আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা => আদা মানুষের শরীরের জন্যে এতো উপকারী একটি  জিনিস যার উপকারিতা বলে শেষ করার মতো না। কেননা আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিদ্যমান। যার কারণে সব বয়সী মানুষ আদা খেতে পারেন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা–মধু–জল সুস্থ দেহ ও সতেজ মনের জন্য খুবই কার্যকর।

আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আদার গুনাগুন ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে নিবো। তাই আপনারা যারা আদার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন মনযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।

    আদা কি? (ginger)

    আদা কি? ginger

    আদার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে যে আদা আসলে কি? আমরা সকলেই আদাকে একটি মসলা হিসাবে জেনেছি এবং এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে ঠিক মসলা নামেই। আদা মসলা হিসাবে পরিচিত হলেও এর রয়েছে নানাবিধ ভেষজ গুনাগুন এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এই আদাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বি কমপ্লেক্স।

    এছাড়াও আছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সিলিকন, সোডিয়াম, আয়রন, দস্তা, ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খনিজ উপাদান। এ সকল উপাদান দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ও উপকারী। আর তাইতো আদা উপকারিতাও বহুগুন।

    আদা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

    আদাতে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। আপনি যদি নিয়ম করে রেগুলার আদার রস খেতে পারেন তাহলে নানা রকম রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পারেন খুব সহজেই। আর তাই এখন নিচে আমরা আলোচনা করব যে আদা  খাওয়ার উপকারিতা কি কি?

    মাইগ্রেন ও সাইনাস এর জন্য আদার উপকারিতা

    আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যাদের মাইগ্রেন ও সাইনাসের সমস্যা রয়েছে। আপনারা নিয়মিত আদা চা খেয়ে দেখতে পারেন, এতে করে আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে। কেননা বিভিন্ন  গবেষণায় দেখা গেছে আদা মাইগ্রেন ও সাইনাসের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।

    কাশি ও গলা ব্যাথায় আদার কার্যকরীতা:

    আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যাদের কাশি ও গলা বেথার মতো সমস্যা লেগেই থাকে। তবে এই কাশি ও গলা ব্যথা কমানোর সহজ সমাধান হচ্ছে আদা। গলায় যদি কফ জমে এবং কাশি বাড়তে থাকে তাহলে বেশি করে আদা খান। এটা কফের জীবাণুকে ধ্বংস করে কাশি কমিয়ে আনবে। ঠান্ডার কারণে গলায় যে ব্যথা হয়, তা আদা কমিয়ে আনে। 

    আমাশয়, পেটফাঁপা ও পেটব্যাথা:

    অনেকের দেখা যায় বিভিন্ন  ধরনের সমস্যা পেটে লেগেই থাকে যেমন ধরুন আমাশয়, পেটফাপা ও পেটব্যাথ ইত্যাদি। যারা অনেক দিন যাবত এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যে আদার রস একটু কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

    হাঁপানি ও ফুসফুসে সংক্রমণ:

    ফুসফুসের জন্য আদা ব্যাপকভাবে কার্যকরী। যাদের হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে গরম পানি, আদার রস, মধু ও লেবুর রস একসাথে খেলে হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা কমতে থাকে। তাই হাপানি ও ফুসফুসের মতো রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে আদার গুরুত্ব অপরিশীম।

    অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথা:

    শরীরে হাড় ও বাতের ব্যাথা যাদের রয়েছেন একমাত্র তারাই জানেন যে এই রোগের কষ্ট কি পরিমানে হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এই রোগগুলো সাধারণত পানি কম খাওয়া এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য হয়ে থাকে। 

    আর এই সমস্ত রোগ সারাতে আদার কার্যকারিতা অপরিশীম, কেননা আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম।

    পেটের সমস্যায় ও গ্যাস্ট্রিকে আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

    বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষের পেটের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিকের মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আর তাই আপনি চাইলে পেট খারাপের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে আদা ব্যবহার করতে পারেন। তবে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন আদা খাওয়ার পরিমানটা যেনো ঠিক থাকে, বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।

    ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদার ভূমিকাঃ

    মানুষের দেহে অতিরিক্ত শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারনে এখন অনেককেই ইনসুলিন নিতে হয় এটিকে কন্ট্রোল করার জন্য। তবে আপনি চাইলে এক টুকরো আদার মাধ্যমে আপনি এই ইনসুলিনকে আপনার দেহে তৈরি করতে পারেন প্রাকৃতিকভাবে।

    মূত্রজনিত সমস্যা সমাধানে আদার ভূমিকাঃ

    যাদের মূত্রজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে বা ভুগছেন তাদের জন্যে প্রয়োজন ভিটামিন বি-৬। আর এই আদায় রয়েছে ভিটামিন-বি৬। যা আপনার মলমূত্রজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

    আদা মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ

    আমাদের মাঝে যারা মেয়েরা রয়েছেন তাদের প্রতি মাসে মাসে কিন্তু একবার অসহ্য বেথা সহ্য করতে হয়। সহজ বাংলা কথায় বলতে গেলে মাসিকের বেথা অনুভব করতে হয়। আপনি যদি চান তাহলে  প্রাকৃতিকভাবে এই ব্যাথা অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারেন আদার মাধ্যমে। আদায় থাকা প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মেয়েদের মাসিকের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

    ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারিতাঃ

    যারা ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত রয়েছেন তারা আদা খেতে পারেন। আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ শরীরকে গরম করতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে এবং এর ঝুঁকি কমায়।

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ক্ষত দূর করতে:

    প্রতিনিয়তই কারো না কারো বিভিন্ন ভাবে রোগের মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছে বা শরীরের ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। আপনি চাইলে আদা সেবনের মাধ্যমে অনেকটা উপকার পেতে পারেন। আর তাই আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান দ্রুত ক্ষত সারাতে কাজ করে। বমি বমি ভাব কমাতেও আদা অনেক কাজ করে।

    উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

    আদা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে আদার নিয়মিত আদা খেয়ে দেখতে পারেন মধু ও গরম পানির সাথে এবং এক টুকরো লেবু সাথে মিশ করে খেতে পারেন। এতে করে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়।

    ত্বকে সমস্যা

    ত্বকে সমস্যা সৃষ্টির জন্য বাইরের ধুলোবলি কিংবা রোদ তো দায়ী থাকেই, সেইসঙ্গে দায়ী থাকে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও। পরিমানের অধিক কোন কিছুই ভাল না, তাই আদা খেতে চাইলে সেটিও পরিমান মতো খেতে হবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা।

    কতটুকু আদা খাবেন

    আপনি চাইলে প্রতিনিয়ত ১.৫ মিলিগ্রাম আদা খেলেই যথেষ্ট। বিশেষ করে গর্ভবতী অবস্থায় এর বেশি আদা খাওয়ার কারণে দেখা দিতে পারে মিসক্যারেজের ঝুঁকি। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আদা খেতে হবে।

    আদা খাওয়ার উপকারিতা ভিডিও সহ

    আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়বেন তাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এখানে। তবে এরপরেও যদি কেউ আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে ভিডিও দেখতে চান তাদের জন্য নিচে ভিডিও দেওয়া হলঃ

    আদার খাওয়ার অপকারিতা

    আদার যেমন উপকারিতা অনেক পাশাপাশি এর অপকারিতাও আছে। অতিরিক্ত কোন জিনিস গ্রহণই ভালো নয়। সব কিছুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকে গ্রহণের ক্ষেত্রে। তাই আদার অপকারিতা সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে এবং কি কি সময় আদা খেলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। আদার অপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলঃ

    গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়ার নিয়মঃ

    আমরা জানি যে গর্ভাবস্থায় একজন মেয়েকে তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্যে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। এই সময় তেমন ঔষধ সেবন পর্যন্ত করা যায় না ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া। তাই আপনি যদি একজন গর্ভবতী নারী হয়ে থাকেন, তাহলে আদা রস খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথা পরামর্শ করে নিতে পারেন।

