ড্রাগন ফলের উপকারিতা => আমরা জানি যে ড্রাগন ফল হচ্ছে একটি ক্যাক্টাস জাতীয় ফল। এই ড্রাগন ফল দেখতে অদ্ভুত ও অন্যরকম এবং এই ফল আমাদের দেশে নতুন ভাবে চাষ করা হচ্ছে। তবে ড্রাগন ফল এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে ফলের বাজার গুলোতে।
আপনারা জানেন যে অন্যান্য ফলের চেয়ে এর দাম তুলনামূলক অনেকটাই বেশি হওয়ার পরেও এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ ও দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় এর চাহিদার অনেক। আজকে আমরা জেনে নিবো বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করা এই ড্রাগন ফল কী? এর উৎপত্তি, উপকারিতা, অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এই ফল সম্পর্কে জানতে পুরো লেখাটি মনযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।
ড্রাগন ফল কী এবং ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে ড্রাগন ফল হচ্ছে একটি ক্যাকটাস (Cactus) জাতীয় গাছের ফল। যা হাইলোসেরিয়াস ক্যাকটাস গাছে জন্মে থাকে। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Hylocereus undatus. এই ড্রাগন ফলের গাছ হনলুলু কুইন বা রাতের রানী হিসেবেও পরিচিত।
তবে এই নামের পিছনে বিশেষ কিছু কারণও রয়েছে। এই ড্রাগন ফলের গাছে ফুল শুধু মাত্র রাতেই ফোটে। আর এই গাছের ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। অনেকটা Knight Queen ফুলের মত। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে Euphorbia গোত্রের ক্যাকটাসের মতো। তবে এর গাছ পাতাবিহীন এবং ফুলের পরাগায়ন নিজে নিজেই হয়ে থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন পতঙ্গ যেমন, মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় ও পাখির দ্বারাও পরাগায়ন হয়ে থাকে । তারা পরাগায়ণকে ত্বরান্বিত করে পরাগয়ণ প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে । এছাড়াও কৃত্রিম ভাবেও পরাগায়ন করা যেতে পারে। আপনি চাইলে কৃত্তিম ভাবে খুব সহজেই ড্রাগন ফলের গাছে পরাগায়ন করাতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল
এই পর্যায়ে আপনারা যারা ড্রাগন ফলের উৎপত্তি স্থল সম্পর্কে জানেন না, তাদের উদ্দেশ্য বলছি যে এই ড্রাগন ফল দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় খুব বেশি পরিমাণে জন্মে থাকে। সেন্ট্রাল আমেরিকাতে এ ফলটি ১৩শ শতাব্দীতে প্রথম চিহ্নিত করা হয়। তখন সেখানেই এই ফলের উৎপাদন হতো। অন্যান্য যায়গায় এর প্রচলন তখন শুরু হয়নি। দক্ষিন এশিয়ায় উৎপাদন শুরু হয় বিংশ শতাব্দিতে এসে।
এরপরে সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যেমন মালয়েশিয়াতে প্রথম শুরু হলেও বর্তমানে ভিয়েতনামে বানিজ্যিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ড্রাগন ফল চাষ করা হয়। এই ফল এখন দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, ইসরাইল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড,মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় আমাদের দেশের চাষীদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত পেয়েছে এই ড্রাগন ফল। তাই বর্তমানে আমাদের দেশেও বেপক ভাবে সাড়া ফেলেছে এই ড্রাগন ফলের চাষের উপর। বর্তমানে অনেকেই এই ড্রাগন চাষের জন্যে বাসার ছাদের পাশাপাশি বানিজ্যি ভাবে চাষ শুরু করেছেন।
