আকিকা অর্থ হলো কেটে ফেলা। বাচ্চার কল্যাণের জন্য সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আল্লাহর ওয়াস্তে পশু জবাই করে সন্তানের নাম রাখাকে আকিকা বলে। আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আকিকা করা সুন্নাত।
আকিকা করার মাধ্যমে সন্তানের সকল ধরনের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ কারণে আকিকা সঠিক সময় সঠিকভাবে করতে হয়। আকিকার নিয়ম ও দোয়া সকলের জানা প্রয়োজন।
কারণ আকিকা করতে হয় বাচ্চার মঙ্গলের জন্য। এ কারণে, আকিকার নিয়ম ও দোয়া সঠিকভাবে জানতে হবে। না হলে আকিকা সঠিক হবে না।
আকিকা কি?
সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হয়। আকিকা শিশু নামকরণের জন্য করতে হয়। আকিকা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এবং সকল ধরনের বিপদ থেকে সন্তান সুরক্ষিত থাকে। আকিকা দেওয়া সুন্নত। আকিকা ছাগল, ভেড়া, গরু ইত্যাদি দেওয়া হয়।
আকিকা শব্দের আভিধানিক অর্থ কি?
আকিকা আরবি শব্দ। আকিকা শব্দের অর্থ হলো কেটে ফেলা বা ভেঙ্গে ফেলা। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে সন্তানের নামকরণ ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে আকিকা দেওয়া হয়। আকিকা দেওয়ার মাধ্যমে বাচ্চার ইসলামিক নাম রাখতে হয়।
আরও পড়ুনঃ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ
কারণ আকিকার মাধ্যমে যে নাম রাখা হয় সেই নাম ধরে কিয়ামতের দিনে ডাকা হবে। এ কারণে নাম রাখার সময় অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আকিকার নিয়ম ও দোয়া:
আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। এ কারণে আগেকার নিয়ম ও দোয়া রয়েছে। আকিকার করার অনেক নিয়ম রয়েছে। বিশেষ করে আকিকা দিতে হয় বাচ্চার জন্মের সপ্তম দিনে। বেশিরভাগ আকিকা করা হয় ছাগল দিয়ে।
আকিকার পশু অবশ্যই সুস্থ সবল এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হবে। আকিকা করার নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। কারণ আকিকা করতে হয় সন্তানের মঙ্গলের জন্য। আকিকার দোয়া অনেক ধরনের রয়েছে।
আকিকার দোয়া হল: আল্লাহুম্মা হাযিহী আকিকাতু ইবনী ফুলানিন দামুহাবিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিআযমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা’রুহা বিশার’ রিহী আল্লাহুম্মাজআলহা ফিদাআল্লি ইবনী মিনান্নার।
আকিকার নিয়ম কানুন:
আকিকা করতে হয় বাচ্চার নাম রাখার উদ্দেশ্যে। তবে আকিকার অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। যেমন বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হয়। এবং ছেলে সন্তান হলে দুইটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল দিতে হয়। এছাড়াও যেকোনো হালাল পশু আকিকা দেওয়া যায়।
আকিকা দেওয়ার সময় অবশ্যই সুস্থ সবল পশু দিতে হবে। এবং আকিকার মাংস সঠিকভাবে বন্টন করতে হবে। এছাড়াও আকিকা করার সময় আকিকার দোয়া করতে হবে। তারপর আকিকা করতে হবে।
আকিকা কত দিনের মধ্যে করতে হয়?
সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা দেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) তার নিজের নাতিদের আকিকা সপ্তম দিনে দিয়েছে। এই থেকে বোঝা যায় সপ্তম দিনে আগে আকিকা দেওয়া সুন্নাত। তবে কেউ যদি কোন কারনে সপ্তম দিনে দিতে না পারে, তাহলে তাকে ১৪ তম দিনে অথবা ২১ তম দিনে দিতে হবে।
যদি কোন ব্যক্তি আর্থিক সংকটের কারণে ২১তম দিন আকিকা দিতে না পারে তাহলে যেকোনো সময় দিতে পারবে। ইচ্ছা করলে কুরবানীর দিনে আকিকা দিতে পারেন। যদি আর্থিকভাবে দুর্বল হন। তবে সেটা সুন্নত থাকবে না জায়েজ হবে।
৭ দিনে কি আকিকা করতে হয়?
সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আকিকা দিতে হয়। আকিকা দেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এর আমল থেকে জানা যায় তিনি হাসান ও হোসেনের আকিকা সপ্তম দিনে করেছিলেন। এ কারণে সপ্তম দিনে আকিকা করতে হয়। তবে যদি কোন কারণ বসাতে সপ্তম দিনে করতে না পারে তবে ১৪ তম দিন বা ২১ তম দিনে
আকিকা করতে পারে।
আরবিতে আকিকার দোয়া:
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এর কারণে সকল কিছুর সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। এই কারণে আকিকা করার নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। নিম্নে, আরবিতে আকিকার দোয়া উল্লেখ করা হলো:
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ
وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ:
নিম্নে, আকিকার দোয়ার বাংলা উচ্চারণ তুলে ধরা হলো: ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
আকিকার দোয়া ছেলে সন্তানের:
ছেলে সন্তান হলে আকিকা করতে হয় দুইটা ছাগল। এটি মহানবী (সঃ) এর সুন্নত। ছেলে সন্তান হলে আকিকার সময় নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। নিম্নে দেওয়াটি তুলে ধরা হলো:
বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা (সন্তানের নাম) বিন (পিতার নাম)।
মেয়ে সন্তানের আকিকার দোয়া আরবিতে:
মেয়ে সন্তান হলে আকিকা করতে হয় একটি ছাগল। মেয়ে সন্তানের আকিকার সময় নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। দোয়াটি হল:
বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা (মেয়ে সন্তানের নাম) বিনতে (পিতার নাম)।
আকিকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম:
আকিকা ও কুরবানীর মধ্যে কিছু মিল পাওয়া যায়। ঠিক একই ভাবে আকিকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম ও কোরবানির মতই। আকিকা করার পর আকিকার মাংস তিন ভাগের ভাগ করতে হবে।
একভাগ ফকির মিসকিনের জন্য। একভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য। আর এক ভাগ নিজের জন্য। তবে মাংসের ভাগ কম বেশি হলে সমস্যা নেই। ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণ মাংস বন্টন করতে পারেন।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম মিজানুর রহমান:
বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম ইসলামিক ব্যক্তি মিজানুর রহমান আজাহারী। তিনি আকিকা সম্পর্কে মতবাদ দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। এবং ছেলে দুইটা ছাগল এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল। এটা সম্পূর্ণ সুন্নত।
আরও পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কী
তিনি আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম সম্পর্কেও বলেছেন। আকিকার মাংস তিনভাবে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ গরীব দুঃখীর জন্য। এক ভাগ নিজের জন্য। এবং একভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য।
আপনি ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণ মাংস রান্না করে আত্মীয়-স্বজন গরিব দুঃখের মধ্যে খাওয়াতে পারেন। এবং নিজের এবং আত্মীয়-স্বজনের মাংস দিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠান করতে পারেন।
আকিকা দেওয়ার বিধান কি?
আকিকা হল সুন্নাত আল মু'আক্কাদাহ। বাচ্চা হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আকিকা করতে হয়। এই দিনেই বাচ্চার নাম রাখতে হয়। এবং আকিকা করতে হয় সপ্তম দিনে। ওই দিনেই বাচ্চার মাথার চুল ফেলতে হয়।
প্রতিটা মুসলমান সন্তানের আকিকা দিতে হবে। যদি সপ্তম দিনে দিতে না পারে তাহলে ১৪ অথবা ২১তম দিনে দিতে হবে। যদি কোন ব্যক্তির আকিকা দেওয়া না হয় তাহলে তাকে নিজে দিতে হবে।
৭ তারিখের আগে আকিকা করা যাবে কি?
আকিকা করা সুন্নত। এ কারণে আকিকার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আকিকা সপ্তম দিনে করতে হয়।সাত দিনের আগে আকিকা করা যাবে না। তবে কোন কারণ ব্যতীত সপ্তম দিনে দিতে না পারলে অন্য দিনে দিতে পারবেন। তবে সাত দিনের আগে আকিকা দেওয়া যাবে না।
গরু দিয়ে আকিকার নিয়ম:
বর্তমান সময়ে মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল। এ কারণে অনেকেই গরু আকিকা দিয়ে থাকে। ছাগল আকিকার মতই গরু আকিকার নিয়ম। তবে ছাগল আকিকা করা সুন্নত। ছাগল ছাড়াও যে কোন পশু কোরবানি করা যাবে। তবে সেটা সুন্নত হবেনা। ছাগল আকিকার মতই গরু আকিকা করার নিয়ম।
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম:
ছাগল দিয়ে আকিকা করা সুন্নত। ছেলে সন্তান হলে দুইটি ছাগল আকিকা দিতে হবে। এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল আকিকা দিতে হবে। তবে আকিকার ছাগল সুস্থ সবল হতে হবে। কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকা যাবে না। কারণ আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।
আকিকার টাকা কে দিবে:
আকিকা করার মাধ্যমে বাচ্চার বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়। বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হয়। বাচ্চার জন্মের পর থেকে সকল দায়িত্ব পড়ে পিতার ওপর। এ কারণে আকিকার টাকা পিতাকে বহন করতে হয়। যদি পরিবারের সবাই একত্রে থাকে। তবে পরিবারের টাকা দিয়ে আকিকা করতে পারবেন। তবে টাকা যেই প্রদান করুক না কারো সপ্তম দিনে আকিকা দিতে হবে।
আকিকার মাংস মা বাবা খেতে পারবে:
আগেকার মাংস তিন ভাগে বিভক্ত করতে হয়। তবে ভাগ বন্টন কমবেশি হলে সমস্যা নেই। তবে কমবেশি করে বাসায় রেখে দেওয়া যাবে না। সেসব অংশ আত্মীয়-স্বজন গরিব দুঃখীর মধ্যে বন্টন করতে হবে। আগেকার মাংস মা-বাবা খেতে পারবে। এখানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আকিকা করতে হবে বাচ্চার সুস্থ সুন্দর জীবন এর জন্য।
আকিকার গোস্ত কে কে খেতে পারবে:
আকিকার গোস্ত বন্টনের কিছু নিয়ম রয়েছে। কুরবানীর গোস্তের মতই আগেকার গোস্ত ভাগ করতে হয়। আকিকার গোস্ত তিন ভাগে বিভক্ত করতে হয়। এক ভাগ গরিব দুঃখীর। এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের। এবং এক ভাগ নিজের। এক ভাগের মাংস পরিবারের সবাই খেতে পারবে। এখানে কোন নিয়ম নেই যে পরিবারের মানুষ গোশ্ত খেতে পারবে না।
শেষ কথা: আকিকার নিয়ম ও দোয়া
সন্তান হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। এ কারণে বাচ্চা হলে সপ্তম দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি আকিকা করতে হয়। আকিকার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ওপরে আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটা শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হবে।
আকিকার সময় সকল নিয়মকানুন মানতে হবে। কারণ, আকিকার মাধ্যমে বাচ্চার সকল ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