ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার নিয়ম

fifa world cup 2022

ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার নিয়ম আমাদের সকলের জেনে থাকা ভালো। নিয়মাবলীতে একটি দলে কতজন খেলোয়াড় থাকবে, খেলার সময়সীমা, মাঠে এবং  বলের আকার, ফাউলের ধরন ও প্রকৃতি যাতে রেফারিরা শাস্তি দিতে পারে তার ধরন, বারংবার ভুল ব্যাখ্যা করা অফসাইড আইন এবং অন্যান্য অনেক আইন উল্লেখ করা হয়েছে যা এই খেলোয়াড়টিকে সঠিকভাবে বর্ণনা করে। একটি ম্যাচ চলাকালীন সময়ে খেলোয়ারের আইন গুলি ব্যাখ্যা করা এবং প্রয়োগ করা রেফারির কাজ।

এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ জন ফুটবলার পরিবর্তন করা গেলেও সেটি করতে হবে তিন বারের মধ্যে।আর পেনাল্টি শুটআউটের আগে মূল একাদশে পরিবর্তন বা গোলকিপার পরিবর্তন করা যাবে এবারের বিশ্বকাপ থেকে।

 সূচিপত্র ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার নিয়ম:

১. ফিফা বিশ্বকাপের নতুন নিয়ম

২. ফুটবলের ইতিহাস

৩. ফুটবল খেলা নিয়ম কানুন ও  আইন

৪. ফুটবল খেলার মাঠ নির্বাচন

৫. ফুটবল খেলার বল নির্বাচন

৬. খেলোয়ার

৭. পোশাক

৮. রেফারি  ও সহকারি রেফারি

৯. হলুদ কার্ড

১০. লাল কার্ড

১১. ম্যাচের সময় সীমা

১২. ফুটবল ম্যাচ শুরুর নিয়ম

১৩ গোল হওয়া

১৪. অফসাইড

১৫. ফাউল

১৬. হ্যান্ডবল

১৭. ফ্রিকিক ও ইনডিরেক্ট ফ্রিকিক

১৮. পেনাল্টি কিক

১৯.  থ্রো-ইন

২০. গোল কিক

২১. গোল কিকের নিয়ম

২২. কর্নার কিক

২৩. বদলি খেলোয়াড়

২৪. ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা

২৫. ফুটবল বিশ্বকাপ

২৬. সেরা কয়েক জন খেলোয়াড়দের তালিকা

আরও পড়ুনঃ আজকের খেলা লাইভ / খেলা দেখার ওয়েবসাইট

১.ফিফা  বিশ্বকাপের নতুন নিয়ম 

ফিফা বিশ্বকাপে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোন টুর্নামেন্টে ২৩ জনের স্কোয়াড নিয়ে যেতে পারত দেশগুলো। ২০২১ সালের ইউরোতে অবশ্য সে নিয়মে একটু পরিবর্তন আনে উয়েফা। আসন্ন কাতার বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে ফিফাও হাঁটছে সে পথে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে চাইলে ২৬ জনের স্কোয়াড নিয়ে যেতে পারবে অংশগ্রহণকারী দলগুলো।

এর অর্থ হচ্ছে, বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে প্রথম একাদশের বাইরে অতিরিক্ত ১৫জন করে ফুটবলার থাকতে পারবেন রিজার্ভ বেঞ্চে। কোচ এবং অন্য কর্মকর্তাদের সংখ্যাটা হবে সর্বোচ্চ ১১ জন। এই ১১ জনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে দলের চিকিৎসককেও। ডাগআউটের বেঞ্চে এই ২৬ জনের বেশি কারও বসার অধিকার থাকবে না।

২০০২ বিশ্বকাপ থেকে প্রতিটি দল ২৩ জন ফুটবলার নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যেতো। করোনার কারণে ২০২০ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে উয়েফা প্রতিটি দলে ২৬ জন করে ফুটবলার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। উয়েফার দেখানো পথেই এবার হাঁটলো ফিফা।

