থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২৪

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বর্তমান জেনারেশনের মানুষ গুলো হয়তো তেমন একটা জানে না। তবে অনেক মানুষজন এর উপকারিতা না জানলে ও ভেষজ উদ্ভিদ বা ঔষধি পাতা হিসেবে ব্যবহার করে থেকে এবং সকলের নিকট পরিচিত। থানকুনি পাতা আমাদের দেশে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় কেননা এর উপকারিতা অনেক।

থানকুনি পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক তবে সাধারণত এই ঔষধি গাছ লাগাতে হয়না। কেননা  আমাদের বাসা বাড়ির ঝোপঝাড়ে বা এখানে সেখানে আপনা আপনি  বেড়ে ওঠে এই গাছ। থানকুনি পাতায় রয়েছে এমন কিছু ঔষুধি গুণ যা জানলে আপনি ও অবাক হবেন। তাই আপনি যদি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

    কিভাবে থানকুনি গাছ চিনবেন? থানকুনি পাতার ছবি

    আমরা অনেকেই আমাদের বাসার আশে পাশে কিন্তু অনেক ঔষধী গাছ দেখে থাকি বা রয়েছে। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে কোন গাছের দ্বারা কোন ঔষধের কাজ হয়। যেমন অনেক রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত থানকুনি পাতা অনেকেই হয়তো চিনেনা। তারা জানতে চায় থানকুনি পাতা দেখতে আসলে কেমন হয়?

    তাহলে আপনার জন্যে বলছি, যে থানকুনি পাতা হলো গুল্ম জাতীয় ছোট একধরনের উদ্ভিদ বা গাছ। এর পাতাগুলো দেখতে ছোট ও গোল আকৃতির। অনেকটা টাকার কয়েন বা মুদ্রার মতো বা পান পাতার আকৃতির হয়ে থাকে। 

    আর আমাদের আশে পাশে থানকুনি পাতা গুলো সাধারণত পুকুর বা জলাশয়ের ধারে কিংবা ঝোপ ঝাড়ে বা ঘাসে এমন যায়গায় হয়ে থাকে। আপনাদের চেনার সুবিধার জন্যে আমরা নিচে এই থানকুনি পাতার ছবি দেওয়া হলঃ

    থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

    আরও পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

    থানকুনি পাতার উপকারিতা ব্যবহার ও থানকুনি গাছের পরিচয়ঃ

    উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে থানকুনি সম্পর্কে আমরা জানতে পারি যে এর বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica এবং থানকুনি এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক পরিবাবের নাম ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এর বৈজ্ঞানিক পরিবার এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার মনে করেন।

    আর এই থানকুনি সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত,শ্রীলংকা, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে এই উদ্ভিদ সব থেকে বেশি দেখা যায় । ভেষজ ঔষধ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিকসহ অনেক দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রে। আমাদের দেশে ও ঔষধ হিসেবে এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে।

    আপনাদের বুঝার সুবিদ্ধার্থে আমরা থানকুনি গাছের সম্পুর্ণ একটি স্কিনশট শেয়ার করলাম। এতে করে আপনারা খুব ইজিলি এই গাছটি দেখলেই চিনতে পারবেন।

    থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

    থানকুনি পাতার  গুনাগুণ

    • থানকুনি গাছে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
    • মুখের ব্রণ দুর করার কাজে অপরিশীম ভূমিকা পালন করে এই থানকুনি গাছ।
    • মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষতে উপকারী।
    • সর্দির জন্য উপকারী।
    • পেটের অসুখে থানকুনির ব্যবহার আছে।
    • আমাশয়ে ভাল কাজ করে।
    • সাময়িকভাবে কাশি কমাতে সাহায্য করে।
    • গলা ব্যাথার জন্য উপকারি।

    থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা (Benefits of Thankuni Leaves)

    আপনি যদি পরিমান মতো থানকুনি পাতার রস নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনারা অনেক উপকারিতা পাবেন এবং নিজেই সেই পরিবর্তন খেয়াল করতে পারবেন। কেননা থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিশীম। এই থানকুনি গাছ অনেক রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যা কিনা আমরা অনেকেই জানি না।

    থানকুনি পাতা পেটের রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করেঃ

    থানকুনি পাতা পেটের রোগ নিরাময়

    আপনার যদি পেটে কোন ধরনের সমস্যা থেকে থাকে বা হয়ে থাকে যেমন ধরুন হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হয়ে থাকে তাহলে এই থানকুনি পাতার রস কিন্তু অনেক উপকারি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করার কাজে।

    আবার ধরুন আপনার পেট যদি খারাপ হয় তাহলে কিন্তু এই থানকুনি পাতার রস খেলে আপনাদের পেটের অসুখ ভালো হয়ে যাবে। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বলতে গেলে আমাদের একটু সময় লেগে যাবে তাই ধৈর্য্য সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে।

    থানকুনি পাতার মাধ্যমে ঘুমের সমস্যার সমাধানঃ

    বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তবে তাঁর মধ্যে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে ম্যাক্সিমাম মানুষের। আপনাদের যদি রাতের বেলায় ঘুম না আসে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনারা থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

    কেননা থানকুনি পাতার ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান স্ট্রেস অথবা মানসিক চাপ কমিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যদি প্রতিনিয়ত নিয়ম করে থানকুনি পাতার রস খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ঘুমের ব্যঘাত ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।

    মস্তিষ্কের বিকাশে থানকুনি পাতার ভূমিকাঃ

    মস্তিষ্কের বিকাশে থানকুনি পাতার ভূমিকা

    মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে অনেক কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে এই থানকুনি পাতা। এছাড়া ও বর্তমানে এই থানকুনি পাতার ভিতরে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড। 

    আর এর ভিতরে থাকা অ্যালঝাইমার অথবা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কমিয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। তাই আপনি নিয়ম করে এই থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যে।

    থানকুনি পাতার মাধ্যেমে স্ট্রেচ মার্ক কমানোর পদ্ধতিঃ 

    অনেক গবেষনা করে দেখা গিয়েছে যে, থানকুনি পাতা স্ট্রেচ মার্ক কমিয়ে দিতে অনেক সাহায্য করে। আবার এছাড়াও অনেকের মতে, থানকুনি পাতায় ভিতরে থাকা টারপিনয়েড একজন মানুষের শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা নতুন ভাবে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হওয়ার জন্য বাধা দিতে পারে।

    বিভিন্ন ক্ষতের চিকিৎসায় থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ

    আমাদের শরীরের যদি কোন জায়গায় কেটে যায় বা কোন জায়গায় পড়ে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত বের হয়। তাহলে সেক্ষেত্রে আপনারা কিন্তু এই থানকুনি পাতার রস বের করে সেই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেই রক্ত পড়া কমে যাবে। 

    কারণ থানকুনি পাতার ভিতরে রয়েছে Saponins নামের এক ধরনের উপাদান যেটা ক্ষতস্থানের রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। আর এর ফলে দেখা যায় যে, কোন জায়গায় যদি কেটে যায় আমাদের শরীরে তাহলে সেই জায়গায় থানকুনি পাতার রস লাগালে সেই জায়গাটায় শুকিয়ে যাওয়ার জন্য খুব বেশি সময় লাগে না। 

    অনেক কম সময়ের ভিতর শুকিয়ে যায় ক্ষতস্থানে কোন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার বা কোন প্রকার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম পরিমাণে থাকে।

    ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে থানকুনি পাতার উপকারিতা

    ত্বকের যত্ন কিন্তু আমরা সকলেই করি, কিভাবে নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় বা রাখা যায় সেই চেষ্টায় থাকি বিশেষ করে মেয়েরা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই অল্প বয়সে, চেহারায় এক ধরনের বয়স্ক ভাব চলে আসে এর ফলে আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্ত আপনি চাইলে খুব সহজে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন এই থানকুনি পাতার রস ব্যবহার করে।

    আপনি যদি রেগুলার থানকুনি পাতা বেটে তার সাথে মধু কিংবা গোলাপজল মিশিয়ে তার সাথে প্রতিদিন মিশ্রণটি মুখে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, ঠিক ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধান করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

    স্টোমাক আলসার প্রতিরোধে থানকুনি পাতার কার্যকারিতাঃ

    আমরা জানি যে থানকুনি গাছে Asiaticoside নামের এক প্রকারের উপাদান রয়েছে, এটি আমাদের হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটিয়ে থাকে। এর সাথে সাথে স্টমাক আলসারের মতো রোগের প্রকোপ কমিয়ে দেওয়ার জন্য ও বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে।

    শুধু তাই না, পেট খারাপ অথবা আমাদের যদি ডায়রিয়ার হয়ে থাকে তাহলে সেই চিকিৎসার জন্য ও কিন্তু অনেক সময় এই পাতাটিকে কাজে লাগিয়ে এই সমস্ত রোগ গুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই।

    যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    প্রতিটি মানুষ তাঁর নিজের জায়গা থেকে নিজের যৌবনকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। তাই আপনারা যদি নিজেদের যৌবন দীর্ঘ সময়ের জন্যে ধরে রাখতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে থানকুনি পাতার উপকারিতা বলে বুঝানোর মতো না, এটি অনেক বেশী সাহায্য করবে আপনাদের যৌবনকে ধরে রাখতে। 

    থানকুনি পাতা আমাদের যৌবন ধরে রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনারা নিজেদের যৌবন ধরে রাখতে খাবারের তালিকা থানকুনি পাতা রাখতে পারেন বা প্রতিদিন আপনারা থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

    চুল পড়া সমস্যার সমাধানে থানকুনির ব্যবহারঃ

    বর্তমানে মাথার চুল পড়া সমস্যাটা অনেক কমন একটি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে এবং এই সমস্যাটা কিন্তু দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আর এখন বর্তমান সময় দেখা যাচ্ছে যে, অনেক ছোট ছোট বাচ্চাদের চুল পড়ে যাচ্ছে। 

    গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতি সপ্তাহে অত্যন্ত কম করে হলে ও ৩-৪ বার থানকুনির পাতা যদি খাওয়া যায়। তাহলে আমাদের মাথার ত্বকের স্কাল্পের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে দিতে সাহায্য করবে।

    শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করতে থানকুনি পাতার ব্যবহারঃ

    থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।

    গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার সমাধানে থানকুনি পাতার ব্যবহারঃ

    আমরা সময়মতো খাবার-দাবার না খাওয়ার কারণে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে। আপনাদের যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনারা আজকে থেকে সকালের খাবারের রুটিন এর তালিকাতে থানকুনি পাতা রাখবেন। 

    থানকুনি পাতা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক সাহায্য করে থাকে। থানকুনি পাতার উপকারিতা বলতে গেলে অনেক।

    থানকুনি পাতা মানসিক অবসাদ দূর করেঃ

    মানসিক অবসাদে ভুগলে তা দূর করার জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।

    পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতার ভূমিকাঃ

    অনেকেই নানা ধরণের পাকস্থলীর সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন বা ভুগছেন। পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরণের সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে আপনি থানকুনি  গাছের পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে, তার সাথে খানিকটা আনারসের পাতা বেটে হলুদের রস সমন্বিত একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। একটি মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে পাকস্থলির নানা ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। 

    কাশি রোদ করতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    কাশি রোদ করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা

    আপনাদের ভিতরে যাদের অনেক দিন ধরেই কাশি হচ্ছে কিন্তু খুব সহজে সেটা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তাদের জন্য আসলে থানকুনি পাতার রস অন্যরকম ভূমিকা পালন করবে। প্রত্যেক দিন ২ চা চামচ থানকুনি পাতার রস চিনির সঙ্গে যদি মিলিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনাদের কাশি কমে যাবে।

    এই সেবন প্রক্রিয়া ১ সপ্তাহ চালিয়ে যদি যেতে পারেন তাহলে শুকনো কাশি সহ অন্যান্য সকল ধরনের কাশি জনিত সমস্যা দূর হয়ে যেতে থাকবে। তাই নিয়ম করে আপনি চাইলে এই থানকুনি পাতার রস সেবন করতে পারেন।

    অনিদ্রা দূর করতে থানকুনি পাতার ব্যবহারঃ

    ঘুম মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস, সঠিকভাবে ঘুম না হলে একজন মানুষ সকল প্রকার কাজ কর্ম সফল্ভাবে সম্পন্ন করতে পারেনা। এছাড়াও অনিদ্রার সমস্যা আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ করে দেয়। 

    তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ঘুম জরুরি। অনিদ্রার সমস্যা থাকলে তা দূর করার জন্য খেতে পারেন থানকুনি পাতা। প্রতিদিন দুইবার ২-৪ চামচ থানকুনির রস ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে দ্রুত।

    আমাশয় প্রতিকার হিসাবে কাজ করে

    বর্তমান সময়ে এখন কিন্তু অনেক বয়সের মানুষ আছেন যাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি খুব বেশি পরিয়ানে দেখা গিয়ে থাকে।

    কিন্তু আপনারা যদি আমাশয়ের সমস্যাটি হতে মুক্তি পেতে চান, তাহলে আপনাদেরকে প্রতিদিন এই থানকুনি পাতা খেতে হবে।

    সবার আগে আপনাদেরকে কিছু থানকুনি পাতাকে পরিষ্কার করে নিতে হবে আর তার সঙ্গে চিনি মিলিয়ে নিয়ে প্রত্যেক দিন ২ বার যদি খেতে থাকে,

    তাহলে আপনারা অনেক সহজেই আমাশয় হতে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

    জ্বর সারাতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    আমাদের অনেকেরই সময় অসময়ে কিন্তু জ্বরে পড়ার মতো একটা খারাপ অবস্থায় পড়তে হয় হঠাত করেই। তাই আপনি চাইলে এই সময়তে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। তাহলে আপনাদের এই রকমের জ্বর হতে অনেক সহজেই মুক্তি পেয়ে যাবেন।

    এর জন্য ১ চা-চামচ থানকুনি পাতার রস আর ১ চা-চামচ শিউলি পাতার রস এক সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এরপরে প্রত্যেক দিন সকাল বেলা খালি পেটে যদি খেতে পারেন তাহলে সেরে যাবে আর শরীরের দুর্বলতা অনেকটাই কমে যেতে থাকবে।

    দেহের রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    আপনারা হয়তোবা অনেকেই জেনে থাকবেন যে থানকুনি পাতার রস শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। থানকুনি পাতায় উপস্থিত নানা মিনারেল এবং উপকারী উপাদান এর কারনে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। যে কারণে থ্রম্বোসিস এর মতো রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

    তাছাড়া রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার একেবারেই উচিত নয় কারণ এমনটা ঘটলেই রক্তের প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে ফলে হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের যেমন মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তেমনি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। তাই থানকুনি পাতার রস নিয়ম মেনে খাওয়া ও জরুরি।

    পেট এবং লিভার ভালো রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    আপনাদের মাঝে যারা যারা পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে একটি পাকা কলার সঙ্গে কিছু থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এভাবে নিয়মিত খেলে তা আপনার পেটের স্বাস্থ্য এবং লিভার দুটোই ভালো রাখবে।

    ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    আপনারা যদি বেশি পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার সাথে সাথে যদি আপনারা থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনারা আপনাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন খুব সহজেই।

    হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  কোথাও কেটে গেলে সেখানে থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে অনেকাংশে সেই ক্ষত সেরে যায়।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ

    আপনার কি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে? অথবা আপনাদের পরিচিত জনদের ভেতরে কেউ যদি এমন সমস্যায় থাকে তাহলে নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি যদি খাবারের তালিকায় থানকুনি পাতা রাখেন তবে আর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে হবে না।

    ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থানকুনি পাতার উপকারিতা (Controls Blood Pressure)

    ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থানকুনি পাতা খেতে হবে (Thankuni Pata Medicinal Uses In Bengali)। কারণ, এতে উপস্থিত নানা উপকারী উপাদান রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে হার্টের দেখভালেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। বিশেষ করে Atherosclerosis, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো রোগকে দূরে রাখতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

    থানকুনি পাতার অপকারিতা 

    • আমরা সকলেই জানি যে কোন খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। থানকুনি পাতার ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবেন না এতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    • অনেকেই আছে থানকুনি পাতা খেতে পারে না। যারা পারে না তারা জোর করে কখনো খাওয়াবেন না  এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
    • প্রয়োজনের অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।
    • যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা  এ পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। অন্যথায় সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
    • অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে শরীরে খোস পাচরাসহ, মাথা ঘুরা এবং এলার্জি জনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে তবে সবার না যাদের আগে থেকে এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা সাবধানে খেতে হবে।
    • যাদের আগে থেকে যে কোন কিছুর অপারেশন করা আছে তাদের থানকুনি পাতা না খাওয়ায় ভাল।

    থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম 

    থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে, তবে অনেকেই চিন্তা করেন কিভাবে খাবেন এই ঔষধটি? আপনার জন্যে বলে রাখছি এই থানকুনি পাতার রস খাওয়া তেমন বিশেষ কোন নিয়ম নেই।
    • আপনি ভাল ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে রস করে মধু দিয়েও খেতে পারেন।
    • আপনি থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। অথবা শুধু পাতা ও চিবিয়ে খেতে পারেন। 
    • থানকুনি পাতা দিয়ে ভর্তা, বানিয়ে ভাতের সাথে খেতে পারেন। 
    • আবার অনেকে থানকুনি পাতা দিয়ে  বড়ি বানিয়েও খেয়ে থাকেন।
    • আবার থানকুনি পাতা শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে ও খেতে পারেন। 
    • অনেকে আবার থানকুনি পাতা দিয়ে বড়া ও বিভিন্ন রেসিপি বানিয়ে ও খেয়ে থাকেন। 
    • থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে ও খেতে পারেন।
    • সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার রয়েছে।
    যেহেতু আপনি থানকুনি পাতা বিভিন্ন রোগের নিরাময় এর জন্য খাবেন। তাই আপনি যেভাবে ইচ্ছা খেতে পারেন।

    থানকুনি পাতার ক্ষতি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Thankuni Pata Side Effects)

    সকল প্রকার জিনিসের কিছু না কিছু কম বেশি পতিক্রিয়া থাকে। আপনি নিয়মিত ১-২ চামচ থানকুনি পাতার রস (Thankuni Pata) বা অল্প করে কাঁচা থানকুনি পাতা খেলে কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলেই বিপদ! সেক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা (Side Effects) দেখা দিতে পারে।
    1. মারাত্মক পেটে যন্ত্রণা হতে পারে।
    2. মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
    3. চুলকানি এবং অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
    4. হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
    5. যাঁরা হেপাটাইটিস বা অন্য কোনও লিভারের রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয় (থানকুনি পাতার ক্ষতি)।
    6. আগামী দু’সপ্তাহে যদি কোনও অপারেশন থাকে, তা হলেও থানকুনি পাতা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

    থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

    থানকুনি পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি গ্রাম অঞ্চলে এটির এখনো কিন্তু বেশ সহজ লভ্যতা রয়েছে। আপনি চাইলে খুব সহজেই এই পাতা সংগ্রহ করতে পারবেন আপনার গ্রামের বাড়ির বন জঙ্গলে বা পুকুরের ধারে।

    এছাড়াও বর্তমানে বাজারে এবং বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর গুলোতে থানকুনি পাতা খুব সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং চাহিদা কে কেন্দ্র করে অনেকে থানকুনি পাতা চাষ করছে।

    থানকুনি পাতা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQ)

    জেনে নিন থানকুনি পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ নিয়ে লেখা কিছু সাধারন প্রশ্নের উত্তর –

    হবু মায়েরা কি থানকুনি পাতা খেতে পারেন?

    প্রেগন্যান্সি সময় আদৌ থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত কিনা সেই নিয়ে কোনও আধুনিক গবেষণা হয়নি। তাই এই বিষয়ে একজন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই ভাল।

    থানকুনি পাতা খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়?

    তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এমন ধরণা রয়েছে যে, নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে নাকি লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে। তাই এই বিষয়ে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে ভুলবেন না যেন!

    ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতাকে কি কাজে লাগানো যায়?

    সপ্তাহে বারতিনেক থানকুনি পাতার পেস্ট (Thankuni Leaf Benefits In Bengali) মুখে লাগালে দাগ-ছোপ দূর হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Saponins নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়ার কারণে জেল্লাও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।

    থানকুনি পাতা খেলে কি হয়?

    সময়ের সাথে সাথে মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে, মানুষ এখন ভেষজ উপাদানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

    ভেষজ উপাদান খাওয়ার ফলে, আমাদের শরীরে রক্ত বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভবনা কমে যায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে মানব শরীরে সর্বএ  স্তরে অক্সিজেন পৌঁছে যায়। থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রান্তে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে।

    শেষ কথাঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

    থানকুনি পাতার উপকারিতা আসলে বলে শেষ করা যাবেনা। আপনারা যদি উপরের পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ন্টা জানতে পারবেন।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