ড্রাগন ফলের প্রকারভেদ ও নামকরণ
আমাদের দেশে এই ফলটিকে ড্রাগন ফল নামে চিনলেও এই ফলের আরো বেশ কয়েক রকমের নাম রয়েছে। এটি পিটায়া, পিটাহায়া এবং স্ট্রবেরি নাশপাতি সহ আরো অনেক নামে পরিচিত। এই ফলের সবুজ আঁশযুক্ত উজ্জ্বল লাল ত্বক রয়েছে যা দেখতে ড্রাগনের পিঠের মতো। যার কারণে এই ফল ড্রাগন ফল নামে পরিচিত।
এই ড্রাগন ফলের যে জাত সব থেকে বেশি পাওয়া যায় তা হলো কালো বীজের সাথে সাদা সজ্জা যুক্ত থাকে। যদিও লাল সজ্জা এবং কালো বীজের সাথে একটি কম পরিচিত ধরণ ও পাওয়া যায়। এছাড়া আরো আরেকটি জাতে এর ড্রাগন ফল দেখা যায়, যাকে হলুদ ড্রাগন ফল বলা হয়। এর বহিরাবরণ হলুদ এবং ভেতরে কালো বীজ সহ সাদা সজ্জা (pulp) রয়েছে।
ড্রাগন ফলের স্বাদ কিউই এবং নাশপাতির স্বাদের মিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি খেতে হালকা মিষ্টি স্বাদ লাগে। তবে কারো কারো কাছে অনেক প্রিয় একটি ফল হচ্ছে এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা এর জন্য।
আরও পড়ুনঃ খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান
আপনি যদি পুষ্টি গুনাগুনের কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে বলবো যে পুষ্টির জন্য ড্রাগন ফল একটি আদর্শ ফল। এই ড্রাগন ফলে অল্প অল্প পরিমাণে সকল প্রকার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
আর এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারের একটি ডিসেন্ট সোর্স। এই ফলে প্রতি ৩.৫ আউন্স, বা ১০০ গ্রাম পরিবেশনের জন্য যে পরিমাণ পুষ্টির পাবেন তা হলো:
ড্রাগন ফলে ক্যালোরির পরিমান
এই ড্রাগন ফলে আপনি ৬০ ক্যালোরি শক্তি পাবেন। অর্থাৎ ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফল থেকে এই পরিমাণ ক্যালোরি অনায়াসে পাবেন যা আপনার ক্যালোরির চাহিদা পূরণে অপরিশীম ভূমিকা রাখবে। তাই এটি বলাই যায় যে অন্যান্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা কয়েকগুন বেশি। ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি হওয়ায় বাজারে এই চাহিদাও কিন্তু অনেক বেশি।
ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি এর পরিমান
আপনি ১ টি ড্রাগন ফলে ভিটামিন এর পরিমান যে সমস্ত পরিমান পাবেন তা হলোঃ
- ভিটামিন সিঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের লাল বা সাদা অংশে রয়েছে ২১ মি.গ্রা. ভিটামিন সি।
- আঁশ থাকেঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ৩ গ্রাম আঁশ থাকে যা দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ও ওমেগা ৯ থাকে। এতে করে আমাদের পুষ্টি গুনাগুন অনেকটাই মিটে যায়।
- ফাইবারঃ একটি ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে যা আমাদের জন্যে অনেক উপকারি।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা । সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
- ড্রাগন ফল আমাদের কোলেস্ট্রোরেল কমায়।
- ড্রাগন ফল আমাদের হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
- ড্রাগন ফল আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ড্রাগন ফল আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- ড্রাগন ফল আমাদের ডায়াবেটিস প্রতিরো...
