সোরিয়াসিস কি? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস একটি চর্মরোগ। সোরিয়াসিস দেহের যে কোনো স্থানে হতে পারে। সোরিয়াসিস ত্বকের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। তবে শীতের সময় এই রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে ত্বকের কোষগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সোরিয়াসিস তাহলে ত্বক খসখসে লাল বা সাদাটে হয়ে থাকে।

সোরিয়াসিস কি সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস কি? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়। সোরিয়াসিস শুধু ত্বকে নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গে হয়ে থাকে। এই কারণে, সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা থাকা সকলের প্রয়োজন। নিম্নে, সোরিয়াসিস কি? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

    সোরিয়াসিস কি?

    সোরিয়াসিস হল বিশেষ এক ধরনের চর্মরোগ। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সোরিয়াসিস হয়ে থাকে। সোরিয়াসিস হলে ত্বকে লাল লাল হয়ে যায়। এবং চামড়া গুলো শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষের মাথায় এই সমস্যা দেখা যায়। তবে রোগটি শরীরের সকল অঙ্গে হয়ে থাকে।

    সোরিয়াসিস কেন হয়?

    একটি চর্মরোগ সোরিয়াসিস। এই এই রোগটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এই রোগ হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে। বংশগত কারনে সোরিয়াসিস হয়। অনেক সময় অতিরুক্ত ওজনের জন্য এই সমস্যা হয়। তবে সোরিয়াসিস কেন হয় এর সঠিক কারণ এখনো পাওয়া যায় নি।

    সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ:

    সোরিয়াসিস রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিম্নে সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ ‍গুলো তুলে ধরা হলো:
    1. ফোলা এবং ত্বকে লাল ছোপ হওয়া।
    2. আলগা আঁশের মতো হওয়া।
    3. ফোলা স্থানে চুলকানি, ব্যথা হওয়া।
    4. ত্বকের উপর ফাটল এবং রক্তপাত হওয়া।
    5. পায়ের নখ, হাতের নখ এর রং পরিবর্তন হওয়া।
    6. সোরিয়াসিস রোগে রোগ আঁশ এবং প্যাচ তৈরি হতে পারে।

    সোরিয়াসিস এর প্রকারভেদ:

    সোরিয়াসিস এক ধরনের চর্মরোগ। এই রোগটির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। সোরিয়াসিস এর প্রকারভেদ গুলো তুলে ধরা হলো:
    1. পেক সোরিয়াসিস
    2. ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস
    3. ইনভার্স সোরিয়াসিস
    4. গাট্টেট সোরিয়াসিস
    5. সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস
    6. পাস্টুলার সোরিয়াসিস

    সোরিয়াসিস কতটা গুরুতর:

    সোরিয়াসিস একটি গুরুতর ত্বকের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে শীতের সময় সোরিয়াসিস রোগের জটিলতা বৃদ্ধি পায়। ত্বকের বিভিন্ন অংশ মাছের আঁশের মত খসখসে হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থান ভীষণ চুলকায় এবং ব্যথা অনুভব হয়।


    অটোইমিউন ডিজিজ একটি রোগ সোরিয়াসিস। এ রোগটা শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এ কারণে, সোরিয়াসিস রোগটি অনেক গুরুতর। সোরিয়াসিস শরীরে দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসা নিতে হবে।

    সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়:

    সোরিয়াসিস রোগটি অনেক গুরুতর। কারণ, সোরিয়াসিস হলে পুরোপুরি ভাবে সেরে যায় না। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে, এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
    সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

    সোরিয়াসিস রোগটি হলে সাধারণত ডাক্তাররা ক্রিম ব্যবহার এবং ওষুধ সেবন করতে বলে। এছাড়াও যেসব খাবার খেলে চুলকানি হয়। সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

    মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়:

    সোরিয়াসিস রোগটি অনেকের মাথায় হয়ে থাকে। মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:
    1. স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
    2. ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ধুবেন এবং ঠান্ডা প্যাক লাগাতে হবে।
    3. পেট্রোলিয়াম জেলি বা মশ্চারাইজার লাগান। এতে করে ক্ষতস্থান নরম থাকবে।
    4. দুই থেকে তিন দিন পর পর জলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে মাথায় লাগান। এতে করে সোরিয়াসিস অনেকটা সেরে যাবে।
    5. অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ লাগান। এতে করে চুলকানি অনেক কমে যাবে।

