আপনারা যদি আশে পাশের চিত্র একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখেন যে বর্তমানে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে পরিবারে কোনো ডায়াবেটিস রোগী নেই। আর তাই এটি নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই যেমন এই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় আছে কি? ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় কি কি?
আর তাই আমাদের ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো জানার আগে প্রথমেই জেনে নেওয়ার দরকার যে ডায়াবেটিস কি? কেন হয় এবং ডায়াবেটিস এর সাধারণ লক্ষণ কি কি?
ডায়াবেটিস কি? (What is diabetes?)
ডায়বেটিস হওয়ায় আপনার শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারে না। স্ট্রোক, হার্ট ডিসিজ, কিডনি ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্য এই ডায়াবেটিস মেলিটাস দায়ী।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সার এর লক্ষণ এবং ক্যান্সার কেন হয়?
ডায়াবেটিস কেন হয় ?
আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা মুলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। আর এই শর্করাই হচ্ছে গ্লুকোজ এর উৎস। রক্তে গ্লুকোজ প্রবশের পরেই শুরু হয় ইনসুলিনের কাজ
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোতে পৌঁছে দেয়। সেই গ্লুকোজ থেকেই শক্তি উৎপাদন হয়। এখন যদি কোনও কারণে স্বাভাবিক কর্মদক্ষতা হারিয়ে ফেলে তাহলে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ (diabetes symptoms)
- ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- বার বার প্রসাবে যাওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হওয়া
- বমি বমি ভাব ও মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা করা
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
ডায়াবেটিস এর প্রকারভেদ
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
- টাইপ 1 ডায়াবেটিসঃ আমাদের শরীরে যখন কোন ইনসুলিন তৈরি হয় না বা করতে পারে না তখন তাঁকে টাইপ 1 ডায়াবেটিস বলে।
- টাইপ 2 ডায়াবেটিসঃ অপরদিকে আমাদের শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হয় না বা হলেও তা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না তখন তাঁকে টাইপ 2 ডায়াবেটিস।
- প্রি ডায়াবেটিসঃ আমাদের শরীরে যখন সুগার লেভেল স্বাভাবিক লেভেল থেকে একটু বেশি থাকে, সেটাই প্রি ডায়াবেটিস।
কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না? এবং ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
আপনাদের ভেতরে যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকে তাহলে ভাল কোন ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে গিয়ে রক্তের সুগার লেভেল টেস্ট করাতে পারেন। সুগার লেভেল এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেশি হলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে।
ডায়াবেটিস মাত্রা (diabetes range)তে সুগার লেভেল কত হলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস?
আপনাদের কারো শরীরে যদি সাধারণত রেন্ডম ব্লাড সুগারে ১১ মি.মো./লি. এর বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার শরীরে ডায়াবেটিস আছে। ফাস্টিং ব্লাড সুগারে ৭ এর মি.মো./লি. এর বেশি হলে ধরে নিতে পারেন আপনার শরীরে ডায়াবেটিস আছে।
এছাড়াও আপনি যদি একুরেট ফলাফল পেতে চান তাহলে সকালে খালি পেটে মাপলে যদি ৫.৬ মি.মো./লি. এর কম হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ডায়াবেটিস নেই। আর যদি ৫.৬ থেকে ৬.৯ মি.মো./লি. এর মধ্যে হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার প্রিডায়বিটিস।
আরও পড়ুনঃ এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আমাদের শরীরে যদি ডায়াবেটিস একবার হয়ে যায় তাহলে সেটাকে পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ রুপে ভাল করা যাবে কিনা তাঁর কোন গ্যারান্টি নেই। তবে আপনি চাইলে ডায়াবেটিস কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, প্রতিদিনের রুটিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে। নিচে কিছু সহজ পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় দেওয়া হলঃ
১) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় । নিয়মিত ব্যায়াম করুন
দ্রুত হাঁটাচলা,ওজন উত্তোলন, দৌড়ানো, নাচ, হাইকিং, বাইক চালানো, এবং সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। সেরা ব্যায়ামগুলোর মধ্যে একটি সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটাহাঁটি করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটবেন। এটি ইনসুলিন মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
২) ডায়াবেটিস কমানোর উপায় । খাদ্য তালিকা থেকে চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিন
প্রি -ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে বিভিন্ন গবেষণার দেখা গিয়েছে যে, দ্রুততম সর্বোচ্চ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৪০% বেশি। তাই ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমাতে আপনাকে অবশ্যই চিনিযুক্ত বা শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।
৩) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় । নিয়মিত পানি পান করুন
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের পাশাপাশি, এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি বের করিয়ে আপনার কিডনিকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
৪) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় । ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া বাড়ান