- ড্রাগন ফল আমাদের হজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ড্রাগন ফল আমাদের বয়সের চাপ দূর করতে বেশ ভূমিকা রাখে।
- ড্রাগন ফল আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- ড্রাগন ফল আমাদের রক্ত চলাচল বজায় রাখে।
- ড্রাগন ফল আমাদের চুলপড়া প্রতিরোধ করে।
- ড্রাগন ফল আমাদের কোলেস্ট্রোরেল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা । ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
আপনি যদি ডায়াবেটিস নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনার জন্যে রয়েছে ড্রাগন ফলের উপকারিতা যা অপরিশীম কাজ আসবে আপনার শরীরের জন্য। কেননা ড্রাগনে আছে উচ্চ মাত্রার আঁশ, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। তাই আপনারা যারা যারা ডায়াবেটিস নিয়ে খুব বেশি চিন্তায় রয়েছেন তাদের জন্য অনেক কার্যকরী একটি ফল হচ্ছে এই ড্রাগন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা । ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
আপনার হয়তোবা অনেকেই জানেন আবার অনেকে জানেন না যে এই ড্রাগন ফলে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ড্রাগন ফলের উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
আর আপনি হয়তো এটি জানেন যে ভিটামিন সি ডায়াবেটিস, আলঝেইমারস, পারকিনসন্স, ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই অনায়াসেই বলা যায় যে এটি একটি মজার ফলের সাথে সাথে এর ভেতরে রয়েছে অনেক ঔষধী গুনাগুন। তাই ড্রাগন ফলের উপকারিতা বলে বুঝাতে হবে না এরপর থেকে আপনাদের আশা করি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর কোন বিকল্প নেই। কেননা আপনি জানেন যে যত বেশি ভিটামিন সি খাবেন আপনার শরীরে রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তত বাড়বে। আর ইতিমধ্যে তো আমরা জেনেই গিয়েছি যে ড্রাগন ফলে আছে ভরপুর ভিটামিন সি। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ড্রাগন ফল খেতে হবে।
আপনি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল মনে করে কিন্তু অধিক পরিমানে এই ড্রাগন ফল খেয়ে ফেললেও অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিনিয়ত আপনি নিয়ম করে পরিমান মতো এই ফল খাবেন তাহলে ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি এবং কেমন নিজেই তাঁর পার্থক্য করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি, কেন হয়, করনীয় - আদ্দপান্থ
ড্রাগন ফল আমাদের হজম সহজ করে । ড্রাগন ফলের উপকারিতা
এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা সমৃদ্ধ বিভিন্ন পুষ্টি গুনের ভেতরে হজম করার মতো কার্যক্ষমতাও রয়েছে। ড্রাগন ফল অলিগোস্যাকারাইড নামের এক ধরনের শর্করার খুব ভালো উৎস। এই শর্করা ফ্লোরা জাতীয় ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে, যা হজম সহজ করে। তা ছাড়া প্রচুর আঁশ থাকাতেও এই ফল খেলে সহজে খাবার হজম হয়।
কেউ যদি হজম সংক্রান্ত কোন রকম সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়ম করে আপনি কিছুদিন এই ড্রাগন ফল খেয়ে দেখতে পারেন যে এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা কেমন রয়েছে হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে।
ড্রাগন ফল আমাদের হার্ট ভালো রাখে। ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আপনারা জেনে যে ড্রাগন ফলে থাকা বেটালাইনস রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ফলের ভেতরে যে ছোট ছোট কালো দানা থাকে সেগুলোতে কিন্তু রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো হার্ট ভালো রাখে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
তাই আপনি যদি হার্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই ফল টানা কয়েকদিন খেয়ে নিজের পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন আসলে এর ভেতরে কেমন ঔষধি গুনাগুন রয়েছে সেই সম্পর্কে।
সাদা ড্রাগন ড্রাগন ফল আমাদের ত্বক সুন্দর রাখে