করোনার কারণে আগেই ম্যাচগুলোতে ৯০ মিনিটে ৫জন বদলির নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল। এই নিয়মটা এখন মোটামুটি স্থায়িত্ব পেয়ে গেছে। এখন ২৬জন ফুটবলার রাখার নিয়ম করা হলো

২. ফুটবলের ইতিহাস

ফুটবল খেলার উৎপত্তি ১৮৬৩  সালের তৎকালীন ইংল্যান্ড। অধিকাংশের মত অনুসারে, ফুটবল খেলার উৎপত্তি প্রাচীন চীনে। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে। খেলার সকল নিয়ম কানুন চিনি তৈরি করা হয়।

ইতিহাস গবেষণা করে বৈচিত্র্য সকল তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে যা পাওয়া যায় তা হল, ফুটবল শুরু করেছিল আদি যুগে গ্রিক ও রোমান সম্প্রদায় গোষ্ঠীরা ৩৫০ খ্রিস্টাব্দে। বিভিন্ন দেশ  ভিন্ন নামে এই খেলার নামকরণ করেছে।

যেমন:- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খেলার নাম সকার। ইংরেজিতে Foot শব্দের অর্থ  পা। পা দিয়ে  এই খেলা  খেলা হয় বলে এই খেলার নাম হয়েছে ফুটবল।

৩. ফুটবল খেলা নিয়ম কানুন ও  আইন

 ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফুটবলের নিয়মকে লিপিবদ্ধ করা বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। প্রচলিত আইন গুলো ১৮৩৮  সালের, যেখানে নতুনভাবে গঠিত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিয়মাবলীর আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। ফিফা ফুটবল খেলার নিয়মগুলি কেবলমাত্র তার সদস্যদের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

 নিয়মগুলি জাতীয় ফুটবল সংস্থাকে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তনের অনুমতি দেয়, যার মাধ্যমে কয়েকটি নিম্নস্তরের খেলার জন্য প্রযোজ্য, তবে এছাড়া বিশ্বব্যাপি প্রায় সকল সংগটিত ফুটবল নিয়মের অধীন এর খেলা হয়। একটি ম্যাচ চলাকালীন সময়ে খেলার আইন গুলো ব্যাখ্যা করা এবং প্রয়োগ করা রেফারির কাজ।

৪. ফুটবল খেলার মাঠ নির্বাচন

 ফুটবল খেলার মাঠটি আয়তাকার আকৃতির হয়ে থাকে। মাঠের তল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অথবা সম্পূর্ণ কৃত্তিম  হতে হয়।  কৃত্তিম মাঠ হলে তার রং অবশ্যই সবুজ হতে হবে। খেলার মাঠের দাগ গুলো অবশ্যই নিরাপদ উপাদান দিয়ে তৈরি হতে হবে।

 আয়তাকার মাঠের সীমানা নির্দেশকারী চারটি লাইনের মধ্যে লম্বা দুটি লাইন কে  বলে টাচলাইন। অপর দুইটি আইন কে বলে  গোল লাইন। সম্পূর্ণ মাঠ একটি মধ্যরেখা দ্বারা বিভাজিত থাকে। মধ্য রেখা ঠিক মাঝ বরাবর স্থানকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্তাকার হয়। বৃত্তটির নাম মধ্যবৃত্ত। এর ব্যাসার্ধ ৯.১৫  মিটার।

 আন্তর্জাতিক মাসের জন্য মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১১০ মিটার (১২০ গজ), সর্বনিম্ন ১০০ মিটার (১১০ গজ) এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ৭৫  মিটার (৮০ গজ), সর্বনিম্ন ৬৪ মিটার (৭০ গজ) হতে হবে। মাঠের পোস্টগুলো অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হতে হবে। গোলপোস্টের দুই বার এর দূরত্ব ৭.৩২ মিটার এবং উচ্চতা ২.৪৪  মিটার।

৫. ফুটবল খেলার বল নির্বাচন

গোলাকার বলের পরিধির মাপ সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার হতে হবে, সর্বনিম্ন ৬৮ সেন্টিমিটার।  ম্যাচ শুরুর সময় বলের ওজন সর্বোচ্চ ৪৫০ গ্রাম, সর্বনিম্ন ৪১০ গ্রাম।  জলের ভেতর বাতাসের চাপ হবে ০.৬-১.১ অ্যাটমোস্ফিয়ার। কোন সময় বল নষ্ট হয় খেলা বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে আবার শুরু হবে বল ড্রপিং এর মাধ্যমে।