ফাইবারযুক্ত খাবার আমাদের দেহের রক্তে সুগার সুনিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা এবং হার্টের রােগাশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে। তাই আমাদের নিয়ম তান্ত্রিকভাবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা খুবই দরকার।
দুই ধরণের ফাইবার রয়েছে:
- অদ্রবণীয়ঃ বাদাম, টমেটো, গাজর ইত্যাদি
- দ্রবণীয়ঃ ওটস, বার্লি, আপেল, ডাল ইত্যাদি
আপনাদের সুবিদ্ধার্থে বলে রাখছি যে দ্রবণীয় ফাইবার স্পষ্টভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশি ভূমিকা পালন করে। যেসব খাবারে ফাইবার বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে যেমনঃ মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা,ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর ,ফল ইত্যাদি।
দৈনিক মহিলাদের প্রায় ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের প্রায় ৩৮ গ্রাম ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। প্রতি ১০০০ ক্যালরির জন্য এটি প্রায় ১৪ গ্রাম। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তাই এখান থেকে আমরা বুঝতেই পারছি যে ফাইবার যুক্ত খাবার সমূহের গুরুত্ব আমাদের জন্য কতোটা জরুরি।
৫) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় । কম গ্লাইসেমিক খাবার গ্রহণ করুন
এই পর্যায়ে গ্লাইসেমিক নিয়ে আমরা আলোচনা করবো এবং গ্লাইসেমিক কিভাবে কাজ করে সেটি আপনাদের বলে দিবো এখানে। গ্লাইসেমিক সূচক আমরা কীভাবে খাবার শোষণ করি বা হজম করি তা পরিমাপ করে।
এই গ্লাইসেমিক রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির হারকে প্রভাবিত করে । কম গ্লাইসেমিক খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। যদিও খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক গুরুত্বপূর্ণ, তবে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্ন থেকে মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবারের তালিকা দেয়া হলঃ
- বার্লি
- ইয়োগার্ট
- ওটস
- মটরশুটি
- মসুর ডাল
- গমের পাস্তা ইত্যাদি
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বাছাই করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
৬) স্ট্রেস লেভেল ম্যানেজ করে । ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আপনি চাইলে কিন্তু মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রন করে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন অনেকটাই। কেননা আমরা জানি যে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ রক্তে সুগার লেভেলকে প্রভাবিত করে বলে জানি। গ্লুকাগন এবং কর্টিসলের মতো এক ধরনের হরমোন স্ট্রেসের সময় নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি রক্তে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়।
তবে আমরা চাইলে যেটা করতে পারি যে ব্যায়াম এবং মেডিটেশন এর মাধ্যমে এই স্ট্রেসকে হ্রাস করে এবং রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে আনতে পারি। ব্যায়াম বা রিলাক্সেশন মানসিক চাপ কমায়। ফলে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৭) পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
৮) আপেল সিডার ভিনেগার বা ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
৯) দারুচিনি ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আপনি ১ কাপ গরম পানিতে ১/২ থেকে ১ চা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে প্রতিদিন পান করতে পারেন। আপনি চা, মসৃণ এবং মিষ্টান্নগুলিতে দারচিনি মিশিয়েও খেতে পারেন।
১০) মেথি ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
মেথি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। কারণ ফাইবার যুক্ত থাকায় এটি রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার লেভেলকে কার্যকরভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
ডায়াবেটিস কমানোর জন্য ২ চা চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এ ছাড়া গরম বা ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথেও মেথি বীজের গুঁড়ো খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
১১) পরিমিত ওজন বজায় রাখুন
একটি পরিমিত ওজন বজায় রাখা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এমনকি শরীরের ওজন ৭% কমলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫৮% পর্যন্ত কমতে পারে। এটি একটি সাধারণ ডায়াবেটিস ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে বলে মনে হয়।
অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ায়। আপনি যদি নিজের ওজনকে কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। দেহের ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখার মধ্য দিয়ে ডায়াবেটিস সহ আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
১২) ডায়েটে কম কার্বোহাইড্রেট খাবার রাখুন
আপনি যদি ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকেন তাহলে ডায়েটে খুব কম কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনাকে ডায়াবেটিস এড়াতে সাহায্য করতে পারে। ফলে ধারাবাহিকভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে এবং অন্যান্য ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আপনি যদি শর্করা জাতীয় খাওয়া কমিয়ে দেন, তাহলে খওয়ার পর আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বাড়বে না। অতএব, আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে আপনার কম ইনসুলিনের প্রয়োজন হবে। এতে করে ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারবেন।
১৩) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় অ্যালোভেরা
আমরা সকলেই জানি যে অ্যালোভেরা একটি খুবই উপকারি উদ্ভিদ আমাদের জন্য। অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন এবং আরও একটি শক্তিশালী উপাদান যার নাম ফাইটোস্ট্যারলস। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলস টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী।
