শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

শবে বরাত কি শবে বরাতের নামাজের নিয়ম  শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত এই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। শবে বরাত শব্দের অর্থ খুব সৌভাগ্যের রজনী বা রাত। এই রাতের অনেক ফজিলত। এক রাতের ইবাদতের মর্যাদা হাজার রাতের সমান। 

এ কারণে, আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার ইচ্ছায় শবে বরাত রাতে নফল ইবাদত করতে হয়। এ রাতে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ খালি হাতে কাউকে ফেরান না।

শবে বরাত সম্পর্কে প্রতিটা মুসলমানেরি কম বেশি ধারণা রয়েছে। শবে বরাত পালিত হয় শাবান মাসে। সাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি শবে বরাত। এই দিনটি শাবান মাসের মধ্য রজনী। শবে বরাত এর পরিভাষাটি হল ‘নিসব শাবান বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। 

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম এবং শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত এই সম্পর্কে অনেকেরই মতভেদ রয়েছে। চলুন জেনে নেই শবে বরাত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা।

    শবে বরাত কি?

    শবে বরাত কি

    বর্তমান সময়ে অনেকেই জানতে চাই শবে বরাত কি? ইসলাম ধর্মাবলীর সকল মানুষের কাছে শবে বরাত একটি পরিচিত শব্দ। কারণ, প্রতিটি মুসলমানের কাছে পবিত্র শবে বরাত খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। শবে বরাত পালনের আগে এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই শবে বরাত কি?

    শব শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। শবে বরাত অর্থ সৌভাগ্যের রাত বা রজনী। শবে বরাত অর্থাৎ লায়লাতুল বরাত হিজরে শাবান মাসের ১৪, ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাত। বাংলাদেশের এই রাতটিকে শবে বরাত নামে পালিত হয়। ইসলাম ধর্ম মতে এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। 

    আরও পড়ুনঃ পবিত্র আল কোরআন সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩

    বিষের প্রতিটি দেশের মুসলিমগণ নফল ইবাদত করে থাকে। নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। এই দিনে আল্লাহতালা বান্দার সকল মনের ইচ্ছা পূরণ করে। ধারণ করা হয় এই দিনে নতুন করে ভাগ্য লেখা হয়।

    শবে বরাতের নামাজের নিয়ম:

    প্রতিটা মুসলমানের দায়িত্ব আল্লাহতালার ইবাদত করা। আল্লাহ তালার ইবাদত ছাড়া কোন মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে না। বিশেষ কিছুদিনে ইবাদত করলে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিন হচ্ছে শবে বরাতের রাত। 

    এই রাতের ইবাদতের অনেক ফজিলত রয়েছে। এই রাতে নফল নামাজ পড়তে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই শবে বরাতের নামাজের নিয়ম জানি না। চলুন জেনে নেই শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে।

    শবে বরাত এর নামাজ নফল। নফল নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত করে। এই কারণে শবেবরাতের নামাজ ও দুই রাকাত করে পড়তে হয়। দুই রাকাত পর পর সালাম ফেরাতে হবে। এইভাবে সারারাত নামাজ পড়তে পারেন। 

    কিন্তু অবশ্যই নামাজের নিয়ত থাকতে হবে নফল। কারণ শবে বরাতের সকল ইবাদতে নফল। কিন্তু নফল ইবাদত হলেও এই দিনের ইবাদতের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। 

    শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়:

    শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - শবে বরাত ২০২৩ কত তারিখে

    শবে বরাত সম্পর্কে সকল মুসলমানের কম বেশি ধারণা রয়েছে। এই রাতের মর্যাদা অনেক। রাতে ইবাদত করলে হাজার বছরের ইবাদতের সমান নাকি পাওয়া যায়। তাই এই দিনে সবাই নফল ইবাদত করে থাকে। তবে এই দিনে এবাদত না করলে কোন পাপ হবে না। 

    কারণ এই ইবাদতটি সম্পন্ন নিজের জন্য। করলে অনেক ছোঁয়া পাওয়া যাবে না করলে পাপ হবে না। এই দিনের মর্যাদা আল্লাহতালা অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি করেছেন। এই দিনে সালাত আদায় করলে ফরজ সালাতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তবে এই দিনে সালাতের কোন নির্দিষ্ট রাখাত উল্লেখ নেই।

    অনেকে প্রশ্ন করে, শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়। এই প্রশ্নটি না জেনেই করে থাকে। তবে কোথাও নামাজের পরিমাণ উল্লেখ নেই। নফল সালাত আদায় করতে হবে খুব মর্যাদা সম্পন্ন ভাবে। আল্লাহতালা বান্দা শালা যদি পছন্দ হয় এক রাকাতেই হাজার রাকাতের পরিমাণ সওয়াব দিতে পারেন।

    তাই শবে বরাতের রাতে রাখার হিসাবে তাড়াহুড়া করে নামাজ না পড়ে মর্যাদা সম্পন্নভাবে কম সালাদ আদায় করতে হবে। এছাড়াও সালাতের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে পারেন।

    আরও পড়ুনঃ সহীহ শুদ্ধ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ দেখুন

    শবে বরাতের নামাজ কি সুন্নত না নফল?