    সোরিয়াসিস এর আধুনিক চিকিৎসা:

    দিন দিন সকল কিছুই আধুনিক হচ্ছে। ঠিক একইভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আধুনিকতার ছোঁয়া পড়েছে। এই কারণে, সোরিয়াসিস এর আধুনিক চিকিৎসা বর্তমানে হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসার ফলে সোরিয়াসিস রোগের বিভিন্ন মলম তৈরি হয়েছে। 

    সেসব মলম বা ক্রিম ব্যবহার করলে খুব সহজেই সোরিয়াসিস ভালো করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে স্টেরয়েড মলম, ক্যালসিপট্রিওল বা নতুন ধরনের ইমিউনোমডুলেটর মলম সোরিয়াসিস রোগের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

    সোরিয়াসিস থেকে দ্রুত মুক্তির উপায়:

    সোরিয়াসিস রোগটি দেখতে স্বাভাবিক মনে হলো রোগটি অনেক জটিল। কারণ, এই রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাওয়া যায় না। তবে সঠিক চিকিৎসা করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। সোরিয়াসিস থেকে দ্রুত মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমাকে জানতে চাই। সোরিয়াসিস মুক্তির সবচেয়ে দ্রুত উপায় হচ্ছে সঠিকভাবে জীবন যাপন করা।


    কারণ, সোরিয়াসিস রোগটি ত্বকের উপর হয়। এ রোগটি হলে ত্বক চুলকায় এবং ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় ফেটে রক্ত বাড়ায়। এই কারণে লক্ষ্য রাখতে হবে খাবার খেলে চুলকায় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। যেন, সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানটি ফেটে না যায়।

    সোরিয়াসিস কত বছর বয়সে হয়:

    সোরিয়াসিস রোগটি নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। এই রোগটি সাধারণত ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়স থেকে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এই বয়সে রোগের সংখ্যা বেশি হলেও সকল বয়সী মানুষের মধ্যেই সোরিয়াসিস রোগটি দেখা যায়।

    সোরিয়াসিস কোথা থেকে শুরু হয়:

    সোরিয়াসিস একটি চর্ম রোগ। এ রোগটি ত্বকের উপর হয়ে থাকে। অনেকেই জানতে চাই, সোরিয়াসিস কোথা থেকে শুরু হয়। এই রোগটি শুরু হয় হাত-পা, হাতের কনুই, গায়ে এবং মাথায়। যে কোন স্থান থেকেই এই রোগটি শুরু হতে পারে।

    সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি করে যেসকল খাবার:

    সোরিয়াসিস রোগটি বৃদ্ধি পায় সঠিকভাবে চলাফেরা না করলে। বিশেষ করে সঠিক খাবার না খেলে। সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায় যে সকল খাবার খেলে। সেগুলো হল: উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ, কটিকোস্টেরাইড ইত্যাদি। এছাড়াও ধূমপান ও মদ্যপান করলে সোরিয়াসিস বৃদ্ধি পায়।

    এছাড়াও কিছু শাকসবজি রয়েছে যেসব খেলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়। সেগুলো হল: বেগুন,  পুঁইশাক, আলু, টমেটো। এসব ছাড়াও চিংড়ি মাছ ও ইলিশ মাছ খেলে সোরিয়াসিস বৃদ্ধি পায়।

    সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা:

    সোরিয়াসিস রোগীদের সকল ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। এতে করে সোরিয়াসিস বৃদ্ধি পায়। নিম্নে, সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা তুলে ধরা হলো:
    1. সবজি। যথা: ফুলকপি, ব্রোকলি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউট। 
    2. পাতাযুক্ত শাকসবজি। যথা: পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক এবং কালার শাক।
    3. স্ট্রবেরি,  ব্লুবেরি এবং রাস্পবেরি সহ বেরি।
    4. আঙ্গুর, চেরি, আপেল, কমলা, ডালিম ইত্যাদি ফল।
    5. প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার। যথা:দই, চুক্রুট।
    6. তরাল জাতিয়  খাবার।
    7. চর্বিযুক্ত মাছ। যথা: স্যালমন, ম্যাকেরেল, টুনা এবং হেরিং।

