আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত কোন দেশে

আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত কোন দেশে

পবিত্র আল আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস সারা পৃথিবীর মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত অনেকে জানতে চাই। আল আকসা মসজিদের স্থানটিকে ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আচ্ছে। 

ইহুদিদের কাছে আলা আকসা মসজিদ টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। ইতিহাস বিদদের মতে, বছরের পর বছর ফিলিস্তান ইসরাইল দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে এই পবিত্র মসজিদ।

প্রচলিত বিভিন্ন তথ্য মতে, মসজিদ নির্মাণ করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৯৫৭ সালে। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদ হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরেই মুসলিম জাতির কাছে পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ। আল আকসা মসজিদ অবস্থিত ফিলিস্তিনে। 

নিম্নে, আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত এবং এর সম্পূর্ণ ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

    আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত?

    আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত

    আল আকসা মসজিদ পৃথিবীর তৃতীয় পবিত্র স্থান। মুসলমানদের কাছে আল আকসা মসজিদ অনেক পবিত্র একটি স্থান। আল আকসা মসজিদ অবস্থিত ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র জেরুজালেম শহরে অবস্থিত। এই মসজিদটি অনেক প্রাচীন।

    আরও পড়ুনঃ রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি

    এই মসজিদে নির্মাণ করেন হযরত সুলাইমান (আ)। মক্কা শরীফের পরই আল আকসা মসজিদ মুসলমানের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

    মসজিদে আকসার ভিত্তি কে স্থাপন করেন?

    খ্রিষ্টানরা আল আকসা মসজিদের স্থানকে তাদের পাবিত্র স্থান মনে করে। আল আকসায় অসংখ্য নবী রাসুলের স্মৃতি জড়িত এবং অসংখ্য নবী রাসুলের সমাধি এখানে বিদ্যমান। আল আকসা মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অনেকের  অজানা। 

    আল আকসা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ) কত্রিত। কাবা শরীফ নির্মাণের ৪০ বছর পর। তার নাতি হযরত ইয়াকুব (আ) প্রসিদ্ধ শহর জেরুজালেমে মসজিদ আল আকসা স্থাপন করেন। 

    প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর ইন্তেকালের কয়েক বছর পর ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের দখলে আসে। এই মসজিদ দেশ স্থাপনের প্রথম দিকে মুসলমানদের কেবলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

    ইসলামে কিবলা বলতে কি বুঝায়:

    কিবলা মুসলমানের পবিত্র স্থান। কিবলা হচ্ছে যে দিকে মুখ করে সালাত বা নামাজ আদায় করতে হয়। পৃথিবীর স্থান থেকে কেবলা সেদিকে সেদিকে মুখ করে মুসলমানদের নামাজ পড়তে হয়। কিবলা মসজিদুল হারামের মধ্যখানে অবস্থিত। যা সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত। হজ্জ পালনের সময় মুসলিমগনকে কাবা ঘরকে প্রদক্ষিণ করতে হয়।

    মুসলমানদের প্রথম কিবলা নাম কি?

    আল-কুদস বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেম এর পবিত্র স্থানে অবস্থিত মসজিদ। যা আল আকসা বা ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ নামে সকলের কাছে পরিচিত। নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) কর্তৃক কাবা ঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তার নাতি হযরত ইয়াকুব (আ) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদ স্থাপন করেন। 

    অতঃপর তার ছেলে হযরত ইউসুফ (আ)  এর বংশধর হযরত দাউদের (আ) সন্তান হযরত সুলাইমান (আ) তা সংস্কার করেন। প্রথম ‘কাবা’ থাকলেও মসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নির্মাণের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটাই মুসলিমদের প্রথম কেবলা।

    কিবলা পরিবর্তন হয় কত সালে?

    কেবলা পরিবর্তন মুহূর্তটি হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাস। মদীনা থেকে একটু দূরে হযরত মুহাম্মদ (সা) তার সাহাবীদের কে নিয়ে এক মসজিদে জোহরের সালাত আদায় করছিলেন। সেই সময় মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কিবলা।

    আরও পড়ুনঃ রমজানের পবিত্রতা নিয়ে উক্তি বা রোজা নিয়ে কিছু কথা

    আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত নাজিল করে কিবলা দিক পরিবর্তন করতে বলেন। দুই রাকাত সালাত আদায়ের পর এই আয়াত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নাযিল হয়। বাকি দুই রাকাত সালাত তিনি মক্কার কাবার দিকে ফিরিয়ে আদায় করেন।

    ইসলামে বায়তুল মুকাদ্দাস কি?

    বায়তুল মুকাদ্দাস প্রথম কিবলা। ফিলিস্তিনের জেরুজালেম পবিত্র শহর। পবিত্র শহরের ভিতরে পবিত্র স্থান বায়তুল মুকাদ্দাস। এই স্থানটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলমান। আব্দুল মুকাদ্দাস কোন একটি মসজিদ, সিনাগগ বা গির্জ নয়। 

    এটি অনেক কয়টি স্থাপনা মিলে গঠিত একটি বিশাল পবিত্র চত্বর। স্থানটিকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্ন নামে ডাকে। মুসলমানেরা বলে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বা ‘হারাম আল শরিফ’ বলে। ‘টেম্পল অফ মাউন্ট’ বলে ইহুদিরা।‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। এ কারণে এই জায়গার মর্যাদার সকল মুসলমান কাছে অনেক।

    কোন কোন মসজিদে নামাজ পড়লে কত সওয়াব?