আমরা কিন্তু নিজেদের ত্বক নিয়ে খুব বেশি পরিমান চিন্তিত থাকি তাইনা? বিশেষ করে মেয়েরা তাদের ত্বকের প্রতি অনেক যত্নশীল হয়ে থাকেন। এখন তাহলে ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফলের উপকারিতা কেমন রয়েছে সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ড্রাগন ফল ত্বকের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের সানবার্ন, শুষ্কতা ও ব্রণ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে আপনি প্রতিদিন এক গ্লাস ড্রাগন ফলের জুস খেতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের উপর বয়সের ছাপ বা বিভিন্ন কারনে রোদে পুড়া ভাবটা থাকবে না।
আরও পড়ুনঃ কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়
ড্রাগন ফল আমাদের চুল করে ঘন, কালো, উজ্জ্বল । সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আমাদের মেয়েরা সব সময় তাদের ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। ত্বকের পাশাপাশি আপনি কি ঘন, কালো, উজ্জ্বল চুল পেতে চান? তাহলে প্রতিদিন এক গ্লাস অর্থাৎ ২৫০ মিলি দুধের সঙ্গে ড্রাগন ফলের গুড়া মিশিয়ে খান। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান রং করা চুলের ক্ষতি কমায় এবং চুলকে করে কোমল ও উজ্জ্বল।
আপনি কি বুঝতে পারছেন যে ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি পরিমানে রয়েছে? এটি আসলেই একটি পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ ফল।
ড্রাগন ফল আমাদের হাড় মজবুত করে । ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আপনাদের অনেকের বিভিন্ন সময় দেখা যায় হাড়ে বেথায় অস্থির হয়ে যান। এই বেথা কিন্তু এক দিনে সৃষ্টি হয়না। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাবে এই সমস্ত সমস্যা শরীরে দেখা দিতে থাকে। তবে আপনি চাইলে ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে কিন্তু হাড় মজবুত করতে পারেন।
কেননা ড্রাগন ফলে আছে ১৮ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়কে শক্ত করে তোলে ও ভালো রাখে। প্রতিদিন এক গ্লাস ড্রাগন ফলের স্মুদি খেলে হাড়ের ব্যথা কমবে।
সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা । অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য উপকারী
আপনাদের বাসায় যদি কোন অন্তঃসত্ত্বা নারী থাকে তাহলের তাদের জন্যে কিন্তু এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা বলে বুঝানো যাবে না। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ড্রাগন খুব উপকারী একটি ফল। এতে আছে ভিটামিন বি, ফলেট ও আয়রন রয়েছে, যা কিনা খুবই প্রয়োজন এই সময়ে।
ভিটামিন বি ও ফলেট জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শক্তি বাড়ায়। ক্যালসিয়াম গর্ভের শিশুর হাড় গঠন করে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নারীদের মেনোপজ পরবর্তী জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা । ড্রাগন ফল আমাদের মানসিক চাপ দূর করে
ড্রাগন ফল অন্ত্র এবং রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এই ফলটি আপনার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তাই আপনি যদি অধিক পরিমানে মানসিক চাপে থাকেন বা মানসিক চাপ কিছুটা কমাতে চান তাহলে এই ড্রাগন ফল খেয়ে নিজেই দেখে নিতে পারেন ড্রাগন ফলের উপকারিতা আসলেই আছে কি নেই!
ড্রাগন ফল আমাদের চোখের ক্ষেত্রে উপকারি । সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারি ড্রাগন ফ্রুটে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে এই ড্রাগন ফলে। তাই, এই ফল চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন - ছানি পড়ে যাওয়া এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
আপনি নিজে যদি এই ধরনের কোন সমস্যায় পড়ে থাকেন বা আপনার আশে পাশে থাকা মানুষজন যারা রয়েছেন তাদেরকে কিন্তু আপনি চাইলে এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনি চাইলে আমাদের এই পোস্টের লিংক তাঁর সাথে শেয়ার করে দিতে পারেন। তাহলে তিনি নিজেও এখান থেকে জেনে নিতে পারবেন সমস্ত তথ্য গুলো সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ চুল ঘন করার উপায় কি?