    সোরিয়াসিস কি চুলকায়:

    সোরিয়াসিস হলে ত্বকের উপরে ক্ষত সৃষ্ট হয়। সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে চুলকায় এবং অনেক ব্যাথা হয়। এবং সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে লাল লাল হয়ে থাকে। 

    সোরিয়াসিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না:

    সোরিয়াসিস একটি চর্মরোগ। যার ফলে এই রোগ হলে গা চুলকায়। এই কারণে যে সব খাবার খেলে গা চুলকায় সে সব খাবার খাওয়া যাবেনা। সোরিয়াসিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না সে গুলো হলো: বেগুন, পঁইশাক, কচু। এছাড়াও চিংড়ি, ইলিশ মাছ খাওয়া যাবেনা। এবং যেসব খাবার খেলে রোগীর গা চুলকায় সেসব খাবার খাওয়া যাবে না। 

    সোরিয়াসিস এর ঔষধ:

    সোরিয়াসিস হলে রোগী অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকে। কারণ, এই রোগ সহজে ভালো হয় না। তবে সোরিয়াসিস এর ওষুধ রয়েছে। তবে সেগুলো ব্যবহারের জন্য। নিম্নে, তুলে ধরা হলো:
    1. ক্যালসিপট্রিওল মলম
    2. ইমিউনোমডুলেটর মলম
    3. স্টেরয়েড মলম

    সোরিয়াসিস এর ইনজেকশন:

    সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা রয়েছে। তবে সেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা ভালো। অনেকেই, সোরিয়াসিস এর  ইনজেকশন কি জানতে। এগুলো সবার পক্ষে বলা সম্ভব না। কারণ, সোরিয়াসিস ধরন অনুযায়ী ডাক্তারেরা ইনজেকশন করে থাকে। তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা উত্তম।

    সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম:

    বর্তমানে সোরিয়াসিস রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে চিকিৎসা গবেষকগণ সোরিয়াসিস রোগের বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করেছে। নিম্নে, সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম এর নাম তুলে ধরা হলো:
    1. সোরিয়া- ডি
    2. ডার্মাসল - এন
    3. Dyvon plus
    4. Facid HC

    সোরিয়াসিস দেখতে কেমন:

    সোরিয়াসিস চর্মরোগ। এই রোঘ শরীরের যেকনো স্থানে হয়ে থাকে। সোরিয়াসিস দেখতে কেমন হয় অনেকে যানতে চাই। এই রোগ যে স্থানে হয় সে স্থান আঁশের মতো হয়। এবং প্রথমে লাল হয়ে থাকে। কিন্তু েপরে সে স্থান সাদা হয়ে যায়।

    সোরিয়াসিস এর ছবি:

    সোরিয়াসিস এর ছবি

    সোরিয়াসিস এর ছবি 2

    সোরিয়াসিস এর ছবি 3

    লেবু কি সোরিয়াসিসের জন্য ক্ষতিকর:

    লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। যা চর্মরোগ ভালো করতে সাহায্য করে। সোরিয়াসিস হলে লেবু ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়া করতে পারে। তবে লেবুর রস খাওয়া যাবে। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

    সোরিয়াসিস কি এসটিডির সাথে সম্পর্কিত:


    সোরিয়াসিস কি এসটিডির সাথে সম্পর্কিত অনেকে জানতে চাই। সোরিয়াসিস এসটিডির সাথে সম্পর্কিত না। সোরিয়াসিস ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ। এই রোগ হেয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে। এই রোগটি খুব এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না। সাধারণত বংশগতভাবে এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে সোরিয়াসিস হয়।

    শেষ কথা: সোরিয়াসিস কি? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় 

    সোরিয়াসিস রোগটি ত্বকে হয়। এই রোগ হওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে রোগী অনেক ভোগান্তিতে পড়ে। বিশেষ করে শীতকালের রোগীর সমস্যা বেড়ে যায়। কারণ শীতকালে চর্ম রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়।

    এই কারণে, সোরিয়াসিস হলে সাথে সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। এতে করে ভালো হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