    বিশেষ কোন ঔষুধ নিয়মিত গ্রহণ করলেঃ

    ডায়বেটিস রোগীদের জন্য আদা সেবন করা উচিত না। কারন আদা ইন্সুলিন এর পরিমান কমিয়ে দেয়, এতে করে ডায়বেটিস রোগীদের সমস্যা হতে পারে। 

    দীর্ঘ সময় যাবৎ ফ্রিজে আদার সংরক্ষণঃ

    আপনি যেকোন জিনিস ফ্রিজিং করে রেখে খেতে গেলে লক্ষ করে দেখবেন পূর্বে মতো টেস্ট আর নেই। আর এটি আদা ক্ষেত্রে অনেক বেশি হয়, আদা ফ্রিজে রেখে খাওয়া একদম উচিত নয়।

    এলার্জির সমস্যায় আদাঃ

    যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের তারা আদা বেশি খেলে তা শরীরের মাত্রাতিরিক্ত চুলকানি ও কোথাও কোথাও শরীর ফুলে যেতে পারে। তাই এলার্জির সমস্যায় আদা কম খাওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

    কাশি কমায়, কফ দূর করেঃ

    প্রতিদিন দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে কাশি কমে, কফ দূর হয়। কাশি নিরাময়ে আদা অনেক বেশি কার্যকরী একটি ভূমিকা পালন করে থাকে।

    চুলের যত্নে আদার উপকারিতা

    চুলের যত্নে আদার উপকারিতা

    মেয়েরা চুলের যত্নে বা নিজের শরীরের যত্ন নিতে কিন্তু ভুল করেনা। কারন সবসময় তারা নিজেদের সুন্দর পরিপাটি করে রাখতে বেশি পছন্দ করে থাকে। আর তাই আপনারা আদা দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন বা চুলের যত্নে আদার উপকারিতা কি কি সেটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
    • হেয়ার ফলের মাত্রা কমে।
    • খুশকির প্রকোপ কমে
    • চুলকে আদ্র রাখে
    • চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
    • চুল উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে
    • চুলের গ্রাথ বাড়াতে কাজে আসে

    আদা খাওয়ার নিয়ম

    আদা খাওয়ার নিয়ম

    প্রতিটি জিনিস কিন্তু খাবার কিছু নিয়ম বা পরিমান থাকে। আপনি যদি পরিমানের অধিক কোন কিছু করে থাকেন সেটি সুফলের চাইতে খারাপ দিকটাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়। তাই আজকে আপনাদের মাঝে আদা খাইয়ার কিছু নিয়ম কানুন নিয়ে নিচে কথা বলবো।

    দিনে ১৫ গ্রাম রসের বেশি খাওয়াঃ

    আমরা জানি যে অতিরিক্ত আদা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই প্রতিদিন ১৫ গ্রাম রসের বেশি খাওয়া উচিত নয়।

    রুচি বৃদ্ধিতে আদার উপকারিতাঃ

    আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যাদের খাবারে রুচি অনেক কম থাকে এবং বমি বমি ভাব হয়। আপনারা যারা এই সমস্যা ভুগছেন তারা লবনের সাথে আদার রস  মিশ্রিত করে খেতে পারেন। এতে করে আপনাদের রুচি বৃদ্ধি পাবে।

    আদা চা খাওয়ার উপকারিতাঃ

    আদাকে শুকিয়ে গুড়া করে মধু ও আমলকীর গুড়া দিয়ে প্রত্যেকদিন তিনবার করে চা খেলে কফের সমস্যা ও অতিরিক্ত কাশি দূর হয়।

    আদার জুস খাওয়ার উপকারিতাঃ

    আদার রস, মধু, গরম পানি, ও লেবুর রস একসাতে মিশিয়ে চায়ে মতো করে প্রতিদিন দুইবেলা খেলে অনেক ধরণের উপকার পাওয়া যায়।


    আপনি যদি উপরের দেওয়া টিপস গুলো ফোলো করে থাকেন তাহলে আশা করি আপনার আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে চিন্তা থাকবে না।

    আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারবেন। আর এই ধরনের নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