১৪) ডায়াবেটিস কমানোর উপায়। নিয়মিত সুগার লেভেল পরীক্ষা করুণ
নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের লেভেল পরিমাপ এবং পর্যবেক্ষণ করুণ। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত সুগার লেভেল পর্যবেক্ষণ ,খাবার বা ওষুধের অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এটি নির্দিষ্ট খাবার আপনার শরীরে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা জানতেও সহায়তা করবে।
১৫) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় । ধূমপান বর্জন করা
ধূমপান হৃদরোগ, এমফিসেমা এবং ফুসফুস, স্তন, এবং ক্যান্সার সহ অনেক গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। গবেষণার দেখা গেছে, গড় ধূমপায়ীদের মধ্যে ৪৪% এবং যারা প্রতিদিন ২০ টিরও বেশি সিগারেট খায় তাদের মধ্যে ৬১% ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ভারী ধূমপায়ীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেশি। সময়ের সাথে এই ঝুঁকি কমতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ
১৬) ভিটামিন ডি লেভেল ঠিক রাখা
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের রক্তে ভিটামিন ডিয়ের মাত্রা কম তাদের চেয়ে যাদের রক্তে ভিটামিন ডিয়ের মাত্রা বেশি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৪৩% কম। সূর্যের আলো, সামদ্রিক মাছ যেমনঃ টুনা, সার্ডিন, ডিমের কুসুম, মাশরুম ইত্যাদি ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস।
১৭) ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান
আমাদের সকলকে প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমনঃ ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি) গুলো থেকে নিজেদেরকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। কেননা এই সমস্ত খাবার গুলো খাওয়ার ফলে উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা এবং হৃদরোগের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। এই সব খাবার দেহের ইনসুলিনের মাত্রাকে ভারসাম্যহীন করে ফেলে। যা থেকে ডায়াবেটিস রোগও দেখা দিতে পারে।
১৮) চা বা কফি পান ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আমরা অনেকেই জানিনা যে কফি বা চা ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করেও কিন্তু আমরা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে যে , টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিদিন কফি পানে ৮–৫৪% কমে যেতে পারে।
কফি এবং চাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা পলিফেনল নামে পরিচিত এবং যা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারে। কফি বা চা রক্তের শর্করার লেভেল কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
১৯) প্রাকৃতিক ঔষধ ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- বারবেরিন
বারবেরিন বিভিন্ন ঔষধিতে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও, টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বারবেরিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে, ১৪ টি গবেষণার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, বারবারিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য মেটফর্মিনের মতোই কার্যকর, যা প্রাচীনতম এবং বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ওষুধ ।
যেহেতু বারবেরিন ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে এবং শর্করার মাত্রা কমাতে কাজ করে। সেহেতু এটি প্রি -ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নবজাতক শিশুর যত্ন এবং শিশুর জন্মের পরে ভারনিক্স কি কি কাজ করে?
২০) ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
এই পর্যায়ে আমরা জেনে নিবো কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো দ্বারা আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। নিচে কয়েকটি আলোচনা করা হলঃ
অ্যালোভেরা এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আমরা সকলেই জানি অ্যালোভেরায় ভেষজ গুন রয়েছে। এই উপাদানটি স্কিন এবং স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটির স্বাদ একটু তেতো হলেও এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে উপকার করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
দারুচিনি এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
দারুচিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনসুলিন কার্যকলাপের সূচনা করে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে যা টাইপ -২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণ গরম জলে আধ চা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে নিন এবং প্রতিদিন একবার সেবন করুন।
করলা এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
করলা ইনসুলিন-পলিপেপটাইড-পি সমৃদ্ধ যা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন এবং মমর্ডিসিন নামক দুটি উপাদান করলাতে থাকে যা রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সহায়তা করে।
সপ্তাহে একবার ডায়াবেটিস কমাতে করলা তরকারি খান। এ ছাড়া আপনি করলার টুকরোগুলি কেটে রস তৈরি করুণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই রস পান করুন। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
নিম এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
নিম বিটা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে এবং হাইপোগ্লাইকাইমিক ড্রাগের উপর নির্ভরতা কমায়। নিম ডায়াবেটিস নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে।
