জাফরান তেলের উপকারিতা, জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম

জাফরান তেলের উপকারিতা, জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম

জাফরান তেলের উপকারিতা, জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম=> জাফরান সকলের কাছে পরিচিত। জাফরান খুব মূল্যবান একটি মসলা। যা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে।জাফরান খুব দুর্লভ ভেষজ উদ্ভিদ। যার ফলে এর দাম অনেক। বিশ্বের মধ্যে জাফরান উৎপাদনে পাকিস্তানের নাম উল্লেখযোগ্য। জাফরান মসলা ছাড়াও তেল হিসেবেও পাওয়া যায়। 

জাফরান তেলের উপকারিতা, জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম সকলের জেনে থাকা প্রয়োজন। কারণ, জাফরান তেলের অনেক উপকার কিন্তু সেই সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেয়। দিন দিন জাফরান দিলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষ সুন্দরের পূজারী। তাই সুন্দর হতে সব কিছুই করতে পারে। জাফরান তেল সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও মাথার চুল পড়া বন্ধ করে। নিয়মিত জাফলং খাওয়ার হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। চলুন জেনে নেয়, জাফরান তেলের উপকারিতা এবং জাফদের ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।

    জাফরান কি?

    জাফরান খুব মূল্যবান মসলা। যা খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে। জাফরান সাধারণত কেশর নামে পরিচিত। জাফরান ফুলের মাঝখানের সীসার মত লম্বা যে অংশ থাকে সেটাই কেশর। এই অংশ অনেক স্বাস্থ্যকর এবং ঔষুধি গুন সম্পন্ন। বিশ্বের যত ধরনের মসলা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল জাফরান।

    জাফরানের চাষ করা হয় ভারত, পাকিস্তান ও চিনে। সবচেয়ে উন্নত মানের জাফরান পাকিস্তানি পাওয়া যায়। জাফরান উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হাতের মাধ্যমে করা হয়। যার কারণে এর দাম বেশি হয়ে থাকে। জাফরান ফুল থেকেই জাফরান তেল তৈরি করা হয়।

    আরও পড়ুনঃ আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

    জাফরান তেল দেখতে কেমন?

    জাফরান তেল দেখতে কেমন

    জাফরান অনেক মূল্যবান একটি তেল। জাফরান তেল দেখতে সাদা বর্ণের হয়। ঠিক লোশন এর মত।জাফরান তেল রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করা হয়। জাফরান তেলের স্বাদ মিষ্টি । কিছুটা জটিল আকৃতির স্বাদ রয়েছে। জাফরান তেল মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করার পাশাপাশি মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

    জাফরান তেলের পুষ্টিগুণ:

    জাফরানের রয়েছে ম্যাংঙ্গানিজ, এন্টি ফাংগাল এজেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি যা সাধারণ মধ্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও জাফরানে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন এর উপাদান। বিশেষ করে ভিটামিন সি রয়েছে। 

    যা শরীর ও ফেইস থেকে ইনফেকশন দূর করে। এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জাফরান তেলে এন্টিমুটাজেনিক এবং অ্যান্টিসেপটিফ এজেন্ট যা টক্সিকেশন ছড়িয়ে কিনের সেনসিটিভিটি দূর করে এবং লাবণ্যময় চেহারা এনে দেয়।

    জাফরানে থাকা অ্যান্টি সোলার রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করে এবং সানবান থেকে ফেইস কে রক্ষা করে। এছাড়াও মশ্চারাইজার হিসেবে ত্বকের খুব ভালো কাজ করে।

    জাফরান তেল এর উপকারিতা:

    জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও জাফরানের স্বাস্থ্য গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিয়মিত জাফরান খাবার হলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। জাফরানের উপকারিতা কি কি কি নিম্ন তুলে ধরা হলো:
    1. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
    2. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
    3. নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
    4. জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
    5. শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি ঘটায়।
    6. অনিদ্রা দূর করে।
    7. দাঁতের ব্যথা দূর করে।
    8. দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
    9. শারীরিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
    10. গ্যাস প্রতিরোধ করে।
    11. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
    12. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
    13. কিডনি ভালো রাখে।
    14. মেয়েদের মাসিক জনিত সমস্যা সমাধান করে।
    15. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
    16. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং চুল লম্বা করে।
    জাফরান আমাদের কাছে অনেক পরিচিত। কিন্তু জাফরান যে কত উপকারী পদার্থ অনেকেরই জানা নেই। উপরে যে সব আলোচনা করা হলো, জাফরান খেলে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এসব কারণে জাফরান কে সকল অসুখের ঔষধ বলা হয়।

    জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম:

    জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম

    জাফরান তেল অনেক গুণসম্পন্ন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দামি তেল হিসেবে ধরা হয় জাফরানকে। জাফরান তেলের অনেক ব্যবহার রয়েছে। নিম্নে জাফরান তেল কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় এবং ব্যবহার বিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
    1. চুলের যত্নে
    2. ত্বকের যত্নে
    3. দাঁতের ব্যথা নিরাময় করতে
    4. ব্যথা নিরাময় করতে

    চুলের যত্নে:

    হ্যালো আলসে এখন বোঝনাবর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা মাথার চুল পড়া। অল্প বয়সেই মাথায় চুল পড়ে অনেকের মাথায় টাক পড়ে গিয়েছে। এবং অনেকের চুলের আগা ফেটে যায়। এবং চুল দুর্বল হয়ে থাকে। এই সমস্যার সমাধান অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। 