৬. খেলোয়ার

 দুই পক্ষের খেলোয়াড় সংখ্যা ১১ জন করে মোট ২২ জন হতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জায়গা পরিবর্তন করতে পারবে। এমন কি গোলরক্ষকও স্টপেজ টাইম নিয়ে জায়গা পরিবর্তন করে খেলতে পারবেন। প্রতি দলে একজন গোলকিপার থাকা অবশ্যক। কোন দলে ৭ জনের কোন খেলোয়ার থাকলে খেলা শুরু করা যাবে না।

 আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২ জন খেলোয়াড়কে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে রাখা যায়। সর্বোচ্চ ৩ বার খেলোয়ার বদল করা যায়। তবে কর্নার কারণে এখন ৫ বার বদলে সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে ‘এ’ দলগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ জমাতিরিক্ত খেলোয়ার রাখার সুযোগ রয়েছে।

৭. পোশাক

 প্রতি দলের খেলোয়ারদের নির্দিষ্ট জার্সি, শর্টস, মোজা,  শিন গার্ড, বুট পরতে হবে এবং গোলরক্ষকদের সাজপোশাক হবে আউটফিল্ডের খেলোয়ারদের চেয়ে আলাদা। তবে গোলকিপারদ্বয়  চাইলে ট্রাকসুট  পরতে পারে।

 আর যদি খেলার মধ্যে কোন খেলোয়ারের জুতা বা শিন গার্ড হারিয়ে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা আবার পড়তে হবে। তবে খালি পায়ে গোল করলেও সেটি  গোল হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়াও প্রত্যেক খেলোয়ার কে  একই রং এর জার্সি পরতে হবে।

৮. রেফারি ও সহকারি রেফারি

  ম্যাচের শুরু থেকে শেষ বাঁশি বাজানোর আগ পর্যন্ত রেফারির হাতে থাকবে ক্ষমতা। রেফারি সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। পুরো খেলাকে নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করার দায়িত্ব তার। এবং নিয়মের ব্যাঘাত ঘটলে যেকোনো  খেলোয়ারকে  নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে।

 এ ব্যাপারে তিনি লাল ও হলুদ কার্ডের ব্যবহার করেন। হলুদ কার্ড এর সাহায্যে তিনি কোন খেলোয়ার কে সাবধান করতে পারেন। আর লাল কার্ডের সাহায্যে কোন খেলোয়ার কে ওই খেলা থেকে বাতিল করে দিতে পারেন। আবার কোন খেলোয়ার দুটি হলুদ কার্ড পেলে লাল কার্ড হিসেবে গণ্য হয়।

 কর্তৃত্বের দিক দিয়ে রেফারির পরেই  সহকারি  রেফারির  স্থান।  সহকারি রেফারি খেলা  সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে  যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখেন তা হলো-

 বল সম্পূর্ণভাবে মাঠের বাহিরে গিয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করা। কোন  দল  কর্নার কিক, ফ্রি কিক, গোল কিক পাবে তা নির্ধারণ করা। অফসাইড হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা। খেলোয়ার পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লে সংকেত দেওয়া। পেনাল্টি কিক এর সময় খেলোয়ার বল পর্শ করার আগেই গোলকিপার গোল লাইন থেকে এগিয়ে আসলে তা লক্ষ্য করা।

আরও পড়ুনঃ  ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স Free Fire Max 2022

৯.হলুদ কার্ড

মূল রেফারি সাতটি কারণে কোন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখাতে পারেন। কারনগুলা হলো:-

১. অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য

২. অশোভন শব্দ কিংবা আচরণের জন্য

৩. খেলার নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করলে

৪. আবার খেলা শুরু করতে দেরি করলে

৫. প্রতিপক্ষের কর্নার কিক বা ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর রীতি মানতে না চাইলে

৬. রেফারির আদেশ ছাড়া মাঠের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকলে

১০.লাল কার্ড

মূল রেফারি ছয়টি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখাতে পারেন। কারণগুলো হলো–

১. গুরুতর ফাউল করলে।

২. কাউকে হিংস্রভাবে আঘাত করলে।

৩. প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় কিংবা রেফারিকে থুথু দিলে।

৪. প্রতিপক্ষের গোল মেনে না নিলে অথবা হাত দিয়ে গোল করার চেষ্টা করলে।

৫. অসম্মানজনক বা অশ্লীল মন্তব্য করলে।

৬. একই ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়কে প্রথম হলুদ কার্ডে দেখানোর পর দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখানো হলেই তা লাল কার্ড দেখানো বলে বিবেচিত হবে।

১১.ম্যাচের সময়সীমা

ম্যাচের প্রতি অর্ধেই নির্ধারিত সময় ৪৫ মিনিট করে ম্যাচের মোট সময় ৯০ মিনিট। প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পরে একটি বিরতি নেওয়া হয় যাকে বলে হাফ টাইম। এই হাফ টাইম এর ব্যাপ্তি সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট হতে পারে। এ সময় খেলোয়াড়রা বিশ্রাম করেন অথবা পরবর্তী কৌশল ঠিক করেন।

তবে খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে, খেলোয়াড়রা ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে কিংবা বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামতে নষ্ট হওয়া সময় হিসাব করে রেফারি অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ করতে পারেন।

১২.ফুটবল ম্যাচ শুরুর নিয়ম

পয়সা দিয়ে টস করা হয় প্রথমে, যারা জিতবে তারা মাঠের একটা অর্ধ পছন্দ করে নেবে আর যারা হারবে তারা কিক-অফ করবে। রেফারির বাঁশির মাধ্যমে খেলা শুরু হবে এবং কিক-অফের সময় প্রতিপক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে কমপক্ষে বল থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়াতে হবে।

ম্যাচ চলাকালে বল মাঠের ভেতরে থাকলে রেফারি খেলা বন্ধ করতে পারবেন না। বল সাদা রঙের টাচলাইন বা গোললাইনের পুরোপুরি বাইরে চলে গেলে সেখান থেকে আবার খেলা শুরু হবে থ্রো-ইন, গোল কিক অথবা কর্নার কিকের মাধ্যমে (অতিক্রম করা লাইন ভেদে)। বলের একটু অংশও যদি টাচলাইন বা গোললাইনের মধ্যে থাকে, তখন বলটা মাঠের বাইরে ধরা যাবে না, খেলা চলতে থাকবে।

১৩.গোল হওয়া

একটি গোল তখনই হবে যখন বলটি কোন দলের গোলপোস্ট ও ক্রসবারের ভেতরে দিয়ে প্রবেশ করবে। এ ক্ষেত্রে পুরো বলটিকে গোললাইন পার করতে হবে। যদি বলের কোনো অংশ লাইনের ওপরে থাকে তবে তা গোল বলে গণ্য হবে না।

বল গোললাইন পুরোপুরি পার হওয়ার আগেই যদি রেফারি গোলের সংকেত দেন তাহলে খেলা আবার ড্রপড বলের মাধ্যমে শুরু হবে।

১৪.অফসাইড

ফুটবলে অফসাইড বেশ পরিচিত শব্দ হলেও অনেকেই এর মানে জানেন না। একজন খেলোয়াড় অফসাইড হিসেবে গণ্য হবেন যদি–

১. খেলোয়াড় বিপরীত দলের অংশে থাকেন এবং সেখানে বিপরীত দলের কোন খেলোয়াড় না থাকে।

২. খেলোয়াড় বিপরীত দলের গোল লাইনের কাছে থাকেন কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়রা তার আরো সামনে অবস্থান করেন।

৩. তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড় যদি পাশে অথবা পেছনে থাকে তবে অফসাইড হবে না।

১৫.ফাউল

কোনো খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের কাউকে লাথি, ধাক্কা অথবা বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ফাউলের বাঁশি বাজাবেন রেফারি। বাজেভাবে ট্যাকল, ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে আটকালে কিংবা সময় নষ্ট করলেও ফাউল হবে। ফুটবলে ফাউলের কারণে আদিতে অনেক খেলোয়াড়ের প্রাণও গিয়েছে।

