস্ট রিমাইন্ডার থেকে শুরু করে, লিংক শর্টেনার, ইউটিউব ডাউনলোডার এমন হাজারো রকমের টেলিগ্রাম বট ব্যবহার করতে পারবেন খুব সহজেই। এছাড়াও টেলিগ্রামের আরেকটি হাইলাইটেড ফিচার হচ্ছে, আপনি টেলিগ্রামে সেন্ড করা যেকোনো টেক্সট সেন্ড করার পরেও এডিট করে ফেলতে পারবেন খুব সহজেই। এছাড়াও আনসেন্ড অপশন তো থাকছেই।
৩। স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat) ঃ
স্ন্যাপচ্যাটও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। তবে সত্যি কথা বলতে, নামের সাথে চ্যাট থাকলেও স্ন্যাপচ্যাট আসলে কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ নয়। এটি মেসেজিং অ্যাপের থেকে আরও বেশি কিছু। এটি ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের মতোই একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং একইসাথে একটি মেসেজিং অ্যাপ। তবে আপনি চাইলে এটিকে একটি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মতো করেও ব্যাবহার করতে পারেন। আর স্ন্যাপচ্যাটের সব ফিচারস বাদ দিলেও ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে এটি যথেষ্ট ভালো।
স্ন্যাপচ্যাটেও আপনি এমন কিছু ফিচার পাবেন, যা আপনি অন্যান্য অধিকাংশ মেসেজিং অ্যাপ বা হোয়াটসঅ্যাপে পাবেন না। যেমন, সিগনালের মতো স্ন্যাপচ্যাটেও আপনি টাইমার সেট করে সেল্ফ ডেসট্রাক্টিং মেসেজ পাঠাতে পারবেন। আবার স্ন্যাপচ্যাটের সবথেকে ইউনিক ফিচারটি হচ্ছে, কেউ আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিলে সাথে সাথেই আপনি এই ব্যাপারে নোটিফিকেশন পাবেন এবং জানতে পারবেন যে কে আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিয়েছে।
আর আপনার যদি সেল্ফি তোলার সময় ফেস ফিল্টার ব্যাবহার করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনার জন্য স্ন্যাপচ্যাট মাস্ট ইউজ একটি অ্যাপ। কারণ, সবথেকে সুন্দর ফেস ফিল্টার এবং ফেস মাস্কগুলো আপনি স্ন্যাপচ্যাটেই পাবেন। তাই এক্ষেত্রে স্ন্যাপচ্যাটকে একইসাথে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মতো ব্যাবহার করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবেন। সত্যি কথা বলতে, হোয়াটসঅ্যাপের অলটারনেটিভ হিসেবে আপনি চাইলে স্ন্যাপচ্যাট ব্যাবহার করতে পারেন, তবে এর থেকেও বেটার অপশন আপনি আরও পাবেন।
৪। আলাপ (Alaap) ঃ
আপনি যদি আমাদের দেশে তৈরি আমাদের দেশের নিজস্ব কোনো অ্যাপ ব্যাবহার করতে চান হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে, তাহলে আপনি চাইলে BTCL এর তৈরি আলাপ অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন, কারণ এটি একটি ভালো চয়েজ হতে পারে আপনার জন্যে। আলাপ অ্যাপটি আপনি চাইলে একেবারেই হোয়াটসঅ্যাপের মতো করে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও এটির ইউজার ইন্টারফেসও মোটামুটি ভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মতোই। তাই আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের লং টাইম ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাছে এই অ্যাপটি অনেক বেশি ফ্যামিলিয়ার লাগবে। আর এই অ্যাপটির সার্ভার আমাদের নিজেদের দেশের মধ্যে থাকায় এটির মেসেজ ডেলিভারি স্পিড এবং রেস্পন্স টাইম হোয়াটসঅ্যাপের তুলনায় বেশ কিছুটা ফাস্ট মনে হবে।
আপনি চাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মতোই আপাল অ্যাপটিতে টেক্সট চ্যাট, ইমেজ, ভয়েস মেসেজ পাঠাতে পারবেন। এছাড়াও ফ্রি ভয়েস কল এবং ভিডিও কলও করতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যেমে। আপনি যদি আলাপ অ্যাপ ব্যবহার করেন তাহলে আপনি একটা এক্সট্রা ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। আর সেটি হচ্ছে, লোকাল কলিং।
এই আলাপ অ্যাপটি ব্যবহার করেই বাংলাদেশের যেকোনো লোকাল অপারেটরের নাম্বারে ৩০ পয়সা প্রতি মিনিট রেটে কল করতে পারবেন এবং বাংলাদেশের যেকোনো কর্পোরেট/বিজনেস নাম্বারে ফ্রি কল করতে পারবেন অনায়াসেই। তবে শুধুমাত্র ফ্রি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেও এটি একটি ডিসেন্ট চয়েজ। আপনাকে এই আলাপ অ্যাপটিতে সাইনআপ করার জন্য আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর মাধ্যেমে ভেরিকেশনের প্রয়োজন পড়বে।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার অন্তত কিছুটা হলেও কাজে লাগবে নিজের পছন্দের স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আপনি চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বা টুইটারের অফিসিয়াল পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকতে পারেন। এতে করে সকল প্রকার নতুন নতুন তথ্য পৌছে যাবে আপনার কাছে। আর আপনার যেকোন মতামত জানাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যেকোন সময়ে।
0 মন্তব্যসমূহ