    এসব সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো ওষুধ হচ্ছে জাফরান তেল। এসব সমস্যা যদি আপনার থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই জাফরান তেল ব্যবহার করতে পারেন। জাফরান তেল ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে। প্রথমে আপনার মাথা শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

    তারপর জাফরান তেল মাথার তালুতে দিতে হবে। তেল দেওয়ার পর কিছুক্ষণ মাথা মেসেজ করতে হবে। কারণ, মাথা মেসেজ করার ফলে তেল গুলো চুলের গোড়ায় যায়। এবং মেসেজ করার ফলে মাথার কোষগুলো সতেজ হয়। এইভাবে নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে জাপান তেলের উপকারিতা সহজে বুঝতে পারবেন।

    ত্বকের যত্নে:

    প্রতিটা মানুষেরই স্বপ্ন থাকে নিজেকে সবার কাছে সুন্দর দেখানো। এর জন্য অনেক টাকা খরচ করে রূপচর্চা করে থাকে। কিন্তু এতে করে সৌন্দর্য কিছুদিন থাকে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ত্বকের অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবং অনেক সময় ত্বক ক্যান্সার হয়। 

    এ সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য জাফরানতেল ব্যবহার করতে পারেন। জাফরান তেল জাফরান ফুল থেকে তৈরি করা হয়। যার ফলে জাফরান তেল প্রাকৃতিক তেল হিসেবে গণ্য করা হয়। আপনি যদি তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। 

    ত্বক যদি আপনি ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে চান তাহলে অবশ্যই জাফরান তেল ব্যবহার করুন। এছাড়াও তেল ব্যবহারের পাশাপাশি জাফরান খেতে পারেন। এতে করে বেশি উপকৃত হবেন। জাফরান খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, এক গ্লাস দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে সেবন করুন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ভেতর থেকে বৃদ্ধি করে।

    ব্যথা নিরাময় করতে:

    জাফরান তেল ব্যবহার করলে ব্যাথা নিরাময় হয়। আমাদের কম বেশি সকলেই শরীরে ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথা দূর করতে জাফরান তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাফরান তেল ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, যেসব স্থানে ব্যথা হয় ওই স্থানগুলোতে জাফরান তেল একটু গরম করে লাগাতে পারেন। 

    এতে করে জাফরান এ থাকা এন্টিবায়োটিক ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদি মতে জাফরান তেলে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। যা সকল সমস্যার সমাধান করতে ভূমিকা রাখে।

    আসল জাফরান চেনার উপায়:

    আসল জাফরান চেনার উপায়

    জাফরান একটি মূল্যবান মসলা। যার কারণে মসলাটি নকল করা হচ্ছে। বাজার থেকে দেখেশুনে না কিনলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জাফরান রান্নার স্বাদ ও গন্ধ বাড়ায়। তার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগ ভালো করে থাকে। তাই অবশ্যই জাফরান কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাই জেনে নিন কিভাবে আসল জাফরান চিনবেন।

    ভারতের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউট আসল জাফরান চেনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখানো হয়েছে দুইটি কাচের গ্লাস বা বাটি নিতে হবে। তারপর ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পানি গরম করে নিতে হবে। তারপর সমান পরিমাণ পানি দুই বাটিতে রাখতে হবে। 

    গরম পানি রাখার পর দুই বাটিতেই আসল জাফরান প্রথম বাটিতে এবং দ্বিতীয় বাড়িতে নকল জাফরান দিতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ দেরি করতে হবে। দেরি করার পর প্রথম বাটির পানি হলুদ বর্ণ ধারণ করবে এবং যে পাত্রে নকল জাফরান রয়েছে তার রং লাল বর্ণের হবে। 

    এইভাবে বাসায় আসল জাফরান পরীক্ষা করতে পারবেন। যে জাফরানের রং হলুদ বর্ণের হবে সেটাই হবে আসল জাফরান।

    জাফরানের দাম:

    জাফরান একটি উন্নতমানের মসলা। যা খাবারে ব্যবহার করার সাথে সাথে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।জাফরান যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমন ঔষধি গুণও রয়েছে। যার ফলে এর দাম একটু বেশি। এছাড়াও জাফরান তৈরির প্রক্রিয়া অনেক জটিল। এছাড়াও এর উৎপাদন অনেক কম হয়ে থাকে। 

    যে কারণে কৃষককে অনেক দামে বিক্রি করতে হয়। বর্তমান সময়ে এক কেজি জাফরান এর মূল্য ১ লাখ টাকার মত। তবে এ দামের কম বেশি হয়ে থাকে উৎপাদন এবং জায়গা ভেদে। 

    জাফরান এর পাশাপাশি জাফরান তেলের অনেক দাম। ১০০ মিলি জাফরান তেলের দাম প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। জাফরানের দাম এত বেশি হওয়ার ফলে অনেক মানুষ এর স্বাদ গ্রহণ এবং ব্যবহার করতে পারে না। 

    শেষ কথা:জাফরান তেলের উপকারিতা, জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম

    এতক্ষণে হয়তো আপনারা জাফরান তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। জাফরান তেল বিশেষ করে চুলের যত্নে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জাফরান মসলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার করা হয়। জাফরান খাবারের স্বাদ এবং সুঘ্রাণ বাড়ায়। জাফরান নিয়মিত খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে। 

    দিন দিন জাফরান তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, বর্তমান সময়ে মানুষের চুল পড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা একমাত্র ওষুধ হিসেবে জাফরান তেল ব্যবহার করা হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