    আমাদের অনেকেরই মধ্যে প্রশ্ন থাকে শবে বরাতের নামাজ কি সুন্নত না নফল? সুন্নাতে ইবাদত হচ্ছে যেসব ইবাদত হযরত মুহাম্মদ (সা.) করেছেন। এবং সেসব ইবাদত আমাদের জন্য পালন করা সুন্নত। এইসব এবাদত না করলে আমাদের পাপ হবে। 

    কিন্তু নফল ইবাদত হচ্ছে যেসব ইবাদত আমাদের নিজের জন্য। যা করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু না করলে পাপ হবে না। শবে বরাতের নামাজ নফল। ইবাদত না করলে আমাদের পাপ হবে না। কিন্তু এই ইবাদত করলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। 

    এবং অতীতের গুনাহ আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে মাফ হয়ে যায়। এবং পৃথিবীতে কোন কিছুর প্রয়োজন থাকলে সেটা আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ পূরণ করেন। শবে বরাতের ইবাদত সম্পূর্ণভাবে নফল ইবাদত। যা না করলে কোন পাপ হবে না। 

    কিন্তু ইবাদত না করলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই এ রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা আমাদের দায়িত্ব।

    শবে বরাতের নামাজ কি পড়তে হয় :

    শবে বরাত এই রাতে প্রতিটা মুসলমানের জন্য অনেক গুরুত্বের। এক রাতের ইবাদত হাজার রাতের ইবাদতের সমান। এই রাতে সকল ধরনের ইবাদত করা যায়। আল্লাহ এই দিনে বান্দার সকল মনের ইচ্ছা পূরণ করে। এবং অতীতের করেছে সকল কিছু আল্লাহর কাছে তুলে ধরে মাফ চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। 

    শুধু সেরেকের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে না। শবে বরাত রাতে জিকির করতে হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে শবে বরাতের নামাজ কি পড়তে হয়। অবশ্যই শবেবরাতে নফল নামাজ পড়তে হবে। কারণ, নামাজের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া যায়। 

    সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হচ্ছে নামাজ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন নামাজ বেহেস্তের চাবি। তাই পরকালে বেহেস্ত পেতে হলে অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে। বিশেষ করে শবে বরাতের রাতের নামাজের মর্যাদা অনেক। 

    এই দিনের নফল নামাজের মর্যাদা ফরজ নামাজের সমপরিমাণ। তাই এ রাতে অন্যান্য ইবাদতের সাথে বেশি বেশি সালাত বা নামাজ আদায় করতে হবে।

    শবে বরাতের রোজা কয়টি এবং রোজা রাখা যাবে কি না? 

    হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় শাবান মাসে একটি নফল রোজা বা সিয়াম রাখতে হয়। 

    এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এই তিন দিনে তিনটি নফল রোজার কথা উল্লেখ করেছেন। এই হাদিস মতে শাবান মাসে ও রোজা তিনটি রাখতে পারেন। 

    তবে অনেক হাদিসে এসেছে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার কথা। কারণ, শাবান মাসের পরে রমজান মাস। শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা করলে রমজান মাসে রোজা সহজ হয়ে যায়। এছাড়াও শবে বরাত রাত জাগার পরের দিন নফল রোজা রাখতে পারেন।

    আরও পড়ুনঃ জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি | Jazakallah Khairan Meaning

    শবে বরাতের কত দিন পর রোজা?

    আরবির শেষ মাস শাবান মাস শাবান মাসের পরেই রমজান মাস। রমজান মাসেই রোজা রাখতে হয়। যেহেতু শবেবরাত শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে সেই হিসাবে ১৪ বা ১৫ দিন পরেই রোজা। কারণ, আরবি মাস ২৯ এবং ৩০ দিনে হয়ে থাকে। 

    আরবি মাস গণনা করা হয় চাঁদের হিসাবে। যার ফলে যেদিন চাঁদ ওঠে সেদিন থেকে মাস শুরু হয়। এ কারণে রমজান মাসের চাঁদ উঠলে রোজা শুরু হয়। শবে বরাত এর রাত জাগার পর পরের দিন রোজা করা ভালো। এই দিনের নফল রোজার গুরুত্ব ফরজ রোজার সমান।

    শবে বরাতের আমল এবং আমাদের করণীয়:

    শবে বরাতের রাত পাওয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনেক সৌভাগ্যের। এই এক রাতের ইবাদতের মাধ্যমে হাজার বছরের ইবাদতের সমান সোয়াব পাওয়া যায়। তাই সকল মমিন মুসলমান এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। 

    এই একটি রাতে সকল গুনাহ আল্লাহর কাছে থেকে মাফ চাওয়া যায়। আল্লাহর কাছে ভুল ত্রুটি তুলে ধরে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ মাফ করে দেন। শবে বরাতের আমল এবং আমাদের করণীয় রয়েছে। চলুন জেনে নেই আমল এবং করণীয় সম্পর্কে।

    আমল:

    শবে বরাত হচ্ছে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি। শবেবরাতের রাতের ফজিলত শুরু হয় এশার নামাজের পর থেকে। রাত যত গভীর হয় নামাজের মর্যাদা তত বৃদ্ধি পায়। অনেকে মনে করে যত বেশি রাকাত নামাজ আদায় করব তত বেশি সওয়াব পাব। 

    কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ শুধু নামাজ পড়লেই হবে না। শবে বরাতের সাথে খুব ধৈর্য সহকারে নামাজ পড়তে হবে। দুই রাকাত নামাজ অনেক সময় ধরে পড়লে আল্লাহর কাছে এর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

     হাদিস শরীফে উল্লেখ রয়েছে হযরত আয়েশা সিদ্দিক (রা.) বলেছে, রাসূল (সা.) একবার নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণ তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই কারণে অনেক ধৈর্যের সাথে সালাত আদায় করতে হবে।

    নামাজ পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য আরও ইবাদত করতে হবে। আর এই পথ বলতে বোঝানো হয়েছে কোরআন তেলাওয়াত করা। জিকির করা। এবং আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া এবং দুনিয়ার জীবনের জন্য কিছু চাওয়া। 

    এছাড়াও মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করা। এই রাতে আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছু চাইলে আল্লাহ খালি হাতে ফেরায় না। এই রাতে সালাদের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন মৃত্যুর পর আপনার পক্ষে সাক্ষী প্রদান করবে।

    আরও পড়ুনঃ পবিত্র কোরআনের ৯৯ নির্দেশনা সমূহ

    করণীয়:

    শবে বরাত একটি বিশেষ রাত। এই রাতে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির এর পাশাপাশি বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে। যাতে করে আল্লাহতালা আমাদের পূর্বের সম্পূর্ণ গুনাহ মাফ করে দেন। শবে বরাতের প্রস্তুতি আগের দিন থেকেই নিতে হবে। 

    এই দিনে এবাদত করার সময় ভালো পোশাক পরা প্রয়োজন। এবং শরীর পরিষ্কার থাকতে হবে। আল্লাহতালার সান্নিধ্যদের জন্য সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এই রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। পরিবারের সকলকে আগে থেকেই এই দিনের সংবাদ দিয়ে রাখতে হবে। যাতে করে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে। 

    এই দিন জীবন থেকে একবার চলে গেলে আর কখনোই ফিরে আসবে না। তাই সকলের প্রয়োজন এই রাতের সঠিক ব্যবহার করা। আল্লাহর কাছে হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

    শেষ কথা: শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

    প্রতিটা মুসলমানের কর্তব্য শবে বরাত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখ। কারণ, শবে বরাতের মর্যাদা হাজার বছরের সমান। শবে বরাত রাত্রে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। যাতে করে পূর্বের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে নেওয়া যায়। বর্তমান সময়ের সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য প্রার্থনা করতে হবে। 

    আল্লাহর কাছে এ রাতে যা চাওয়া হয় আল্লাহতালা বান্দার সকল চাওয়া পূরণ করেন। তাই সকলের দায়িত্ব মনোযোগ সহকারে শবেবরাত পালন করা। শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত।

    শবে বরাতের ফজিলত মুখে বলে শেষ করা যাবে না। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ জানেন। আল্লাহ তা'আলা নবী রাসূলের মাধ্যমে আমাদের কাছে কিছু ধারনা দিয়েছেন। 

    এটা একটি ইসলামিক পোস্ট লেখার মধ্যে ভুল হলে আল্লাহতালা আমাকে আপনাকে সকলকে যেন ক্ষমা করে দেন (আমিন)। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