কালো দাঁত সাদা করার উপায়/দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায় => দাঁত আমাদের মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কথা বললে সকলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই কারণে সকলের চাই তার দাঁত যেন সাদা ঝকঝকে হয়। সাদা দাঁত শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক সময় দাঁত কালো হয়ে যায়। সবগুলো হলো ধূমপান, মদপান, পান খাওয়া এবং অতিরিক্ত চা পান করা। এছাড়াও জিনগত কারণে দাঁত কালো হয়ে থাকে। কালো দাঁত সাদা করার উপায়। আমরা অনেকেই জানিনা।
তাঁত কালো হওয়ার ফলে অনেক জায়গায় কথা বলতে লজ্জায় পড়তে হয়। সমাজে মিলামিশা করতে নিজের কাছে অস্বস্তি বোধ হয়। যাদের দাঁত হলুদ বা কালো হয়ে গেছে তারা বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন।
যার ফলে দাঁতের কালো দাগ দূর না হয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। চলুন জেনে নেই, কালো দাঁত সাদা করার উপায় সম্পর্কে।
দাঁতে কালো দাগ কেন হয়?
আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন দাঁত পরিষ্কার করার পরেও দাঁতে কেন কালো দাগ পড়ে। দাঁতে কালো দাগ পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দন্তমল বা ডেন্টাল প্ল্যাক। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খায়, তার কিছু অংশ বা কণা দাঁতের ফাঁকে বা উপরে জমে থাকে। এই খাদ্য কনা গুলো আস্তে আস্তে শক্ত আবরণে পরিণত হয়।
এই শক্ত আবরণ কে দন্তমল বা ডেন্টাল প্ল্যাক বলা হয়। এছাড়াও অনেক কারণে অনেক কারণে দাঁতে কালো দাগ পড়ে। সেসব কারণ হচ্ছে, পান খাওয়া, চা খাওয়া, ধূমপান করা, মদ্যপান করার এবং গুল ব্যবহার করা। সাধারণত এইসব কারণে দাঁত বেশি কালো হয়।
এছাড়াও নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁত কালো হয়। দাঁত কালো হলে আস্তে আস্তে রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। এবং অল্পতেই দাঁত পড়ে যায়।
দাঁত কালো হলে কি সমস্যা হয়
দাঁত কালো হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দাঁতের গোড়ায় প্রবেশ করে। আস্তে আস্তে দাঁতের গোড়া নষ্ট করে। যার ফলে কম বয়সে দাঁত পড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যার কারণে, দাঁতের ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় ব্যথার কারণে তাল তুলে ফেলতে হয়।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের ফিলিং খরচ কত, দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয়
সঠিকভাবে খাবার খেতে সমস্যা হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে দূর থেকে তিন মাস পর পর দাঁত ডাক্তার এর কাছ থেকে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখলে কালো দাগ দূর হয়। এবং সকল ধরনের রোগ জীবাণুর হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করে। গুড নাইট সরি অ্যাকশন করে দিলাম।
কালো দাঁত সাদা করার উপায়:
ঝকঝকে সাদা দাঁত হাসির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই দাঁত সাদা করতে আমরা কত কিছুই না করি। সুন্দর দাঁতের সুন্দর হাসির জন্য আপনি পরিবার ও বন্ধু মহলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন। এসব জানা সত্ত্বেও ঠিকমতো আমরা জাতের যত্ন নিই না। যার ফলে দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং কালো হয়ে যায়।
দাঁত সুস্থ থাকলে দাঁতের যত্নের কথা আমরা ভুলে যায়। প্রত্যেকটা মানুষের বছরে দুইবার করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। কিন্তু এই কাজ আমরা বছরে একবারও করি। যার ফলে দাঁতের সমস্যার পাশাপাশি দাঁত হলুদ থেকে কালো হয়ে যায়। কালো দাঁত সাদা করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিয়।
দাঁত ক্লিন করা:
দাঁতের কালো দাগ দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে দাঁত ক্লিন করা। দাঁত ক্লিন করতে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়। যখন আমাদের দাঁত অতিরিক্ত কালো হয়ে যায়। সে সময় কোন কিছুতেই দাঁত পরিষ্কার করা যায় না। এ সময় ব্যর্থতামূলক ডক্টরের পরামর্শ নিতে হয়।
ডাক্তারে কাছে গেলে তারা কিছু ঔষধ দাতে লাগিয়ে রাখে। এবং পানির চাপের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করে থাকে। প্রতিটা মানুষের বছরে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার দাঁত ক্লিন করা প্রয়োজন। এতে করে দাঁতের কালো দাগ দূর হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন ধরনের পেস্ট ব্যবহার করা:
সাধারণত ময়লার কারনে আমাদের দাঁত হলুদ হয়ে থাকে। হলুদ থাকতে যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে আস্তে আস্তে দাঁতের রং কালো হয়ে যায়। দাঁত কালো হয়ে গেলে খুব খারাপ লাগে দেখতে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিত খাবার খাওয়ার পরে দাঁত ভালো করে ব্রাশ করতে হবে।
বাজারে যেগুলো পেস্ট পাওয়া যায় এগুলো দিয়ে ঠিক ভাবে দাঁত ব্রাশ করলে। কালো দাঁত সাদা করা সম্ভব। এছাড়াও প্রত্যেকের উচিত। প্রতিদিন সকাল বিকাল দাঁত ব্রাশ করা। এতে করে দাঁত পরিষ্কার থাকে এবং দাঁতের কালো দাগ দূর হয়।
লেবুর রস:
লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক এসিড থাকে। সাইট্রিক এসিড বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এ কারণে, দাঁতে যদি কালো দাগ হয় তাহলে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রস ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে। প্রথমে লেবুর রস বের করে নিবেন । তারপর লেবুর রস মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিবে।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ
কিছুক্ষণ লেবুর রস রাখার পরে দেখতে পাবেন কালো দাঁত সাদা হয়ে গেছে। এছাড়াও লবন ও লেবুর রস একসাথে পেস্ট এর মত করে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে খুব তাড়াতাড়ি দাঁত পরিষ্কার হয়। এবং দাঁতের গোড়া থেকে রোগ জীবাণু দূর করে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কালো দাঁত সাদা করা উপায়:
কমলার খোসা:
কালো দাঁত সাদা করতে কমলার খোসা জাদুর মত কাজ করে। কমলার খোসায় সাইট্রিক এসিড পাওয়া যায়। সাইটিকা এসিড বিভিন্ন ধরনের দাগ তুলতে সাহায্য করে।
দাঁতে যদি কালো দাগ পড়ে তাহলে প্রতিদিন সকালে এবং ঘুমানোর আগে কমলার খোসা দিয়ে দাঁত মাজতে পারেন। এতে করে খুব সহজেই দাঁতের কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
ব্রেকিং পাউডার:
দাঁত সাদা করতে বেশ কার্যকরী পদার্থ ব্রেকিং পাউডার। বেকিং পাউডার খুব সহজেই দাঁতের কালো দাগ দূর করে। এটা ব্যবহার করার উপায় হচ্ছে প্রথমে ব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে নিন। তারপর পেস্টের সঙ্গে কিছু পরিমাণ ব্রেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন।
এরপর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করুন। দেখবেন সাথে সাথে কালো দাগ দূর হয়ে গেছে। কিন্তু ব্রেকিং পাউডার ব্যবহার করা ঠিক না। কারণ, ব্রেকিং পাউডারের এসিড থাকে। যা দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত কালো দাগ না হলে ব্রেকিং পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা ভালো।
কাঠ কয়লা:
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ দাঁত পরিষ্কার করতে কাঠ কয়লা ব্যবহার করে আসছে। আপনি যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে এবং কোন খরচ ছাড়া দাঁত পরিষ্কার করতে চান। তাহলে আপনার জন্য কার্যকরী পদার্থ হচ্ছে কাঠ কয়লা।