    প্রতিটি মুসলমানের জন্য নামাজ আদায় করা ফরজ। তবে নামাজ পড়ার স্থানের উপর ভিত্তি করে এর সওয়াব কম বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু জায়গা রয়েছে সেই জায়গায় নামাজ পড়লে হাজার বছর নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই, কোন কোন মসজিদে নামাজ পড়লে কত সওয়াব?

    মসজিদে হারাম:

    মসজিদে হারাম কাবা গৃহসহ চারিদিকে পরিবেষ্টিত মসজিদকে। এই স্থানকে মসজিদে হারাম বলা হয়। এ ‘হারাম’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। মসজিদে হারামে এক রাকাত সালাত বা নামাজ আদায় করলে ১ লক্ষ নামাজের সমপরিমাণ পাওয়া যায়।

    মসজিদে আকসা:

    মসজিদে আকসার বিবরণ কুরআন মাজিদে একাধিকবার করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদে আকসা গমন করেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, মসজিদে আকসার এক রাকাত নামাজ ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান।

    মসজিদে নববী:

    মসজিদে নববী হলো ইসলামের সোনালী যুগের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র। এই মসজিদের এক রাকাত সালাত বা নামাজ আদায় করলে ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান। তবে অন্য একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, মসজিদে নববীতে এক রাকাত সালাত আদায় করলে এক হাজার রাকাতের সমান। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। - মেশকাত:৬৪০

    জামে মসজিদ;

    মসজিদে হারাম, মসজিদে নববীর ও মসজিদে আকসা ব্যতীত অন্য যেকোনো মসজিদের সমবেত হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার সালাত বা নামাজ আদায় করা হয় সেসব মসজিদ জামে মসজিদ বলা হয়। এই মসজিদে এক রাকাত সালাত আদায় করলে ৫০০ রাকাতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

    পাঞ্জেগানা মসজিদ:

    যে মসজিদে জুমার নামাজ ব্যতীত শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয় তাকে পাঞ্জেগানা মসজিদ বলে। এসব মসজিদে এক রাকাত সালাত আদায় করলে ২৫ রাকাতে সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।

    মসজিদ ব্যতীত যেকোন স্থানে:

    মসজিদ ব্যতীত যেকোন স্থানে সালাত আদায় করলে এক রাকাত সালাতের বিনিময় এক রাকাতের সওয়াব পাওয়া যাবে।

    মসজিদে আকসায় নামাজ পড়ার সওয়াব কত?

    মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস।এই মসজিদ সম্পর্কে কুরান মাজীদে উল্লেখ রয়েছে। এই কারণে এই মসজিদে নামাজ পড়লে আলাদা সওয়াব রয়েছে। মসজিদে আকসায় ১ রাকাত নামাজ পড়ার ৫০ হাজার নামাজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

    আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম / তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ

    এই স্থনে পথম কিবলা ছিল। এই কারণে এই স্থানের মর্যদা এতো। বতমান সময়ে এই মসজিদ নিয়ে আন্দোলন চলছে।

    আল আকসা মসজিদের গুরুত্ব:

    মুসলমানদের পথম কিবলা ছিলো আল আকসা মসজিদ। কাবার পরেই ইসলামের দ্বিতীয় ইবাদতের স্থান আল আকসা মসজিদ। মহানবী (সা.) এর সময় থেকেই এই মসজিদ অনেক গুরত্বপূর্ণ। কারণ মহানবি (সা.) এই দিকে কিবলা করে নামাজ আদায় করেছেন। এই কারণে প্রতিটি মুসলমানের কাছে এটা পবিত্র। 

    এই স্থান নিয়ে বতমান সময়ে অনেক মতোবিরোধ চলছে। কারণ, খ্রিষ্টান এরা দাবি করে েএটা তাদের পবিত্র স্থান। তারা আল আকসা দখল করবে। এই নিয়ে বহু যুগ থেকে আন্দোলোন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে মুসলমানেদের দখলেই আছে। এই কারণে আল আকসা মসজিদের গুরুত্ব এতো।

    মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসার দূরত্ব কতো?

    মসজিদে হারাম হচ্ছে মুসলমানের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটা সৌদি আরবে মক্কা নগরীতে অবস্থিত। এবং মসজিদে আকসা বা আলা আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনের ইজরাইল শহরে অবস্থিত। এই দুটি স্থান দুটি ভিন্ন দেশে অবস্থিত। 

    এই কারণে দুটি স্থানের দূরত্ব অনেক। সঠিক করে দুটি স্থানের দূরত্ব বলা সম্ভব না। তবে দুটি দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিন বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে ভিন্ন। বর্তমানে ফিলিস্তিন শাসন করে ইসরাইল বাহিনী।

    শেষ কথা: আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত

    আলা আকসা মসজিদ মুসলিম জাতির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এ মসজিদটি অবস্থিত ফিলিস্তিনে। মুসলিম জাতির কাছে তৃতীয় পবিত্র স্থান এটি। এ কারণে এই স্থানের গুরুত্ব এত বেশি। বর্তমানের এই স্থানকে খ্রীষ্টান ও ইহুদীরা তাদের পবিত্র স্থান বলে মনে করে। 

    এই কারণে নিয়ে অনেক যুগ থেকে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে স্থানটি মুসলিমদের দখলে। বিভিন্ন তথ্যমতে,  আল আকসা সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৯৫৭ সালে। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর পরেই মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ।

    আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

    লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। আপনারা চাইলে আমাদের এই পোস্ট গুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