আমের পাতা এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আমের পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসার জন্য কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। আমের পাতা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে ভিটামিন সি, এ এবং ট্যানিন থাকে ।
আমের পাতাগুলি ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে এই গুঁড়ো পানি পান করুন। কিছু তাজা আমের পাতা সিদ্ধ করে এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ঠান্ডা করে রাখার জন্য রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে খালি পেটে তা পান করুণ। এছাড়াও আমলকি, তুলসি পাতা, সজনে পাতা ইত্যাদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
মেথি এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রাকৃতিক উপায়ে কমানোর উপায়
মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে কারণ এতে ফাইবার বেশি থাকে। মেথি খেলে হজম শক্তি হ্রাস হয়, যাতে রক্তে সুগার সঠিকভাবে শুষে যায়। এটি টাইপ -১ এবং টাইপ -২ ডায়াবেটিস উভয়ই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
ডায়াবেটিস হ্রাস করার ঘরোয়া উপায় হিসাবে ২ চা চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি বীজ দিয়ে সেই পানি পান করুন। এ ছাড়া প্রতিদিন মেথি বীজের গুঁড়া গরম বা ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথে খান।
আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
ডায়াবেটিস গাছ গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
‘গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স’ নামের এ ওষধি গাছ ডায়াবেটিস সারাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। চীনে এন্টি ভাইরাস হিসেবেও এটির ব্যবহার আছে। ‘গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স’ গাছটির বোটানিক্যাল নাম হলেও ইংরেজিতে একে ‘সাবুঙ্গা’ এবং চীনে এটিকে ‘জিয়ান ফেঙ উইই’ বলা হয়।
যাদের ডায়াবেটিস, প্রেশার এবং কোলেস্টেরল আছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি পাতা সেবন করলে এসব রোগ থেকে বাঁচা যাবে। তবে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন এবং গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত তাদেরকে সকালে খালি পেটে ২টি পাতা ও রাতে শোবার আগে ২টি পাতা সেবন করতে হবে।
চর্বিযুক্ত মাছ এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
চর্বিযুক্ত মাছের তালিকায় রয়েছে স্যালমন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি মাছ। যে সব মাছ ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পূর্ণ, যে সব মাছ ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর বড় উৎস সে সব মাছই পারে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এছাড়াও নিয়মিত এই সব মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কিন্তু কমে যায় অনেকটাই। এছাড়াও এই সব খাবারে থাকে ওমেগা-৩ব ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরের জন্য কিন্তু খুবই ভাল।
শাকসবজি এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
নিয়মকরে প্রতিদিন সবজি খাবেন। প্রয়োজনে মাছ-মংসের পরিবর্তে সম পরিমাণ সবজি খান। এতেও কিন্তু শরীর থাকবে সুস্থ আর ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভিটামিন সি এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
শাক-সবজি খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে ভিটামিন সি আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এতে হার্ট, চোখ সবই কিন্তু ভাল থাকবে।
ডিম এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
শরীরে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু ভূমিকা রয়েছে ডিমেরও। আর তাই প্রতিদিন একটা করে ডিম খাবেন। এক্ষেত্রে সিম সিদ্ধ খাওয়াই কিন্তু সবথেকে ভাল। হার্টের রোগীরাও নির্ভয়ে খেতে পারেন ডিম।
ডুমুর এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
পুষ্টিবিদের মতে, ডায়াবেটিসের রোগীদের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে ডুমুর। ডুমুরের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অনুযায়ী, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
মটরশুঁটি এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
মটরশুঁটির গ্লাইসেমির ইনডেক্স খুবই কম। সেই সঙ্গে পুষ্টিতে ভরপুর। যে কারণে ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য কিন্তু খুব ভাল মটরশুঁটি। এছাড়াও খেতে পারেন ব্রকোলি। এতে কার্বোহাইড্রেট একেবারেই নেই, বরং পুষ্টি আছে অনেক বেশি পরিমাণে। যা বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করে।
টকদই এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ওজন কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে জুড়ি মেলা ভার টকদইয়ের। নিয়মিত ভাবে খেতে পারলে অনেক রকম উপকার পাবে।
চিয়া সিডস এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
চিয়া সিডসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী চিয়া সিডস। নিয়মিত খেতে পারলে অনেক রকম উপকার পাবনে।
ফ্ল্যাক্সসিডস এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ফ্ল্যাক্সসিডস বা তিসিবীজও কিন্তু শরীরের জন্য বেশ ভাল। নিয়মিত খেতে পারলে সুগার, প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোলেস্টেরলের সমস্যাতেও কিন্তু তা বেশ ভাল কাজ করে। ইনসুলিনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণেও কিন্তু ভূমিকা রয়েছে এই ফ্ল্যাক্সসিডের।
নিয়মিত হাঁটুন এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় আলোচনা করতে গেলে আমরা হাঁটার কথা এড়িয়ে চলতে পারি না। নিয়মিত ২৫-৩০ মিনিট হাঁটলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন হ্রাস করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা
0 মন্তব্যসমূহ