তাই খেলার মধ্যে যেকোনো ধরনের ফাউল বা অসদাচারণ সীমিত করতে অনেক ধরনের নিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষত হলুদ ও লাল কার্ডের প্রচলন ফাউল ঠেকানোর জন্যই হয়েছে।

১৬.হ্যান্ডবল

ফুটবল খেলায় হ্যান্ডবলের নিয়ম সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। যখন ফুটবল কোনো খেলোয়াড় হাতে স্পর্শ করে তখনই তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে। তবে কাঁধ থেকে বগল অবধি হাতের অংশে বল স্পর্শ করলে তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে না। তার নিচে স্পর্শ করলেই হ্যান্ডবল হবে।

কিন্তু প্রতিটি হ্যান্ডবল অপরাধ নয়। যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে হাতে বল লেগে যায় তবে খেলোয়াড় শাস্তি পাবেন না। হ্যান্ডবল অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তখনি যখনঃ

১. খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার উদ্দেশ্যেই হাত বাড়াবেন এবং বল স্পর্শ করবেন।

২. ইচ্ছাকৃতভাবে হাত অস্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন যাতে বল লেগে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং বল স্পর্শ করবেন।

৩. খেলোয়াড়ের হাতে লেগে গোল হলে।

এসব কারণে হ্যান্ডবল হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে গোলকিপারের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

১৭পেনাল্টি কিক

আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড় যদি প্রতিরক্ষাকারী দলের পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে থাকা অবস্থায় কোনো ফাউলের শিকার হয় যার কারণে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়ে থাকে, তবে আক্রমণকারী দল একটি পেনাল্টি পাবে।

পেনাল্টি শট করার নিয়ম–

১. বলটিকে পেনাল্টি মার্কে স্থির থাকতে হবে।

২. যেই খেলোয়াড় পেনাল্টি শট করবেন তার নাম পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করতে হবে।

৩. পেনাল্টি শট করার সময় বাকি সকল খেলোয়াড়কে অবশ্যই পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে এবং বল থেকে অন্তত ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে।

৪. রেফারি সিগনাল দেওয়ার পরে কিক করতে হবে। ৫. বলকে পেছন দিকে কিক করা যাবে না।

৬. বল কিক করার সময় অবধি গোলকিপারকে অবশ্যই গোল লাইনে অবস্থান করতে হবে।

৭. বলটি গোল করলে, নড়া থেমে গেলে অথবা গোল হওয়া সম্ভব না এটি নিশ্চিত হলেই কেবল পেনাল্টি শেষ হয়েছে এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

১৮. থ্রো-ইন

যখন বল মাঠের বাইরে চলে যায় তখন সেই স্থান থেকেই এবার তা মাঠের ভেতরে ছুঁড়ে মারা হয়। একেই বলে থ্রো ইন। থ্রো ইন থেকে কখনো সরাসরি গোল দেওয়া যায় না।

বলটি কোনোভাবে সরাসরি প্রতিপক্ষের গোলে ঢুকে গেলে একটা গোল কিক দেওয়া হয়। আর বল নিজের গোলে ঢুকে গেলে কর্নার কিক দেওয়া হয়।

১৯. গোল কিক

অ্যাটাকিং দলের কারো পায়ে লেগে বল ডিফেন্ডিং দল গোললাইন অতিক্রম করলে তখনই গোল কিক পাবে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকেই তারা গোলে কিক নেবে এবং কিকটি অবশ্যই পেনাল্টি বক্স অতিক্রম করতে হবে। গোল কিক থেকেও সরাসরি গোল হতে পারে।

২০. গোল কিকের নিয়ম

গোল এরিয়ার যেকোনো স্থান থেকে ঐ দলের যেকোনো খেলোয়াড় গোল কিক করতে পারে। গোল কিক করার সময় অবশ্যই প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থাকতে হবে। বল লাথি লেগে নড়া শুরু করা মাত্রই খেলা শুরু হয়ে যাবে।

