রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি ২০২৪

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি

ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি পাঁচটি। এর মধ্যে তৃতীয় ভিত্তি রোজা বা সিয়াম। রোজা ফারসি শব্দ। সিয়াম আরবি শব্দ যার অর্থ ভোরের আলো থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পানাহার, পাপাচার এবং সকল ধরনের ভোগ বিলাসিতা থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম। 

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে, রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি? রোজা রেখে সময় নষ্ট করা ঠিক না।রমজান মাস পবিত্র মাস। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে হয়। এই মাসের ইবাদত সকল মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। 

এই মাসে নফল ইবাদত করলে ফরজ ইবাদতের সমান নেকি পাওয়া যায়। এবং আল্লাহ সকল কিছুর নেকি পরিমান উল্লেখ করেছে। কিন্তু রোজা বা সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহ নিজের হাতে দিবেন। এজন্য রোজা রেখে ভুল ধারণের অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকাই ভালো। 

তবে রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি? সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হলো। আমার বিশ্বাস সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে গেম খেলা সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

    রোজা কি?

    রোজা ফাঁসি শব্দ যার অর্থ না খেয়ে থাকা। রোজার আরবি শব্দ সিয়াম। সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। ইসলামের ভাষায় ভোরের আলো ওঠার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পাপাচার, পানাহার এবং সকল ধরনের অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বা  রোজা বলা হয়। 

    আরও পড়ুনঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

    প্রতিটা মমিন মুসলমানের জন্য রমজান মাসের রোজার পালন করা ফরজ। রমজান মাসের সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানো যায়। রোজা বা সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন। এই জন্য রোজার মর্যাদা অনেক।

    রোজা ভঙ্গের কারণ!

    একজন মুসলমানের জন্য রোজার গুরুত্ব কত সেটা বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু অনেক কারণে। রোজা ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, রোজা থেকে কোন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করা যাবে না। কোন ধরনের অন্যায় অপরাধ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। 

    অনেকেই জানতে চাই, রোজা ভাঙ্গার কারণ। রোজা থাকলে অনেক ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। কারণ, একটু ভুলের কারণে রোজা বা সিয়াম ভেঙ্গে যেতে পারে। চলুন জেনে নেই রোজা ভাঙ্গার কারণ কি কি?

    1. ভুল করে কোন খাবার খাওয়ার পরে রোজা ভেঙ্গে গেছে বলে পুনরায় খেলে রোজা ভাঙ্গে।
    2. ধূমপান করলে।
    3. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে।
    4. সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ইফতার করা।
    5. রোজা সরন থাকা অবস্থায় নাকে পানি দেওয়া অথবা গুলি করার সময় পাকস্থলীতে পানি গেলে।
    6. হস্তমৈথুন করলে।
    7. স্ত্রীর সাথে রোজা অবস্থায় সহবাস করলে।
    8. মিথ্যা কথা বললে।
    9. খারাপ কথা বলে গালাগালি করলে।
    10. জুয়া খেললে।
    11. কোন ওষুধ সেবন করলে।
    উপরে যে সব আলোচনা করা হলো এগুলোই রোজা ভাঙ্গার কারণ। এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে। সাধারণত সব কারণেই রোজা ভেঙ্গে থাকে।

    রোজা রেখে গেম খেল হবে কি?

    রমজান মাসের রোজা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ। আর ফরজ ইবাদত না করলে সে মুসলিম কাফের হয়ে যায়। এজন্য সকল ধরনের ফরজ ইবাদত করা ব্যধ্যতামূলক। সকল ইবাদত এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত সালাকত ও সিয়াম। 

    অনেকে প্রশ্ন করে রোজা রেখে গেম খেলা হবে কি? গেম শব্দের অর্থ হচ্ছে খেলাধুলা। ইসলাম একটি পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এখানে সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। কিছু কিছু খেলা রয়েছে যেসব খেলা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে হারাম। 

    ইসলাম ধর্মের মতে যে খেলাধুলায় কোন ধরনের জুয়া থাকবে না এবং শারীরিক ও মানসিক বেকার ঘটবে সেগুলো খেলার রোহিততা রয়েছে। বর্তমান সময়ে সকল ধরনের খেলায় জুয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

    যেসব খেলা খেললে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না সেসব খেলা ইসলামে হারাম। আর হারাম খেলা রোজা থেকে খেললে রোজা হবে না। বর্তমান সময়ে প্রায় সকলেই হারাম জাতীয় গেম খেলে থাকে। এর কারণে রোজার সময় সকল ধরনের গেম খেলা থেকে বিরত থাকায় ভালো।

    আরও পড়ুনঃ রমজানের পবিত্রতা নিয়ে উক্তি বা রোজা নিয়ে কিছু কথা

    রমজান মাস ইবাদতের মাস। আল্লাহ এই মাসে বান্দার সকল মনের আশা পূরণ করে। এবং অতীতে যেসব পাপ করেছে সেসব ক্ষমা করে দেয়। এই কারণে, এই মাসে না খেলে ইবাদত করে রোজা রাখাই মঙ্গলজনক। কারণ সকল মাসের শ্রেষ্ঠ মাস রমজান মাস। 

    এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। তাহলে, সকল ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবেন।

    রোজা রেখে গেম খেলা হারাম না হালাল?

    অনেকের মনে প্রশ্ন ওঠে, রোজা রেখে গেম খেলা হারাম না হালাল। এই বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে কোনগুলো খেলা হারাম কোনগুলো খেলা হালাল। ইসলামে হারাম-হালাল খেলার পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে। চলুন জেনে নেই কোনগুলো খেলা হালাল আর কোনগুলো খেলা হারাম।

    হালাল:

    ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব খেলা সতর ঢেকে ফেলা যায় এবং শারলিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে সেসব খেলায় হালাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেই খেলায় কোন ধরনের জুয়ার ব্যবস্থা না থাকে। এবং হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলা যাবেনা।

    হারাম:

    ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব গেম খেললে সতর ঢেকে রাখা যায় না এবং শারীরিক ও মানসিক কোন ধরনের বিকাশ ঘটে না এবং সেসব খেলায় জুয়ার ব্যবস্থা থাকে সেসব খেলা সম্পূর্ণভাবে হারাম। বর্তমান সময়ে সকলে হারাম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

    সেই কারণে রোজা রেখে গেম খেলা হারাম। কিন্তু কিছু কিছু খেলা বাদ দিয়ে। যেসব খেলা খেললে শারীরিক পরিশ্রম হয় সেসব খেলা খেলতে পারেন। তবে রোজা রেখে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ রোজা রাখার ফলে শরীর দুর্বল থাকে। 

    এই সময় খেলাধুলা করলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যাতে করে রোজার ক্ষতি হতে পারে। শারীরিকভাবে দুর্বল হলে রোজাও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে, রমজান মাস ইবাদতের মাধ্যমে পার করায় উত্তম।

    রোজা রেখে কোন ধরনের গেম খেলা যাবে?

    রোজা রেখে কোন ধরনের গেম খেলা যাবে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। রোজা রেখে কিছু কিছু গেম খেলা যাবে। তবে খেলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোজা রেখে অনেকের শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে তবুও গেম খেলতে হবে। 

    কারণ , বর্তমান সময়ে মানুষের অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়। ব্যায়াম করার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে গেম খেলা। গেম খেললে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। বর্তমানে মানুষের খাবারের সমস্যার কারণে অতিরিক্ত মেদ জমছে। 

    রোজা থেকে তা কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে বিকেলে গেম খেলতে পারেন। খেলার সময় খেয়াল রাখতে হবে সে খেলার মাধ্যমে যেন আপনার শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের বিকাশ ঘটে। রোজা রেখে যেসব গেম খেলা যাবে সেগুলো হলো:
    1. ক্রিকেট
    2. ফুটবল
    3. রেকেট
    4. ভলিবল
    5. হ্যান্ডব
    6. বাস্কেটবল

    ওপরে যেসব খেলার কথা উল্লেখ করা হলো এছাড়াও আরো খেলা রয়েছে যেসব খেলে শারীরিকভাবে ফিট থাকা যায়। কিন্তু এসব খেলার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেন হাটুর উপরে কাপড় না উঠে। কারো ইসলামের হাটুর উপরে কাপড় তোলা জায়েজ নেই। 

    বর্তমান সময়ে অনেকে রোজা রেখে তাস, ক্যারাম, দাবা ইত্যাদি খেলে। এসব খেলা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে হারাম। তাই রোজা থেকে এসব গেম খেলা যাবে না। রোজার সময় ছাড়াও এই গেম খেলা গুলো হারাম। তাই হারাম গেম থেকে সব সময় দূরে থাকাই ভালো।

    রোজা রেখে কম্পিউটার বা মোবাইল গেম খেলা কি জায়েজ?

    বর্তমান আধুনিক যুগ। সকলের কাছে কম্পিউটার বা মোবাইল রয়েছে। মোবাইল বা কম্পিউটারে বর্তমানে অনেক ধরনের গেম রয়েছে। এসব গেম নিয়েই সবাই সারাদিন ব্যস্ত থাকে। বর্তমানে এসব গেমের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব গেম না খেললে থাকতে পারে না। 

    রমজান মাসের রোজার সময় এসব গেম নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে থাকে। অনেকেই জানতে চাই, রোজা রেখে কম্পিউটার বা মোবাইল গেম খেলাস কি জায়েজ। ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব গেম খেললে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে না সেসব গেম সম্পূর্ণরূপে হারাম। 

    আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম / তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ

    এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইলে যেসব গেম খেলা হয় সেগুলো সম্পূর্ণরূপে হারাম। রমজান মাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে ইবাদত করলে সকল মাসের থেকে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। 

    এর কারনে, এই মাসে কম্পিউটার বা মোবাইল গেম খেলে সময় নষ্ট না করে ইবাদতের মাধ্যমে রমজান মাস কাটা নয় উত্তম। জীবন থেকে এই মাস চলে গেলে আর কখনোই ফিরে আসবেনা। তাই এইসব আজেবাজে মোবাইল বা কম্পিউটার গেম খেলে সময় নষ্ট না করে ওই সময়ে ইবাদত করুন। 

    এই মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করলে ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

    রোজা রেখে আমাদের করণীয়?

    রমজান মাস ইবাদতের মাস। এই মাসে আল্লাহ সকল ধরনের বান্দার গুনাহ মাফ করে দেয়। এই মাসে কোরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। এ কারণে, প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কোরআন খতম দেওয়া উচিত। এই মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতে হয়। 

    এতে করে মানুষের অর্থ বৃদ্ধি পায়। রোজা রেখে গরীব মানুষদের ইফতার করালে রোজার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসে সকল ধরনের খারাপ বিরত থাকতে হবে। কারণ, রোজা থেকে কোন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করলে রোজা হয় না। 

    তাই সবসময় সঠিক চলাফেরা করতে হবে। এবং নামাজ রোজা ঠিকমতো করতে হবে। এই মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। কারণ, রমজান মাসের ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ বাকি মানুষ চলার অনুপ্রেরণা পায়। এই মাস থেকে সকলকে শিক্ষা নিতে হয়।

    শেষ কথা: রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি?

    আরবি মাসের ১২টি মাসের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান মাস। এই মাসে কোরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। এবং এই মাসে রোজা পালন করা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ। এই মাস ইবাদতের জন্য শ্রেষ্ঠ মাস। 

    এই মাস ইবাদত করে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া সম্ভব। তাই এই মাসে গেম খেলে সময় নষ্ট না করে ইবাদত করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে কিছু কিছু খেলা রয়েছে যেগুলো হারাম। কিন্তু বর্তমান সময়ে সকলে হারাম গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। 

    এ কারণে রমজান মাসে সকল ধরনের খেলাধুলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনাকে সবাইকে যেন ক্ষমা করে দেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