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান । সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো এমন ধরণের এমন যৌগ যা আপনার কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল নামক অস্থির অণু থেকে রক্ষা করে, যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং এবং আপনার বার্ধক্যের সাথে তথা, বয়সের সাথে দেহের তারতম্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে।
ড্রাগন ফলে বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। ড্রাগন ফলের সজ্জার (pulp) মধ্যে থাকা কিছু প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো:
- বেটালাইনস: এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লাল ড্রাগন ফলের সজ্জায় (pulp) পাওয়া যায়, এই গভীর লাল রঙ্গকগুলি খারাপ এলডিএল(bad LDL) কোলেস্টেরলকে অক্সিডাইজড বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- হাইড্রোক্সিসিনামেটস: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলির এই গ্রুপটি টেস্ট-টিউব এবং প্রাণী গবেষণায় কার্যকলাপ প্রদর্শন করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
- ফ্ল্যাভোনয়েডস: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের এই বৃহৎ, বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠী উন্নত মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত । সুতরাং এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের জন্য খুব দরকারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একটি বিশেষ গবেষণায় ১৭টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল এবং বেরির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা হয়েছে। যদিও ড্রাগন ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বিশেষভাবে খুব বেশি ছিল না, তবে এটি নির্দিষ্ট ফ্যাটি অ্যাসিডকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বোত্তম বলে প্রমাণিত হয়েছে ।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
এটি এক প্রকার অণু, যা ক্যানসার এবং অকাল বার্ধক্যের মতো রোগের কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমায় ড্রাগন ফল। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এই ফলের নিয়মিত সেবন, রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- সবদিক থেকে ড্রাগন ফল নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে। তবে একটি বিষয়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এই ফল অ্যালার্জির জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সেটা খুবই বিরল। এছাড়াও যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ফল নিয়মিত গ্রহণে অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। তাই তাদের এ ক্ষেত্রে সাবাধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
- এছাড়ও আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে যেসব নারীদের খাবারে অ্যালার্জির কোনো সমস্যা নেই তাদের মাঝে কিছু ক্ষেত্রে, অন্যান্য ফলের সাথে ড্রাগন ফল মিশিয়ে জুস খাওয়ার ফলে অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে যে তাদের রক্তে ড্রাগন ফলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি রয়েছে ।
- এছাড়াও অতিরিক্ত ড্রাগন ফল গ্রহণে এই ধরণের সমস্যা দিতে পারে। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখে ড্রাগন ফল গ্রহন করা উচিত।
- অন্যথায় ড্রাগন ফল আপনার দেহে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই খুব বেশি পরিমাণে ড্রাগন ফল না খাওয়া ই ভালো একটি পরিমাণ মতো এই ফল খেলে আপনি এ থেকে সুফল পাবেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
আপনারা অনেকেই ড্রাগন ফলের স্বাদ নিয়ে চিন্তিত যে ড্রাগন ফলের স্বাদ কেমন হবে বা কিভাবে খাওয়া যায় এই সমস্ত বেপার নিয়ে। ড্রাগন ফল বিশেষ করে ঠান্ডা হয় এবং ড্রাগন ফল ফ্রিজে রেখে তারপর যদি আপনারা খান এতে করে দারুন স্বাদ পাবেন। ড্রাগন ফলের চামড়া বা উপরের রঙিন খোসা খাবেন না। ড্রাগন ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে এটির অত্যধিক সেবনের জন্য আপনার স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে।
আমরা কিন্তু সকলেই জানি যে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিয়ম মেনে পরিমান মতো খেলে আপনারা সকল প্রকার ভিটামিন এই ফল থেকেই পেয়ে যাবেন। তাই ড্রাগন ফলের উপাকারিতা সঠিক ভাবে পেতে হলে নিয়ম মেনে এটি খেতে থাকুন।
শেষ কথা ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কেঃ
ড্রাগন ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং ঔষধি ফল। তাই আপনি নিজে এই ফলের সম্পর্কে ভাল করে জ্ঞান আহরোন করুন এবং অন্যদের সেটি সম্পর্কে জানাতে থাকুন। আপনি যদি মনে করেন এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে এসেছে তাহলে আপনার বন্ধু মহলে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
এছাড়াও আপনারা যারা গুগলে সার্চ করছেন যে ড্রাগন ফলের অপকারিতা, ড্রাগন ফল কিভাবে খেতে হয়, ড্রাগন ফল এর দাম, ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি ২০২২, ড্রাগন ফল কোথায় পাওয়া যায়, ড্রাগন ফল গাছ কোথায় পাওয়া যায়, ড্রাগন ফল গাছ লাগানোর নিয়ম ইত্যাদি। এই পোস্টটি তাদের জন্যে অনেক উপকারি হবে।
যাতে করে এই পোস্টটি পড়ে আপনার মতো তারাও এই ফলের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারেন। আপনি যদি এই ধরনের তথ্যবহূল পোস্ট গুলো পেতে চান। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটার প্রোফাইলে সংযুক্ত হয়ে থাকুন। এতে করে নতুন পোস্ট পাবলিশের সাথে সাথে আপনার কাছে পৌছে যাবে নোটিফিকেশন।
0 মন্তব্যসমূহ