বল অন্য কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি যেই খেলোয়াড় গোল কিক করেছেন তিনি আবার স্পর্শ করেন তবে বিপরীত দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পাবেন।

এই ঘটনা পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে ঘটলে বিপরীত দল পেনাল্টি পাবে। তবে যদি গোল কিক করা খেলোয়াড় খোদ গোলকিপারই হয় তবে পেনাল্টি নয় বরং পরোক্ষ ফ্রি কিক পাবে।

২১. কর্নার কিক

ডিফেন্ডিং দলের কারো পায়ে বা শরীর স্পর্শ করে বল তাদের গোললাইন অতিক্রম করলে অ্যাটাকিং দল কর্নার কিক পাবে। কর্নার কিক নেওয়ার সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের অন্তত ১০ গজ দুরে থাকতে হয়।

২২. কর্নার কিক করার নিয়ম

গোল পোস্টের যেই পাশ দিয়ে বল মাঠের বাইরে গেছে সে পাশের কর্নার থেকে কর্নার কিক করতে হবে। বলটি স্থির অবস্থায় থাকতে হবে এবং আক্রমণকারকারী দলের একজন খেলোয়াড় বলটিকে কিক করবেন। কর্নার থেকে বিপরীত দলের খেলোয়াড়দের অন্ততপক্ষে ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে। কর্নারের পতাকাবাহী দন্ডটি নড়ানো যাবে না।

কিক করার পরে বল অন্য খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি একই খেলোয়াড় আবারো বল স্পর্শ করেন তবে প্রতিরক্ষাকারী দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পায়।

২৩.বদলি খেলোয়াড়

খেলোয়াড় আহত, ক্লান্ত বা দলের কৌশলগত বা দলের অন্য প্রয়োজনে ম্যাচ চলাকালীন বদলি খেলোয়াড় নামানোর আইন রয়েছে, এক্ষেত্রে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩ জন বদলি খেলোয়াড় নামতে পারবেন।

ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা

ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে ফিফা। FIFA বা Federation Of International Football Association. অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে অবস্থিত।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফিফা ফুটবলের প্রধান অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করে থাকে। ফুটবল এবং ফুটবলের নিয়মের যাবতীয় দিক ফিফাই দেখভাল করে থাকে।

ফুটবল বিশ্বকাপ

ফিফার নিয়ন্ত্রনে চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বকাপ হয় ১৯৩০ সালে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে ৩২টি জাতীয় দল একমাসব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা দু’ধাপে বিভক্ত –

গ্রুপ পর্যায় এবং নক-আউট পর্যায়।

গ্রুপ পর্যায়ে দলগুলোকে প্রতি দলে চারটি করে আটটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিশ্বকাপের মূলপর্বের ছয়মাস আগে কোন গ্রুপে কে থাকবে তা নির্ধারন করা হয়। ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী শীর্ষ আটটি দলকে (স্বাগতিক দল-সহ) আটটি ভিন্ন গ্রুপে রাখা হয়।

প্রতি গ্রুপের বাকি তিনটি দলের স্থান বিভিন্ন এলাকার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়। পরে ঐ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের মধ্যে লটারি করে চূড়ান্ত গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৮ থেকে একই গ্রুপে যেন দু’টির বেশি ইউরোপীয় দল বা অন্য কনফেডারেশনের একটির বেশি দল না থাকে সে জন্য নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে।

উপসংহার

 ফুটবল একটি রোমাঞ্চকর খেলা। কিন্তু ফুটবল খেলা দেখার রোমাঞ্চটা পরিপূর্ণভাবে তখনই অনুভব করবেন যখন আপনি এর নিয়ম গুলো জানবেন। এই প্রচন্ড উত্তেজনাকর খেলাটি সঠিকভাবে বুঝে উপভোগ করার মজাই আলাদা। আশা করি আপনারা এই লেখাটি পড়ে ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।

 লেখাটি যদি ভালো  লেগে থাকে তাহলে আমাদের পরবর্তী লেখা গুলো আপনার টাইমলাইনে পেতে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