এটা ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর হাতের আঙ্গুল এর সাহায্যে দাঁতে ঘুষতে হবে। এই ভাবে নিয়মিত দাত মাজলে দাত ভালো এবং পরিস্কার থাকে।
গ্রিন টি:
গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ ফ্লুরাইড থাকে। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিঅ্যাসিডিক। এসব পদার্থ দাঁতে হলুদ রং পড়তে বাধা দেয়। এবং কলো দাগ দূর করে। তাই দাঁত পরিস্কার রাখতে গ্রিন টি খেতে পারেন।
লবণ:
লবণ দিয়ে দাাঁত পরিস্কারের কথা আমরা অনেকেই জানি। এই পদ্ধিতি অত্যন্ত প্রাচীন। লেবুর খসার সাথে এক চিমটি পরিমান লবণ মিশিয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে লেবুর খোসা দিয়ে দাঁত মাজুন।
তাহলে দাঁতের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। লবণ ও লেবুতে থাকা ভিটামিন সি বিক্রি করে। যার ফলে দাঁত খুব সহজেই পরিষ্কার হয়।
দাঁতের সঠিক যত্ন:
দাঁত মানুষের অমূল্য সম্পদ। দাঁতের মূল্য টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে দাঁত। দাঁত খাদ্য গ্রহণ করতে সাহায্য করে। ঠিকমতো কোন খাবার চিবিয়ে না খেলে তার সঠিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না।
দাঁত ছাড়া খাবার চিবিয়ে খাওয়া অসম্ভব। এছাড়াও দাঁত ছাড়া খাবার খেলে খাবারের সঠিক স্বাদ গ্রহণ করা যায় না। দাঁতের সঠিক যত্ন বলতে বোঝানো হয় দাঁত পরিষ্কার রাখা। দাঁত পরিষ্কার না রাখলে দাঁতের উপর ময়লার আবরণ পড়ে।
যার ফলে দাঁত হলুদ এবং আস্তে আস্তে কালো হয়ে যায়। অপরিষ্কার দাঁতে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। যার ফলে কম বয়সেই দাঁত পড়ে যায়। দাঁত সুস্থ রাখতে যেসব কাজ করা প্রয়োজন তাহলো:
- প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এবং সকালের নাস্তার পর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
- প্রতিবার খাবার পর পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। যেন কোন প্রকার খাবার মুখে না থাকে।
- বছরে দু থেকে তিনবার দাঁত ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিন করে নিতে হবে।
- মাংস খাওয়ার পর দাঁতের মাঝখানের মাংসের টুকরা বের করে ফেলে দিতে হবে।
- নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
দাঁতের যত্ন সঠিক খাদ্য:
মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত অংশ হচ্ছে দাঁত। কিন্তু সবার দাঁত শক্ত হয় না। কারণ, পুষ্টির অভাবে অনেক সময় দাঁত দুর্বল হয়ে পড়ে। দাঁত মজবুত করতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার বলতে বোঝানো হয় যেসব খাবারের সকল ধরনের ভিটামিনের উপাদান থাকে।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে?
দাঁত শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম মানব দেহের হাড় এবং দাঁত মজবুত করে। চলুন জেনে নেই কি কি খাবার খেলে দাঁত মজবুত হয়।
- দুধ
- ডিম
- মাছের কাঁটা
- টক দই
- আঙ্গুর ও কামরাঙ্গা
শেষ কথা: কালো দাঁত সাদা করার উপায়।
দাঁত মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু অনেক সময় দাঁতের কারণে আমরা লজ্জায় পড়ি। কারণ, ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁত কালো হয়ে যায়। সেই সময় কারো সামনে কথা বলতে নিজেকে ছোট মনে হয়। এবং মানুষ দেখলে ও খারাপ বলে।
কিন্তু এর সঠিক উপায় হচ্ছে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা। আমার বিশ্বাস সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে থাকলে কালো দাঁত সাদা করার উপায় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আপনার যদি দাঁতের সমস্যা থাকে তাহলে অনুসরণ করতে পারেন।
তাহলেই খুব কম সময়ের মধ্যে দাঁত এর কালো দাগ দূর করতে পারবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